ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাতাসে আগুনের হলকা

চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যু/সাত দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ, গাউন পরা লাগবে না আইনজীবীদের

আজকের প্রত্রিকাগুলো

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর: সমকাল: চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যু/সাত দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ, গাউন পরা লাগবে না আইনজীবীদের ঘাম মুছতে মুছতে রিকশাচালক মহিব উল্যাহর লাল গামছাখানা জবজবে! অন্যদিন সকাল-সন্ধ্যা রিকশা চালালেও গতকাল শনিবার বেলা ১১টা বাজতেই হাঁপিয়ে গেছেন তিনি। ক্লান্ত দেহ আর চলছে না। দুপুর না গড়াতেই অবসন্ন শরীরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের গ্যারেজে মহিব উল্যাহ জমা দিয়ে দিলেন রিকশা। গ্যারেজ থেকে বেরিয়েই বলছিলেন, ‘মনে হচ্ছে, সূর্য মাথার ওপর নেমে এসেছে। রিকশার প্যাডেল আর মারতে পারছি না। তাপে যেন শরীর পুড়ছে। এ রকম হলে জীবন বাঁচবে না।’ প্রখর তাপপ্রবাহ আর গরমে ঘরে-বাইরে মানুষ এমনই হাঁসফাঁস করছে। জনজীবন এক রকম বিপর্যস্ত। দুই জেলায় চলছে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ; সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়িয়েছে যশোর, পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত তাপে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের ছুটি শেষে রোববার খোলার কথা থাকলেও এখন তা খুলবে ২৮ এপ্রিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাসও। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের কালো গাউন পরার আবশ্যকতা শিথিল করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার কারণে জরুরি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। হাসপাতালে হিট স্ট্রোকের রোগীও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। গতকাল ঢাকার রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। শপিংমল, কাঁচাবাজার, ফুটপাতে বেচাবিক্রি নেই; অনেক দোকানপাটও ছিল বন্ধ। যাদের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা, তাদের ঘর থেকে না বেরিয়ে উপায় নেই। জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। বনিক বার্তা: রিজার্ভের চেয়েও আলোচনার বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে রফতানির অপ্রত্যাবাসিত অর্থ গত দুই দশকের বেশি সময় (২০০১-০২ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত) অধিকাংশ অর্থবছরেই আর্থিক হিসাবের (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে বড় অংকের ঘাটতি, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আরো স্ফীত হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত রফতানির বড় অংকের অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার কারণেই ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি বাড়ছে, যা প্রকারান্তরে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকেও বাড়িয়ে তুলছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আসন্ন রিভিউ মিশন চলাকালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ছাপিয়ে আলোচনার মূল ইস্যু হয়ে উঠতে পারে রফতানিতে বড় অংকের অপ্রত্যাবাসিত অর্থ। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে একটি রিভিউ মিশন ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে ৮ মে পর্যন্ত। মিশনটি ঋণ কর্মসূচির আওতায় থাকা বিভিন্ন মানদণ্ড, লক্ষ্যমাত্রা ও মাপকাঠি পূরণের পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এ মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় করবে আইএমএফ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ে নিট রিজার্ভ ছাড়া আইএমএফের বাকি সব শর্তই পূরণ হয়েছে। গত ডিসেম্বর ও মার্চে পরপর দুই প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-মার্চ) শেষে সংস্থাটির সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়নি। এ ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে কখনই আইএমএফের লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় অনুমোদনের পর আইএমএফের এক প্রতিবেদনে দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বহিঃপ্রবাহ হয়েছে, যা জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরগুলোয় গড়ে জিডিপির আড়াই শতাংশের মতো বাংলাদেশে ঢুকতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মূলধন বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আলোচ্য অর্থবছরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে রফতানির মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রফতানি আয় বেড়েছে সামান্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানির ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় দেশে আসেনি, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। দেশের লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি বাড়ার পেছনে নিট আন্তঃপ্রবাহ বিশেষ করে আর্থিক হিসাবের অন্তর্ভুক্ত ট্রেড ক্রেডিট পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিট ট্রেড ক্রেডিট প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিওপিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাস শেষে এ ঘাটতি ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এ বিষয়টিকেই এখন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে রেকর্ড ঘাটতির প্রধানতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ট্রেড ক্রেডিটের উদ্বৃত্ত ছিল দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। প্রসঙ্গত, একটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা বাড়া বা কমার বিষয়টি পরিমাপ করা হয় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। এ হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশের রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বাড়ে। প্রথম আলো: ভয়ংকর হয়ে উঠছে এপ্রিল ঘর থেকে বের হলেই যেন মরুভূমির লু হাওয়া। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে আর্দ্রতা জ্বালা ধরাচ্ছে শরীরে। দরদর করে ঝরছে ঘাম। এই সময়ে মাঝেমধ্যে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি আনে; কিন্তু এবার তা-ও নেই। গত দুই বছরের মতো এবারও এপ্রিল মাস যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। একসময় রাজশাহী বিভাগ ও খুলনা বিভাগের একাংশে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম পড়ত। আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে গরমের কষ্ট ছিল বেশি। গত ১০ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বইছে। আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও ভোগান্তি তৈরি করছে এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে বয়ে যাওয়া অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, যা ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ নামে পরিচিত। এ ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাণঘাতী দুর্যোগে রূপ নিতে শুরু করেছে। ভয়ংকর হয়ে উঠছে এপ্রিল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশ করা ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহের একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনুযায়ী, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকছে। প্রথম