ঢাকা ০১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমাদান : নিয়ামতের সম্ভার ও মুমিনের প্রস্তুতি | শেষ পর্ব

ঈমানদারদের রমাদান প্রস্তুতি
ঈমানদারদের রমাদান প্রস্তুতি একেবারেই আলাদা। তাদের তো স্লোগান হয়, “ও রমাদান! জন্মদি চলে এসো তুমি, আমাদের গুনাহগুলো তো বড় বেশি ভারী আর অন্তরগুলো তো বড়োই দুর্বল!” যেহেতু তারা জীবনকে আখিরাতের লেন্স দিয়ে দেখে, তাই তাদের প্রস্তুতি হয় উপরের লোকগুলো থেকে পুরো বিপরীত মেরুর। তাহলে কিভাবে তারা প্রস্তুতি নেয়?

আখিরাত পিয়াসী বান্দারা রমাদানের প্রস্তুতি নেয় পাঁচভাবে:

১. রমাদানের অনেক পূর্ব থেকে দুআ করা: তারা আল্লাহর কাছে আবেগময় দুআ করে যাতে করে আল্লাহ তাদেরকে আরো একটি রমাদানের সাক্ষী হিসেবে কবুল করে নেন। এমন একটি মাস যেটা অসম্ভব প্রয়োজনীয় সুযোগ আর মিস না করার মত অসংখ্য পুরস্কারে ভরপুর।

মু’আল্লা ইবনুল ফাদ্বল বলেন, “তারা রমাদানের ছয় মাস আগে থেকেই দুআ করতেন যাতে করে আল্লাহ তাদের রমাদানে পৌঁছে দেন, এই মাসের সাক্ষী বানান।”

ইয়াহইয়া ইবনু আবি কাসীর তার দুআয় আরো বলতেন, “ও আল্লাহ! আমাকে রমাদানের কাছে পৌঁছিয়ে দিন আর রমাদানকে আমার কাছে পৌঁছিয়ে দিন। আর আমার কাছ থেকে এটাকে কবুল করে গ্রহণ করে নিন।” (সাতাইফুল নাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৪৮)

২. তাকওয়া অর্জনের প্রস্ত্ততি: তারা আগে থেকেই নিখুঁত নিয়ত নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যায়। রমাদানের প্রতিটা দিনে তারা সতেজ হয়ে উঠে। এই উপলব্ধি তাদের থাকে যে নিয়তের নির্দিষ্ট ধাঁচের সঙ্গেই গুনাহর মাগফিরাত সরাসরি সম্পর্কিত থাকে। রামাদানে এমন তিনটা সুযোগ থাকে যার মাধ্যমে নিজের গুনাহর বোঝা সম্পূর্ণরূপে শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত আছে, যেটা তিনটা বর্ণনায় পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।

প্রথম সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রমাদানের পুরো মাসে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সিয়াম পালন করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)

দ্বিতীয় সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রমাদানের রাতে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস-ক্রম: ৩৭, মুসলিন, হাদিস: ৭৫৯)

তৃতীয় সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৫৯)

এই তিনটা সুযোগই নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত। এভাবেই এই ক্যাটাগরির লোকেরা আল্লাহকে আগ্রহভরে দেখিয়ে দেয় যে রমাদানকে পেয়ে তারা খুশি, দুঃখিত নয়। তারা সিয়াম পালন করেছে পুরস্কার পাবার তীব্র ইচ্ছায়, এজন্য না যে অন্যরা রাখছে, তাই তারাও রাখছে। এই নিয়তকে তারা প্রতিদিনই নবায়ন করে নেয়।

