বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়েছে। এ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৬১টিতে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশের মধ্যে যেসব ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল তার কোনোটাই ভালো করছে না। সেসব ব্যাংকের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করা। পদ্মা ব্যাংকের মতো এগুলোকে নাম বদলে একীভূতের নামে ভালো করার চেষ্টা না করে লিকুইডেট (অবসায়ন করা) করে দেওয়াটাই ভালো ছিল।
শনিবার (৩০ মার্চ) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি অয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ’ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এত ব্যাংক দিলেন কেন? অনেক আগেই তুলে ধরে ছিলাম বলেছিলাম এত ব্যাংকের অনুমোদন দিলে মার্জারের (একীভূত) সিদ্ধান্তে যেতে হবে। দেরিতে হলেও মার্জার অ্যাকুইজেশনের সিদ্ধান্তটা ভালো। তবে মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংকলুটেরা বা দুর্নীতিবাজরা যাতে পার না পেয়ে যায় সে বিষয়ে খুবই নজর রাখতে হবে। এটা না হলে প্রলেপ (আবরণ) দিয়ে ব্যাংক খাতের চিকিৎসা করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে ভালো ব্যাংক যেন দুর্বলের প্রভাবে নড়বড়ে না হয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতকারী গ্রাহকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয় না। আবার ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের ঋণ ভাগাভাগি করতে থাকে। একটি অর্থনীতির জন্য এটা খুবই খারাপ। এ জন্যই ব্যাংকের আইনে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথায় যে আইন আছে সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।
ডলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলার রেটের অস্থিরতা চলছে কেন? কেন লাগাতার ডলার বিক্রি? রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। বাইরে দেখাবেন আমার টাকা খুব শক্তিশালী, এটা সবাই বোঝে। ওরা কি জানে না টাকার মূল্য উইক। আজ ভুলের কারণে ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়া লাগছে। সোয়াপ-টোয়াপ করে কী হবে, এসব তো সাময়িক।
তিনি বলেন, বর্তমানে যিনি রাজনীতি করেন তিনি ব্যবসা করেন। এমনকি মিডিয়া হাউজের মালিকও তিনি। অথচ জনগণের পক্ষে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন সবগুলো একসঙ্গে চালাবেন তখন মনের ভেতর একটা কিছু থাকবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।