পৃষ্ঠার পর এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। গড়ে সারা দেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। তীব্র দাবদাহে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে তো বটেই, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে সারা দেশে থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর অতি উষ্ণ ও আর্দ্রতার বিপদ থাকতে পারে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। ফলে এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যায়, এই গরমের মধ্যে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে শুধু তাপমাত্রার তীব্রতা দিয়ে মানুষের কষ্ট ও বিপদ বোঝা যাবে না। কোথাও তাপপ্রবাহ অর্থাৎ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে না গেলেও বিপজ্জনক আবহাওয়া তৈরি হতে পারে। কোথাও যদি তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৪০ শতাংশের বেশি হয় এবং বাতাসের প্রবাহ কম থাকে, তাহলে সেখানে অতি উষ্ণতার বিপদ তৈরি হতে পারে। এপ্রিল মাসজুড়ে বাংলাদেশে এই অতি উষ্ণতার বিপদই তৈরি হচ্ছে। অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ বলেন, এই বিপদকে আমলে নিয়ে অন্য আট-দশটা দুর্যোগের মতোই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। নাগরিকদের এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য জনপরিসরে খাওয়ার পানি, বৃক্ষ ও অন্যান্য অবকাঠামো দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এপ্রিল যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ৬০ বছরে এপ্রিলের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসে। এবার বৃষ্টি ও বাতাস নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। আর গতকাল দেশের অন্তত ১২টি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এপ্রিল মাসে আর্দ্রতা বা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ; কিন্তু এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে তা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে ছিল। গতকাল ঢাকার বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। আর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০–এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নয়াদিগন্ত: বাতাসে আগুনের হলকা বাতাসে যেন আগুনের হলকা, অসহনীয় তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। সর্বত্র খাঁখাঁ রোদ্দুর, আকাশে সামান্য মেঘ থাকলেও তা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বর্তমানে চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। খাবারের চেয়ে পানির চাহিদা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। গরমে গায়ের চামড়ায় ফোস্কা পড়ার অবস্থা। মুখে বাতাসের ঝাপটা লাগলেই মনে হয় কেউ যেন আগুন ঢেলে দিয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পেট ভরে পানি পান করেও তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। গরম এত বেশি যে খাবারের চেয়ে পানি পান করতেই বেশি ভালো লাগছে। প্রচণ্ড গরমে বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে এ মৌসুমে কমে যেতে পারে আমের ফলন। মাটির নিচে পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিমাণ কমে যাওয়ায় পানিতে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে, ফলে অল্প দূষিত পানি পান করলেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বয়স্করাও আসছেন হাসপাতালে। এই তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকরা যথেষ্ট পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ঘরের বাইরে বের হলেই অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি নিয়ে বের হতে বলছেন তারা। পেটে যথেষ্ট পানি থাকলে গরমের আধিক্য থাকলেও হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাইরে বেরোলে সম্ভব হলে মুখে ঠাণ্ডা পানি ছিটাতে হবে, তা হলে মুখে ফোস্কা পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না। মানুষ তো বটেই অন্য প্রাণীরাও পিপাসায় কাতরাচ্ছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো দিনের বেশির ভাগ সময় পানিতে কাটিয়ে দিচ্ছে, পানি থেকে উঠতেই চাইছে না। গবাদিপশুগুলো সারাক্ষণই হাঁপাচ্ছে পানির জন্য, এমনকি গাছে গাছে উড়ে বেড়ানো পাখিগুলো ঠোঁট বড় বড় করে পানির সন্ধান করছে। খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে। সিলেট বিভাগ ছাড়া উল্লিখিত চার বিভাগে কোনো বৃষ্টি না হলেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। অন্য দিকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) বিরাজ করছে খুলনা বিভাগের কিছু অংশে বিশেষ করে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘ দিন থেকেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ঢাকা বিভাগের অর্ধেকেরও বেশি অংশে অর্থাৎ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে বিরাজ করছে তীব্র তাপ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) প্রবাহ। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র চলছে মৃদু থেকে মাঝারি (৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে) ধরনের তাপপ্রবাহ। দীর্ঘ দিন পর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জানিয়েছেন, আগামী ২৫ এপ্রিলের আগে দেশে বিরাজমান চলতি তাপদাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ২৫ এপ্রিল থেকে তাপদাহ কিছুটা কমে আসতে পারে তবে কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশব্যাপী ভারী বর্ষণ না হলে চলতি গরম কমবে না। চুয়াডাঙ্গায় এ মাসের শুরু থেকেই বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪০.৮ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৮ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৯ এপ্রিল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেকর্ড করা হয়। সর্বশেষ গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।   বাংলাদেশ প্রতিদিন: তীব্র গরমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে আজ রবিবার খোলার কথা ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঈদের পর বেসরকারি ধারায় পরিচালিত বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্লাস চালু করেছিল। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই ছুটি আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তীব্র তাপদাহের কারণে পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে ক্লাস বন্ধ থাকবে। সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে বরং আরও ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন অভিভাবকরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা এলো। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান তাপপ্রবাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অফিসের পরামর্শে মাউশির অধীন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ২৮ এপ্রিল স্কুল-কলেজ খুলবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানানো হয়। একইসঙ্গে তীব্র তাপদাহের প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কালের কন্ঠ: মাঠ ছাড়ছেন না মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়রা প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) কিংবা মন্ত্রীদের প্রভাব থাকে। প্রশাসনেও তাঁরা সেই প্রভাব বিস্তার করেন। আর সেই সুযোগে অনেক এমপি-মন্ত্রী তাঁদের আত্মীয়-স্বজনকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। সেই তালিকায় সন্তান, আপন ভাই, চাচাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, চাচা, শ্যালকসহ নানা ধরনের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী না হতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মানছেন না অনেকে। এবার তাঁরা স্বজনদের দিয়ে উপজেলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। চার ধাপে এবার নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টি উপজেলায় ভোট হবে। