চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার নিবন্ধিত চিকিৎসক না হয়েও আশ্রমে আশ্রয় নেওয়াদের চিকিৎসা দিতেন। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে কেউ যদি মারা যেতেন তাহলে নিজেই ডাক্তার সেজে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করতেন মিল্টন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা করেন ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিমের এসআই কামাল পাশা। মামলার এজাহারে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
এজাহারে তিনি অভিযোগ করে বলেন, চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এসব সংবাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের একটি দল বুধবার সন্ধ্যায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমে যায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর সময় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নন এবং তার প্রতিষ্ঠানেও নিবন্ধিত কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নিজে ডাক্তার সেজে সেখানে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দিতেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, অভিযানকালে আশ্রমে বিভিন্ন কাগজপত্রসহ ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এছাড়া সেখানে দুটি স্ট্যাম্প সিল পাওয়া যায়। যার মধ্যে একটিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল এমডি মুহিদ খান ও অন্যটিতে বাংলায় লেখা মিল্টন সমাদ্দার। ডেথ সার্টিফিকেটগুলোতে নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর করতেন মিল্টন সমাদ্দার। ভুয়া ডাক্তারের স্বাক্ষর ও সিল এবং নিজে ডাক্তার সেজে স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের কাছে মৃত্যুসনদ প্রদান করতেন মিল্টন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, মিল্টন দীর্ঘদিন ধরে মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে কখনো কখনো তাদের চিকিৎসার নামে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মিল্টন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের চিকিৎসা না দিয়ে খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে তাদের মৃত্যু ঘটিয়েছেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহিন ব্যক্তি, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের নামে সঠিক দায়িত্ব পালন না করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া মৃতদের সঠিক তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য মিল্টনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ডিবি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তিনি। এ ৫০ জনের মৃত্যুর সঠিক কারণ ও জাল সনদ তৈরির পেছনে মিল্টনের অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কি না তা জানতে চাইবে ডিবি।