ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা প্রকাশ রাজের জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালে বেঙ্গালুরুতে এ অভিনেতার জন্ম হয়। দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা থেকে বলিউড—গত তিন দশকে তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা।
১৯৯৪ সালে তামিল ‘ডুয়েট’ সিনেমার মাধ্যমে প্রকাশ রাজের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পদ্মশ্রীজয়ী এ অভিনেতার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে যেমন রয়েছে অসংখ্য সফলতার গল্প, তেমনি ব্যক্তিজীবনে প্রকাশের রয়েছে কিছু কষ্টের স্মৃতি।
পাঁচ বছর বয়সী পুত্রের মৃত্যু
১৯৯৪ সালে ললিতা কুমারীকে বিয়ে করেন প্রকাশ রাজ। তাঁদের বিয়ে সম্পর্কে অনলাইনে তেমন তথ্য না পাওয়া গেলেও জানা যায় পারিবারিক আয়োজনে ছোট পরিসরেই বিয়ে করেন তাঁরা। এ দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তিন সন্তান—দুই কন্যা মেঘনা, পূজা ও পুত্র সিধু। পাঁচজনের সুখের সংসারে সবকিছু তখন ভালোভাবেই চলছিল, তবে সবকিছু তছনছ করে দেয় একটি দুর্ঘটনা। ঘুড়ি ওড়ানোর একটি টেবিল থেকে পড়ে যায় প্রকাশ রাজের পাঁচ বছর বয়সী পুত্র সিধু। দুর্ঘটনার পর দুই মাসের লড়াই শেষে সিধুর মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুতে এ দম্পতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েন।
ইটাইমসকে দেওয়া পুরোনো এক সাক্ষাৎকারে সন্তানের মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছিলেন প্রকাশ রাজ।
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুঃখ কমেছে কি না। অভিনেতা তখন জানান, সিধু আর নেই এমন বেদনাদায়ক বাস্তবতার মুখোমুখি যেন না হতে হয়, তাই প্রয়াত সন্তানের সব ছবি বাড়ি থেকে সরিয়েছেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘আমি আমার মেয়েদের অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমার সিধুকে ভীষণ মিস করি, যদিও তার মৃত্যুর অনেক বছর পার হয়েছে। তবে এখনো আমি দিনটি ভুলতে পারি না। ওর বয়স তখন মাত্র পাঁচ, ঘুড়ি ওড়ানোর সময় এক ফুট উচ্চতার টেবিল থেকে মাটিতে পড়ে আমার ছেলেটা মারা গেল গেল। আমি তাকে কখনো ভুলতে পারব না। তবে এ স্মৃতি ভুলতে আমি সিধুর সব ছবি বাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়েছি।’
ললিতা কুমারীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ
সিধুর এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্ত্রীর সঙ্গে প্রকাশ রাজের দাম্পত্য কলহ শুরু হতে থাকে। অনেক চেষ্টার পরও তাঁরা নিজেদের মধ্যে শান্তি আনতে পারেননি। ২০০৯ সালে ইচ্ছের বিরুদ্ধে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন।
বিচ্ছেদ নিয়ে ইটাইমস থেকে প্রকাশ রাজের কাছে জানতে হয়, তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্তটি তিনি কীভাবে তাঁর দুই কন্যা মেঘনা এবং পূজাকে জানিয়েছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ রাজ বলেন, ‘আমি আমার মতো জীবনযাপন করি। সত্যিই আমি মিথ্যা বলতে পছন্দ করি না। তাই সে সময় আমার মেয়েদের নিয়ে বসি, ললিতাকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি আমি সেদিন তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম। যদিও তালাকের সিদ্ধান্তটি আমার একার ছিল, একবারের জন্যও লতা আমাকে ছেড়ে যেতে চায়নি।’
বিচ্ছেদের এক বছর পর ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট কোরিওগ্রাফার পনি ভার্মাকে বিয়ে করেন প্রকাশ। সিনেমার সেটেই আলাপ হয় দুজনের। আর সেখান থেকেই প্রেম। ২০১৫ সালে এ দম্পতির ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয়, পুত্রসন্তান বেদান্থ।
প্রকাশ রাজের দ্বিতীয় বিয়ের খবর তখন সবাইকে অবাক করে। ইটাইমসকে এ বিষয়ে প্রকাশ রাজ জানান, তাঁর দুই কন্যা মেঘনা ও পূজার সম্মতি নিয়েই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তাঁর কথায়, ‘বিয়ের আগে পনিকে আমার সাবেক স্ত্রী লতা (ললিতা) এবং আমার মেয়েদের সঙ্গে দেখা করিয়েছিলাম। আমার মেয়েরা তখন শুভকামনা জানায়। তারপর আমি লতার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। আমাদের বিবাহবিচ্ছেদের জিনিসটি তিনি জানার পর, প্রথমে হতবাক হলেও পরে আমাদের আশীর্বাদ করেন।’
প্রকাশের প্রথম পক্ষের দুই সন্তান মেঘনা ও পূজার সঙ্গেও দারুণ সম্পর্ক রয়েছে পনি ভার্মার। বাবার বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদেরও দেখা গেছে। পুরো পরিবারের সঙ্গে হাসি মুখে ক্যামেরায় পোজ দিতেও দেখা গেছে তাদের। এ ছাড়া প্রকাশের দ্বিতীয় পক্ষের পুত্র বেদান্থের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার মাধ্যমেই প্রকাশ রাজ জনপ্রিয়তা লাভ করেন। নন্দিত এই অভিনেতা ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন পাঁচবার। এ ছাড়া ৬টি নন্দী পুরস্কার, ৫টি ফিল্মফেয়ার, ৮টি তামিলনাডু স্টেট ফিল্ম পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।