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলার ভোট সামনে রেখে প্রায় দুই হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গত বুধবার এসব মনোনয়নপত্রের বাছাই পর্ব শেষ হয়েছে।   যুগান্তর: ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন আমানতকারীরা দুর্বলের সঙ্গে সবল এবং বেসরকারির সঙ্গে সরকারি ব্যাংক একীভ‚তকরণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ব্যাংক খাতে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকে টাকা রাখা-না-রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছেন বেশির ভাগ আমানতকারী। এজন্য ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ তালিকায় কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীও রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক একটি বেসরকারি ব্যাংকে কয়েকদিনে আমানত ফেরতের ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটিই বড় অঙ্কের এফডিআর। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত হারিয়েছে। বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। একীভূতের তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকের পরিস্থিতিও প্রায় একই। তারা আমানত হারানোর আশঙ্কায়। জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মো. মোফাজ্জাল যুগান্তরকে বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে সোনালী, জনতার মতো বেসিকও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বেসিক ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হওয়ার খবরে তারা টাকা তুলে নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কারণ তাদের ধারণা, বেসিক ব্যাংক বেসরকারি হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, এ কারণে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত করার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমানত ধরে রাখা এখন কঠিন হচ্ছে। মাত্র কিছু দিন আগে পুরোনো পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। নতুন পর্ষদকে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া উচিত। এখনই একীভূত করার সিদ্ধান্ত ব্যাংকটির জন্য ভালো হবে না। একই কথা বলছে ইউসিবিও। ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইউসিবিতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, টাকা ফেরত চাইছেন আমানতকারীরা। এদিকে বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চায় না। তারা কোনো সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চায়। এ কথা জানিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বলেছিলেন, তারা বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চান না। বেসিক ব্যাংক শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত করার সিদ্ধান্তে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন বেসিক ব্যাংকের আমানতকারীরা। তাদের কেউ কেউ বেসিক ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আমানত বেশি সরিয়ে নিচ্ছে। প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিভাগীয় প্রধান (হিসাব ও অর্থ) স. ম. আব্দুল বারিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এফডিআর সুদ-আসলসহ ১০ কোটি টাকা নগদায়নের জন্য আবেদন দিয়েছেন। ১৫ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপককে ওই আবেদনপত্র দেওয়া হয়। পত্রে বেসিক ব্যাংকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্তকে এফডিআর নগদায়নের কারণ বলে উলে­খ করা হয়। শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পর্ষদ সভায় বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআর না রাখার সিদ্ধান্তের আলোকে নগদায়ন করা হচ্ছে বলে চিঠিতে উলে­খ করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বেসিক ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ কার্যদিবসে ব্যাংকটি থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে। আমানত তুলে নিতে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছে। এতে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। এর ফলে বেসিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখতে পারছে না। বেসিক ব্যাংক সূত্র আরও জানিয়েছে, ব্যাংকটিতে আমানত স্থিতি ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা কমে এখন ১২ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সরকারের কাছে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেয় বুধবার। এরপরই চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বেসিক ব্যাংক সরকারি ব্যাংক নয়। তবে উলে­খ করা যেতে পারে, বেসিক ব্যাংক শতভাগ সরকারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এমন বক্তব্য উত্থাপন করার পর জনমনে একধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ব্যাংক বিবেচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটিতে টাকা রেখেছিল। ব্যাংকটির আমানতের বড় অংশ এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে। কিন্তু যখন বলা হলো এটি সরকারি ব্যাংক নয় এবং বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা সরিয়ে নিতে শুরু করে। মানবজমিন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের’ বিরুদ্ধে মামলায় যাচ্ছে মন্ত্রণালয় মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন। ছলচাতুরী। এনআইডি সংশোধন। বাবা-মায়ের নাম পরিবর্তন। বয়স ও যুদ্ধক্ষেত্রে সাক্ষীতে কারসাজি। স্থানীয় এমপিদের সুপারিশ। এমন নানা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠিয়েছিলেন ৮ হাজারের বেশি। খসড়া যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়ে অনেক অসঙ্গতি। নড়েচড়ে বসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রায় ৫ বছর যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা থেকে ভুয়াদের বাদ দিতে জামুকায় লিখিত প্রতিবেদন পাঠায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড। জামুকা সেই তালিকা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠালে মন্ত্রণালয় তাদের বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। বাতিল করা হয় সকল সুযোগ-সুবিধা। ভাতা সুবিধাও কেড়ে নেয়া হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় ৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করলেও প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে যারা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে সেই টাকাও ফেরত আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা দেয়নি। