বাঙ্গালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এ দেশে তার আগে, তার সময়ে এবং তার পরেও অনেকে রাজনীতি করলেও সবাইকে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। অনুচ্চ আকৃতির মানুষের এই দেশে তিনি কাঁধে, মাথায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, আক্ষরিক এবং গূঢ়—উভয় অর্থেই।
বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর এবং বাচন-ভঙ্গিতে ছিল সম্মোহনী ক্ষমতা। জনসভা কিংবা কর্মিসভায় দেওয়া বক্তব্যে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের পেছনে ছিল তার বিশ্বাস এবং প্রত্যয়। পুরো বাঙালি জাতির কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হতো তার বক্তৃতায়। ওই বক্তৃতার যে ভাষা, তা ছিল সহজ, অনাবিল এবং দেশীয়।
বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করতেন সাধারণ মানুষের ভাষায়। লোকজচিন্তা, প্রবাদ-প্রচলন, বাগধারা এবং গ্রামীণ কৌতুকের ব্যবহার করতেন। তার বক্তৃতায় কঠিন কোনো শব্দ কখনো শোনা যায়নি, তাত্ত্বিক কোনো বাতাবরণ তৈরির প্রয়াসও দেখা যায়নি। অথচ কত সহজভাবে কত বড় বড় তত্ত্বের তিনি নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে যেতেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্যারিশমাটিক নেতা। তার প্রবল ব্যক্তিত্ব, অসাধারণ বাগ্মিতা, অতুলনীয় কণ্ঠস্বর—এ সবই ছিল ওই ক্যারিশমার উপাদান। তিনি সংগ্রামের ডাক দিয়ে ঘরে বসে থাকতেন না। জীবনের ১৩টি বসন্ত তাকে জেলে কাটাতে হয়েছে।
বাঙালি জাতির ইতিহাসের নায়ক বঙ্গবন্ধু। এ ইতিহাসে তার স্থান চির অমলিন, অমোঘ। তিনিই ছিলেন বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের ঘটনার রূপকার, বাঙালির দুঃসময়ের কান্ডারি, ইতিহাসের মহানায়ক। ওই স্থানটি শুধু তারই জন্য তোলা। তাকে যতই ভুলে যাওয়ার, ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হোক; কিংবা তার জায়গায় বা তার ওপরে কাউকে বসিয়ে দেওয়ার কসরত করা হোক, তাতে লাভ কিছুই হবে না। কারণ তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, গৌরব আর অহংকারের প্রতীক।