৩. মৌলিক ইবাদাতসমূহের সাথে সম্পর্ক বাড়ানো: আখিরাতপ্রেমী ঈমানদার বান্দারা রমাদানের প্রস্তুতিস্বরূপ রমাদান মাস আসার আগে থেকেই কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। একইসাথে রমাদানের আগেই তারা শুরু করে সাওম আর রাতের ইবাদত। আগেভাগে ওয়ার্ম আপ না করে কোন অ্যাথলেটই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় না, কোনো বক্সারও আগে থেকে ট্রেনিং এর প্রতি আন্তরিক না হয়ে বারো রাউন্ড দীর্ঘ লড়াইয়ে জেতার স্বপ্নও দেখতে পারে না। একইভাবে আখিরাত পিয়াসী মানুষগুলো রমাদানের জন্য ওয়ার্ম আপ সেরে নেয় আগেভাগেই যাতে করে তারা আসামাত্রই দৌড়তে পারে। আমাদের কেউ কেউ ধরে নেয়, রমাদান এলেই ঈমানের দশা রাতারাতি একবারে এক রাতের মধ্যেই পাল্টে যাবে।
এ যেন একটা বাটন, চাপলেই কাজ হয়ে যায়। অনেকেরই রমাদানের প্রথম কয়েকদিনে খুব উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে, কিন্তু এক সপ্তাহ বা তার পরেই দেখা যায় উদ্দীপনার জোয়ারে ভাটা পড়ে যায়। বেশিরভাগ সময়েই এটা হয় যথাযথ প্রস্তুতি না থাকার কারণে। এজন্যই ঈমানদাররা সময় থাকতেই প্রস্তুত হয়।

৪. গুন্নাহ ছেড়ে দেওয়ার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া: রমাদান আসার আগেই মুমিনরা তাদের এমন প্রত্যেকটি গুনাহর মূল্যায়ন করে ও সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয় যেগুলো নিয়ে তারা নিজেদের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে আছে। তারা সেসব গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে। এই সবকিছুই তারা রমাদান আসার আগেই সেরে নেয়। তারা সেইসব লোকদের মত আল্লাহর সাথে তামাশায় লিপ্ত হয় না যারা বলে রমাদান আসার আগে যত পারি গুনাহ করে নেওয়া যাক আর রমাদান এলে তখন না হয় সব ছেড়েছুড়ে ভালো হয়ে যাব। ঈমানদাররা রমাদানের আগে থেকেই গুনাহ ত্যাগ করতে শুরু করে দেয়। মুমিনরা এরকম করে এজন্যই যে তারা দেখে প্রতি বছরই অসংখ্য মুসলিম রমাদান পায় কিন্তু সেই সময় তারা না পারে খুব বেশি তিলাওয়াত করতে, না পারে অতিরিক্ত সালাত পড়তে, আর না পারে সময়ের বিরাট ব্যবহার করতে। কিছুই তারা ঠিকঠাক করতে পারে না। ঠিক এই বইয়ে বর্ণিত প্রথম রূপক গল্পের মত। ফলে রমাদান শেষ হয়ে গেলেও রমাদান তাদের উপর খুব কমই প্রভাব ফেলতে পারে। কোন জিনিসটি তাদের এভাবে পেছনে ফেলে রাখল? এটা হচ্ছে সেই গুনাহগুলো যা থেকে তারা রমাদানের আগেই বিরত হয়ে যায়নি। গুনাহ হচ্ছে সেই আঘাতের মত যা একটা মানুষের ইবাদাতের স্বাদ উপভোগের সক্ষমতাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর যেহেতু রমাদান ইবাদাতের মাস, তাই ঈমানদার মানুষজন এই মাসে আল্লাহর কাছে যাবার মিষ্টতা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবার আশঙ্কায় থাকেন সর্বদা।

উহাইব ইবনুল ওয়ারদকে জিজ্ঞেস করা হয়, “সবসময় গুনাহ করে এমন কেউ কি কখনো ইবাদাতের মিষ্টতা উপভোগ করতে পারে?” তিনি জবাব দিলেন, “না। এমনকি যে গুনাহর ইচ্ছা করে, সেও নয়।” (ফাতহুল বারী, ইবনু রজব, ১/৪৫)