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন সেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব মানবজমিনকে বলেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুতই জেলা-উপজেলায় এ তালিকা পাঠানো হবে। তারা যে ভাতা ভোগ করেছেন তা ফেরত আনা হবে। কেউ মারা গেলে তাদের পরিবারের সুবিধাভোগী সদস্যদের এই টাকা ফেরত দিতে হবে। আবার কেউ যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ব্যবহার করে যেকোনো সরকারি সুবিধা বা ছেলেমেয়ের চাকরি নিয়ে থাকেন তাও বাতিল করা হবে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ফিরে পেতে মামলা করেছেন। এটা আমাদের কাজে একটু বাধা সৃষ্টি করবে। অনেকে উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে এসেছেন। আমরাও আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবো। মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সম্প্রতি ৮ হাজারের মতো গেজেট বাতিল করা হয়।   দেশ রুপান্তর: এত দুধ ডিম মাংস যায় কোথায় খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। কোরবানির সময় গবাদিপশুর জোগান দিতে হতো আমদানি করে। নানা অনিশ্চয়তা, অরাজকতা ছিল সে সময়। প্রায় এক যুগের ব্যবধানে গবাদিপশুর আমদানিনির্ভরতা তো কমছেই; বরং উল্টো চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি! কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, উৎপাদন তত বাড়ছে। একই সঙ্গে মাথায় হাত উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়েরই। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের হিসাবে উপচে পড়া এত উৎপাদন যায় কোথায়, উৎপাদন বেশি থাকলে সংকট হয় কেন? অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাব, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে। কিন্তু প্রাণিসম্পদের যে সরকারি হিসাব তা অর্থনীতির চিরায়ত সূত্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীর উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। কিন্তু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার প্রতি বছর যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সে হারে বাড়ছে না প্রাণিসম্পদের উৎপাদন; বরং জিডিপিতে প্রতি বছরই এর অংশগ্রহণ কমছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তো বটেই; বরং বিশ্লেষকরাও একবাক্যে বলছেন, উৎপাদনের কমতি নেই, সমস্যা বেধেছে উৎপাদন খরচে। দেশের বেশিরভাগ পশু ও পোলট্রি খাদ্য আমদানিনির্ভর। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয় সমস্যাটা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই জানে। দেশের সিন্ডিকেটের খপ্পর। এক মাংস ব্যবসায়ী খলিল তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েই দিলেন ৫০০ টাকায় গরুর মাংস কেনা সম্ভব! কিন্তু বাদ সাধলেন ‘স্বনামধন্য’ সিন্ডিকেটরাই! শেষতক ইস্তফা দিলেন খলিল। বাজারে বিজয়ী সিন্ডিকেটই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যাক। অধিদপ্তরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাবে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় পশু উৎপাদন (গরু, ছাগল, ভেড়া) বেড়েছে ৪ লাখ ৯ হাজারের বেশি। মুরগি উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ লাখ ৮৯ হাজার, হাঁস উৎপাদন বেড়েছে ২১ লাখ ৭১ হাজার। এবার চাহিদা ও জোগানে নজর দেওয়া যাক। একই দপ্তরের হিসাবে বলা হচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুধের চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন; অর্থাৎ দুধের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় জোগান কম হয়েছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। দেশের প্রতিটি মানুষের দিনে দুধের চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলি লিটার, সেখানে গত অর্থবছরে জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে ২২১ দশমিক ৮৯ মিলি লিটার। কালবেলা: ধরাছোঁয়ার বাইরে মিথ্যা মামলার কারিগররা দুই সৎভাইয়ের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন ময়মনসিংহের ভালুকার বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মূলত সৎভাইদের ফাঁসাতেই মামলা করেছিলেন কামাল। পারিবারিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো বিরোধ কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে এভাবেই হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়েই মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অনেক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে পুলিশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলা আদালতেও মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। গত বছর আগস্টে আইন কমিশনের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আদালতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। এজন্য অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি বিনা কারণে কারাভোগ, অহেতুক হয়রানি ও নানা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ফৌজদারি মামলায়।’ পুলিশের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে দেশে কী পরিমাণ মিথ্যা মামলা দায়ের হয়, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আইনজ্ঞরা বলছেন, মিথ্যা মামলা দায়ের করলে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। মিথ্যা অভিযোগকারী কিংবা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, ওই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে হবে। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের যদি মনে হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ, বিরক্তিকর বা হয়রানিমূলক এবং আসামির প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে মামলাটি করা হয়েছে, তাহলে এ ধরনের মামলা মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে। মামলা মিথ্যা বা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মামলা দায়েরকারীকে দণ্ড দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। আমলযোগ্য নয়—এমন মামলায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিতভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাদী হয়ে পৃথক মামলা দায়ের করতে পারেন। পুলিশ রেগুলেশন্স বেঙ্গল, ১৯৪৩-এর ২৭৯ ধারা অনুসারে তদন্তকালে কোনো মামলা বিদ্বেষপ্রসূতভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হলে, তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের কাছে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮২ বা ২১১ ধারা অনুসারে প্রসেস ইস্যুর জন্য আবেদন করবেন বলে বিধান রয়েছে।
জনপ্রিয় সংবাদ

ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিব: মির্জা ফখরুল

বাতাসে আগুনের হলকা

চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যু/সাত দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ, গাউন পরা লাগবে না আইনজীবীদের

আপডেট সময় ০৮:৩৩:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর: সমকাল: চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যু/সাত দিন বন্ধ স্কুল-কলেজ, গাউন পরা লাগবে না আইনজীবীদের ঘাম মুছতে মুছতে রিকশাচালক মহিব উল্যাহর লাল গামছাখানা জবজবে! অন্যদিন সকাল-সন্ধ্যা রিকশা চালালেও গতকাল শনিবার বেলা ১১টা বাজতেই হাঁপিয়ে গেছেন তিনি। ক্লান্ত দেহ আর চলছে না। দুপুর না গড়াতেই অবসন্ন শরীরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের গ্যারেজে মহিব উল্যাহ জমা দিয়ে দিলেন রিকশা। গ্যারেজ থেকে বেরিয়েই বলছিলেন, ‘মনে হচ্ছে, সূর্য মাথার ওপর নেমে এসেছে। রিকশার প্যাডেল আর মারতে পারছি না। তাপে যেন শরীর পুড়ছে। এ রকম হলে জীবন বাঁচবে না।’ প্রখর তাপপ্রবাহ আর গরমে ঘরে-বাইরে মানুষ এমনই হাঁসফাঁস করছে। জনজীবন এক রকম বিপর্যস্ত। দুই জেলায় চলছে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ; সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় চুয়াডাঙ্গাকে ছাড়িয়েছে যশোর, পারদ উঠেছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত তাপে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের ছুটি শেষে রোববার খোলার কথা থাকলেও এখন তা খুলবে ২৮ এপ্রিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ক্লাসও। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের কালো গাউন পরার আবশ্যকতা শিথিল করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার কারণে জরুরি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। হাসপাতালে হিট স্ট্রোকের রোগীও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। গতকাল ঢাকার রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। শপিংমল, কাঁচাবাজার, ফুটপাতে বেচাবিক্রি নেই; অনেক দোকানপাটও ছিল বন্ধ। যাদের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা, তাদের ঘর থেকে না বেরিয়ে উপায় নেই। জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। বনিক বার্তা: রিজার্ভের চেয়েও আলোচনার বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে রফতানির অপ্রত্যাবাসিত অর্থ গত দুই দশকের বেশি সময় (২০০১-০২ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত) অধিকাংশ অর্থবছরেই আর্থিক হিসাবের (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) উদ্বৃত্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে বড় অংকের ঘাটতি, যা চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আরো স্ফীত হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত রফতানির বড় অংকের অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার কারণেই ট্রেড ক্রেডিটের ঘাটতি বাড়ছে, যা প্রকারান্তরে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকেও বাড়িয়ে তুলছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আসন্ন রিভিউ মিশন চলাকালে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ছাপিয়ে আলোচনার মূল ইস্যু হয়ে উঠতে পারে রফতানিতে বড় অংকের অপ্রত্যাবাসিত অর্থ। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে একটি রিভিউ মিশন ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে। চলবে ৮ মে পর্যন্ত। মিশনটি ঋণ কর্মসূচির আওতায় থাকা বিভিন্ন মানদণ্ড, লক্ষ্যমাত্রা ও মাপকাঠি পূরণের পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবে। এ মিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড় করবে আইএমএফ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ে নিট রিজার্ভ ছাড়া আইএমএফের বাকি সব শর্তই পূরণ হয়েছে। গত ডিসেম্বর ও মার্চে পরপর দুই প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-মার্চ) শেষে সংস্থাটির সংশোধিত লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়নি। এ ঋণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে কখনই আইএমএফের লক্ষ্য অনুযায়ী রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় অনুমোদনের পর আইএমএফের এক প্রতিবেদনে দেশের আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বহিঃপ্রবাহ হয়েছে, যা জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে আগের অর্থবছরগুলোয় গড়ে জিডিপির আড়াই শতাংশের মতো বাংলাদেশে ঢুকতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে মূলধন বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আলোচ্য অর্থবছরে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে রফতানির মূল্য বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রফতানি আয় বেড়েছে সামান্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানির ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় দেশে আসেনি, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। দেশের লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) ঘাটতি বাড়ার পেছনে নিট আন্তঃপ্রবাহ বিশেষ করে আর্থিক হিসাবের অন্তর্ভুক্ত ট্রেড ক্রেডিট পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিট ট্রেড ক্রেডিট প্রবাহ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিওপিতে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাস শেষে এ ঘাটতি ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এ বিষয়টিকেই এখন ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টে রেকর্ড ঘাটতির প্রধানতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি ছিল ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ট্রেড ক্রেডিটের উদ্বৃত্ত ছিল দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। প্রসঙ্গত, একটি দেশের আন্তর্জাতিক সম্পদের মালিকানা বাড়া বা কমার বিষয়টি পরিমাপ করা হয় ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক হিসাবের মাধ্যমে। এ হিসাবে ঘাটতি তৈরি হলে দেশের রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ওপর চাপ বাড়ে। প্রথম আলো: ভয়ংকর হয়ে উঠছে এপ্রিল ঘর থেকে বের হলেই যেন মরুভূমির লু হাওয়া। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে আর্দ্রতা জ্বালা ধরাচ্ছে শরীরে। দরদর করে ঝরছে ঘাম। এই সময়ে মাঝেমধ্যে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি আনে; কিন্তু এবার তা-ও নেই। গত দুই বছরের মতো এবারও এপ্রিল মাস যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। একসময় রাজশাহী বিভাগ ও খুলনা বিভাগের একাংশে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম পড়ত। আর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে গরমের কষ্ট ছিল বেশি। গত ১০ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বইছে। আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও ভোগান্তি তৈরি করছে এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে বয়ে যাওয়া অতি উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, যা ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ নামে পরিচিত। এ ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাণঘাতী দুর্যোগে রূপ নিতে শুরু করেছে। ভয়ংকর হয়ে উঠছে এপ্রিল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশ করা ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এপ্রিল মাসে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহের একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে অনুযায়ী, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকছে। প্রথম পৃষ্ঠার পর এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে তা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। গড়ে সারা দেশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। তীব্র দাবদাহে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসের বাকি সময়জুড়ে তো বটেই, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ ধরে সারা দেশে থেমে থেমে তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আর অতি উষ্ণ ও আর্দ্রতার বিপদ থাকতে পারে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত। ফলে এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে চলা যায়, এই গরমের মধ্যে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে শুধু তাপমাত্রার তীব্রতা দিয়ে মানুষের কষ্ট ও বিপদ বোঝা যাবে না। কোথাও তাপপ্রবাহ অর্থাৎ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে না গেলেও বিপজ্জনক আবহাওয়া তৈরি হতে পারে। কোথাও যদি তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে এবং আর্দ্রতা ৪০ শতাংশের বেশি হয় এবং বাতাসের প্রবাহ কম থাকে, তাহলে সেখানে অতি উষ্ণতার বিপদ তৈরি হতে পারে। এপ্রিল মাসজুড়ে বাংলাদেশে এই অতি উষ্ণতার বিপদই তৈরি হচ্ছে। অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ বলেন, এই বিপদকে আমলে নিয়ে অন্য আট-দশটা দুর্যোগের মতোই গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। নাগরিকদের এ ধরনের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য জনপরিসরে খাওয়ার পানি, বৃক্ষ ও অন্যান্য অবকাঠামো দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এপ্রিল যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ৬০ বছরে এপ্রিলের উষ্ণতা দ্রুত বেড়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকায় তাপপ্রবাহ বইছে। অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে কয়েক দিন পরপর একাধিক কালবৈশাখী, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসে। এবার বৃষ্টি ও বাতাস নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে দেশের ৭০ শতাংশ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে। আর গতকাল দেশের অন্তত ১২টি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এপ্রিল মাসে আর্দ্রতা বা বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ; কিন্তু এ মাসের বেশির ভাগ সময়জুড়ে তা ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে ছিল। গতকাল ঢাকার বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ঘোষণা করা হয়। আর তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৩০–এর ওপরে গেলে একে বিপজ্জনক আবহাওয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নয়াদিগন্ত: বাতাসে আগুনের হলকা বাতাসে যেন আগুনের হলকা, অসহনীয় তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। সর্বত্র খাঁখাঁ রোদ্দুর, আকাশে সামান্য মেঘ থাকলেও তা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে না। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বর্তমানে চলছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। খাবারের চেয়ে পানির চাহিদা বাড়ছে মানুষের মধ্যে। গরমে গায়ের চামড়ায় ফোস্কা পড়ার অবস্থা। মুখে বাতাসের ঝাপটা লাগলেই মনে হয় কেউ যেন আগুন ঢেলে দিয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পেট ভরে পানি পান করেও তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। গরম এত বেশি যে খাবারের চেয়ে পানি পান করতেই বেশি ভালো লাগছে। প্রচণ্ড গরমে বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। আমের মুকুল ঝরে যাচ্ছে। শিগগিরই বৃষ্টি না হলে এ মৌসুমে কমে যেতে পারে আমের ফলন। মাটির নিচে পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিমাণ কমে যাওয়ায় পানিতে জীবাণুর ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে, ফলে অল্প দূষিত পানি পান করলেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বয়স্করাও আসছেন হাসপাতালে। এই তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসকরা যথেষ্ট পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন। ঘরের বাইরে বের হলেই অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি নিয়ে বের হতে বলছেন তারা। পেটে যথেষ্ট পানি থাকলে গরমের আধিক্য থাকলেও হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কম। বাইরে বেরোলে সম্ভব হলে মুখে ঠাণ্ডা পানি ছিটাতে হবে, তা হলে মুখে ফোস্কা পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না। মানুষ তো বটেই অন্য প্রাণীরাও পিপাসায় কাতরাচ্ছে। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো দিনের বেশির ভাগ সময় পানিতে কাটিয়ে দিচ্ছে, পানি থেকে উঠতেই চাইছে না। গবাদিপশুগুলো সারাক্ষণই হাঁপাচ্ছে পানির জন্য, এমনকি গাছে গাছে উড়ে বেড়ানো পাখিগুলো ঠোঁট বড় বড় করে পানির সন্ধান করছে। খুলনা, ঢাকা, রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা। অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে। সিলেট বিভাগ ছাড়া উল্লিখিত চার বিভাগে কোনো বৃষ্টি না হলেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। অন্য দিকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) বিরাজ করছে খুলনা বিভাগের কিছু অংশে বিশেষ করে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দীর্ঘ দিন থেকেই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ঢাকা বিভাগের অর্ধেকেরও বেশি অংশে অর্থাৎ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে বিরাজ করছে তীব্র তাপ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) প্রবাহ। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র চলছে মৃদু থেকে মাঝারি (৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে) ধরনের তাপপ্রবাহ। দীর্ঘ দিন পর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জানিয়েছেন, আগামী ২৫ এপ্রিলের আগে দেশে বিরাজমান চলতি তাপদাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ২৫ এপ্রিল থেকে তাপদাহ কিছুটা কমে আসতে পারে তবে কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। দেশব্যাপী ভারী বর্ষণ না হলে চলতি গরম কমবে না। চুয়াডাঙ্গায় এ মাসের শুরু থেকেই বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছিল। ১৬ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪০.৮ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৮ এপ্রিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলিসয়াস, ১৯ এপ্রিল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেকর্ড করা হয়। সর্বশেষ গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।   বাংলাদেশ প্রতিদিন: তীব্র গরমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে আজ রবিবার খোলার কথা ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঈদের পর বেসরকারি ধারায় পরিচালিত বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ক্লাস চালু করেছিল। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই ছুটি আগামী ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তীব্র তাপদাহের কারণে পরবর্তী তারিখ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে ক্লাস বন্ধ থাকবে। সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে বরং আরও ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন অভিভাবকরা। সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা এলো। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান তাপপ্রবাহে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অফিসের পরামর্শে মাউশির অধীন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ২৮ এপ্রিল স্কুল-কলেজ খুলবে। আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানানো হয়। একইসঙ্গে তীব্র তাপদাহের প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। কালের কন্ঠ: মাঠ ছাড়ছেন না মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয়রা প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) কিংবা মন্ত্রীদের প্রভাব থাকে। প্রশাসনেও তাঁরা সেই প্রভাব বিস্তার করেন। আর সেই সুযোগে অনেক এমপি-মন্ত্রী তাঁদের আত্মীয়-স্বজনকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। সেই তালিকায় সন্তান, আপন ভাই, চাচাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, চাচা, শ্যালকসহ নানা ধরনের আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনকে প্রার্থী না হতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মানছেন না অনেকে। এবার তাঁরা স্বজনদের দিয়ে উপজেলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। সূত্র মতে, দেশে বর্তমানে ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। চার ধাপে এবার নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টি উপজেলায় ভোট হবে। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলার ভোট সামনে রেখে প্রায় দুই হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গত বুধবার এসব মনোনয়নপত্রের বাছাই পর্ব শেষ হয়েছে।   যুগান্তর: ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন আমানতকারীরা দুর্বলের সঙ্গে সবল এবং বেসরকারির সঙ্গে সরকারি ব্যাংক একীভ‚তকরণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে পুরো ব্যাংক খাতে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্যাংকে টাকা রাখা-না-রাখা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছেন বেশির ভাগ আমানতকারী। এজন্য ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ তালিকায় কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীও রয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক একটি বেসরকারি ব্যাংকে কয়েকদিনে আমানত ফেরতের ১২টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটিই বড় অঙ্কের এফডিআর। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত হারিয়েছে। বিডিবিএল থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। একীভূতের তালিকায় থাকা অন্যান্য ব্যাংকের পরিস্থিতিও প্রায় একই। তারা আমানত হারানোর আশঙ্কায়। জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মো. মোফাজ্জাল যুগান্তরকে বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে সোনালী, জনতার মতো বেসিকও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক। এ কারণে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা বেসিক ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছে। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হওয়ার খবরে তারা টাকা তুলে নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কারণ তাদের ধারণা, বেসিক ব্যাংক বেসরকারি হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, এ কারণে সরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত করার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিচালনা পর্ষদ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আমানত ধরে রাখা এখন কঠিন হচ্ছে। মাত্র কিছু দিন আগে পুরোনো পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। নতুন পর্ষদকে অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দেওয়া উচিত। এখনই একীভূত করার সিদ্ধান্ত ব্যাংকটির জন্য ভালো হবে না। একই কথা বলছে ইউসিবিও। ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, অন্যান্য ব্যাংকের মতো ইউসিবিতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। কারণ, টাকা ফেরত চাইছেন আমানতকারীরা। এদিকে বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চায় না। তারা কোনো সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চায়। এ কথা জানিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বলেছিলেন, তারা বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত হতে চান না। বেসিক ব্যাংক শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভ‚ত করার সিদ্ধান্তে আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছেন বেসিক ব্যাংকের আমানতকারীরা। তাদের কেউ কেউ বেসিক ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিতে শুরু করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই আমানত বেশি সরিয়ে নিচ্ছে। প্রাপ্ত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে বিভাগীয় প্রধান (হিসাব ও অর্থ) স. ম. আব্দুল বারিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এফডিআর সুদ-আসলসহ ১০ কোটি টাকা নগদায়নের জন্য আবেদন দিয়েছেন। ১৫ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপককে ওই আবেদনপত্র দেওয়া হয়। পত্রে বেসিক ব্যাংকে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্তকে এফডিআর নগদায়নের কারণ বলে উলে­খ করা হয়। শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের পর্ষদ সভায় বেসরকারি ব্যাংকে এফডিআর না রাখার সিদ্ধান্তের আলোকে নগদায়ন করা হচ্ছে বলে চিঠিতে উলে­খ করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বেসিক ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ কার্যদিবসে ব্যাংকটি থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে। আমানত তুলে নিতে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছে। এতে তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকটি। এর ফলে বেসিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) রাখতে পারছে না। বেসিক ব্যাংক সূত্র আরও জানিয়েছে, ব্যাংকটিতে আমানত স্থিতি ছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা কমে এখন ১২ হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ ছিল ১২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশ। বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সরকারের কাছে চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেয় বুধবার। এরপরই চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, বেসিক ব্যাংক সরকারি ব্যাংক নয়। তবে উলে­খ করা যেতে পারে, বেসিক ব্যাংক শতভাগ সরকারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এমন বক্তব্য উত্থাপন করার পর জনমনে একধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি ব্যাংক বিবেচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটিতে টাকা রেখেছিল। ব্যাংকটির আমানতের বড় অংশ এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে। কিন্তু যখন বলা হলো এটি সরকারি ব্যাংক নয় এবং বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা সরিয়ে নিতে শুরু করে। মানবজমিন: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের’ বিরুদ্ধে মামলায় যাচ্ছে মন্ত্রণালয় মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন। ছলচাতুরী। এনআইডি সংশোধন। বাবা-মায়ের নাম পরিবর্তন। বয়স ও যুদ্ধক্ষেত্রে সাক্ষীতে কারসাজি। স্থানীয় এমপিদের সুপারিশ। এমন নানা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠিয়েছিলেন ৮ হাজারের বেশি। খসড়া যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়ে অনেক অসঙ্গতি। নড়েচড়ে বসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রায় ৫ বছর যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা থেকে ভুয়াদের বাদ দিতে জামুকায় লিখিত প্রতিবেদন পাঠায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড। জামুকা সেই তালিকা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠালে মন্ত্রণালয় তাদের বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। বাতিল করা হয় সকল সুযোগ-সুবিধা। ভাতা সুবিধাও কেড়ে নেয়া হয়। তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রায় ৮ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করলেও প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে সনদ নেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি তাদের মধ্যে যারা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে সেই টাকাও ফেরত আনার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা দেয়নি। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন সেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব মানবজমিনকে বলেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুতই জেলা-উপজেলায় এ তালিকা পাঠানো হবে। তারা যে ভাতা ভোগ করেছেন তা ফেরত আনা হবে। কেউ মারা গেলে তাদের পরিবারের সুবিধাভোগী সদস্যদের এই টাকা ফেরত দিতে হবে। আবার কেউ যদি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ব্যবহার করে যেকোনো সরকারি সুবিধা বা ছেলেমেয়ের চাকরি নিয়ে থাকেন তাও বাতিল করা হবে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দ্রুতই তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ফিরে পেতে মামলা করেছেন। এটা আমাদের কাজে একটু বাধা সৃষ্টি করবে। অনেকে উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে এসেছেন। আমরাও আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করবো। মন্ত্রণালয়ের গেজেট শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সম্প্রতি ৮ হাজারের মতো গেজেট বাতিল করা হয়।   দেশ রুপান্তর: এত দুধ ডিম মাংস যায় কোথায় খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। কোরবানির সময় গবাদিপশুর জোগান দিতে হতো আমদানি করে। নানা অনিশ্চয়তা, অরাজকতা ছিল সে সময়। প্রায় এক যুগের ব্যবধানে গবাদিপশুর আমদানিনির্ভরতা তো কমছেই; বরং উল্টো চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি! কিন্তু সময় যত যাচ্ছে, উৎপাদন তত বাড়ছে। একই সঙ্গে মাথায় হাত উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয়েরই। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের হিসাবে উপচে পড়া এত উৎপাদন যায় কোথায়, উৎপাদন বেশি থাকলে সংকট হয় কেন? অর্থনীতির স্বাভাবিক হিসাব, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলে দাম কমে। কিন্তু প্রাণিসম্পদের যে সরকারি হিসাব তা অর্থনীতির চিরায়ত সূত্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীর উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। কিন্তু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার প্রতি বছর যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সে হারে বাড়ছে না প্রাণিসম্পদের উৎপাদন; বরং জিডিপিতে প্রতি বছরই এর অংশগ্রহণ কমছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তো বটেই; বরং বিশ্লেষকরাও একবাক্যে বলছেন, উৎপাদনের কমতি নেই, সমস্যা বেধেছে উৎপাদন খরচে। দেশের বেশিরভাগ পশু ও পোলট্রি খাদ্য আমদানিনির্ভর। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বেড়েছে। দ্বিতীয় সমস্যাটা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই জানে। দেশের সিন্ডিকেটের খপ্পর। এক মাংস ব্যবসায়ী খলিল তো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েই দিলেন ৫০০ টাকায় গরুর মাংস কেনা সম্ভব! কিন্তু বাদ সাধলেন ‘স্বনামধন্য’ সিন্ডিকেটরাই! শেষতক ইস্তফা দিলেন খলিল। বাজারে বিজয়ী সিন্ডিকেটই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব ঘেঁটে দেখা যাক। অধিদপ্তরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাবে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় পশু উৎপাদন (গরু, ছাগল, ভেড়া) বেড়েছে ৪ লাখ ৯ হাজারের বেশি। মুরগি উৎপাদন বেড়েছে ৭৮ লাখ ৮৯ হাজার, হাঁস উৎপাদন বেড়েছে ২১ লাখ ৭১ হাজার। এবার চাহিদা ও জোগানে নজর দেওয়া যাক। একই দপ্তরের হিসাবে বলা হচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুধের চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন; অর্থাৎ দুধের ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় জোগান কম হয়েছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন। দেশের প্রতিটি মানুষের দিনে দুধের চাহিদা রয়েছে ২৫০ মিলি লিটার, সেখানে গত অর্থবছরে জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে ২২১ দশমিক ৮৯ মিলি লিটার। কালবেলা: ধরাছোঁয়ার বাইরে মিথ্যা মামলার কারিগররা দুই সৎভাইয়ের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন ময়মনসিংহের ভালুকার বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মূলত সৎভাইদের ফাঁসাতেই মামলা করেছিলেন কামাল। পারিবারিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো বিরোধ কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে এভাবেই হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। তদন্ত পর্যায়েই মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অনেক মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে পুলিশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলা আদালতেও মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। গত বছর আগস্টে আইন কমিশনের দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আদালতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। এজন্য অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি বিনা কারণে কারাভোগ, অহেতুক হয়রানি ও নানা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ফৌজদারি মামলায়।’ পুলিশের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে দেশে কী পরিমাণ মিথ্যা মামলা দায়ের হয়, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। আইনজ্ঞরা বলছেন, মিথ্যা মামলা দায়ের করলে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। মিথ্যা অভিযোগকারী কিংবা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো, ওই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে হবে। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের যদি মনে হয়, আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন, তুচ্ছ, বিরক্তিকর বা হয়রানিমূলক এবং আসামির প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে মামলাটি করা হয়েছে, তাহলে এ ধরনের মামলা মিথ্যা হিসেবে গণ্য হবে। মামলা মিথ্যা বা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মামলা দায়েরকারীকে দণ্ড দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। আমলযোগ্য নয়—এমন মামলায় কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মিথ্যা প্রতিবেদন দিলে তার বিরুদ্ধেও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বপ্রণোদিতভাবে ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন। এ ছাড়া সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাদী হয়ে পৃথক মামলা দায়ের করতে পারেন। পুলিশ রেগুলেশন্স বেঙ্গল, ১৯৪৩-এর ২৭৯ ধারা অনুসারে তদন্তকালে কোনো মামলা বিদ্বেষপ্রসূতভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হলে, তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের কাছে মামলার বাদীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮২ বা ২১১ ধারা অনুসারে প্রসেস ইস্যুর জন্য আবেদন করবেন বলে বিধান রয়েছে।