যেভাবে অসুস্থ শরীর খাবারের মজা বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে, সেভাবেই অসুস্থ অন্তর গুনাহ করে ইবাদাতের স্বাদ উপভোগ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। একজন ব্যক্তি হারাম কোন জিনিসের প্রতি তার কামনা নিয়ে দৃষ্টিপাত করার সাথে সাথে তার কুরআন তিলাওয়াতের মজা, কুরআন তিলাওয়াতের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একইভাবে একজন মানুষ হারাম যোগাযোগ, হারাম নিঃশ্বাস, হারাম কথোপকথন, হারাম অর্থনৈতিক লেনদেন এবং এমন আরো অনেক হারামে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এগুলোর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তার সালাত, দা’ওয়াহ, দুআ এবং আরো অনেক ইবাদাতের প্রতিই ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এরকম একজন মানুষ হয়তো এটা ভেবে অবাক হতে পারে যে সে এতো এতো গুনাহ করছে অথচ তা উপর আল্লাহর শাস্তি আপতিত হচ্ছে না। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিচ্ছেন না। বাস্তবে সে যে সবদিক থেকেই নিকৃষ্ট শাস্তির মধ্যে রয়েছে, কিন্তু সে এটা দেখতে পারছে না, এটা সে বুঝে উঠতে পারে না। আল্লাহর কাছাকাছি হবার আর আখিরাতের জন্য কাজ করবার আনন্দকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এটা তার বুঝে আসে না। এটা কি শাস্তি হিসেবে কম কিছু?

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর থেকে দূরে যাওয়ার অনুভূতির চেয়ে কঠিন, নিকৃষ্ট কোন শাস্তি আর কিছুই হতে পারে না।” (আল ফাওয়াইদ, ইবনুল কায়্যিম, ৯৭)

এজন্যই আখিরাতের আশায় থাকা মানুষেরা এইসব বাধাবিপত্তি অর্থাৎ গুনাহ দূর করার মাধ্যমেই রমাদানের জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সেটা করে রমাদান আসার আগে আগেই।

৫. রমাদানের পরিকল্পনা গ্রহণ: রমাদানের জন্য প্রস্তুত হতে তারা একটা সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে। তারা এরকম টার্গেট রাখে না যে “আমি যতটুকু সম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করবো”; বরং তারা নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে, জানে ঠিক কতোটুকু তারা রমাদান থেকে প্রত্যাশা করে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা রমাদানের লক্ষ্য পূরণে বিফল হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করব ও সফলভাবে রমাদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করার পদ্ধতি আলোচনা করব।

সিয়ামের উপকারিতা

সিয়ামের শারীরিক অনেক উপকারিতা আছে । তারমধ্যে কয়কেটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. সিয়াম পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত Science for Fasting গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন,
The power and endurance of the body under fasting Conditions are remarkable; After a fast properly taken the body is literally boom afresh.
অর্থাৎ ‘রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য; সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
২. বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়।
৩. স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা: আব্রাহাম জে হেনরি রোজা সম্পর্কে বলেছেন, ‘রোজা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। কারণ রোজা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।’
৪. ডা: আইজাক জেনিংস বলেছেন, ‘যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে।
৫. ডাক্তার দেওয়ান এ কে এম আব্দুর রহিম বলেছেন, ‘মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয় রোজা পালনের কারণে।

সিয়ামের প্রতিদান সম্পর্কে হাদীসসমূহ

১. রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম বন্দার জন্য ঢালস্বরূপ।— অবশ্যই সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের থেকেও সুগন্ধি। সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যখন যে ইফতার করে এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারী: ১৯০৪)

২. হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত, এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। (সহিহ মুসলিম হাদিস: ১১৫১)
৩. হযরত সাহল বিন সা’দ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহ্বান করা হবে- সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়…? তাঁরা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল সিয়াম পালনকারী ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না। (সহিহ বুখারী: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)
৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোজা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাঁকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দুজনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ হাদিস : ৬৫৮৯)
৫. আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১০৩৯)
৬. কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ৮১১৫)
৭. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৩২৪)

সিয়ামের মতো এ অসাধারণ নিয়ামত যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে  তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্ঠারত থেকে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করাই মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য।

লেখক: মুবাইদুল ইসলাম
লেখক ও সম্পাদক

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হাসিনা টুপ করে পড়লেন কিনা দেখতে পদ্মা সেতুতে সারজিস

রমাদান : নিয়ামতের সম্ভার ও মুমিনের প্রস্তুতি | শেষ পর্ব

আপডেট সময় ০৪:৩৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ মার্চ ২০২৪

ঈমানদারদের রমাদান প্রস্তুতি
ঈমানদারদের রমাদান প্রস্তুতি একেবারেই আলাদা। তাদের তো স্লোগান হয়, “ও রমাদান! জন্মদি চলে এসো তুমি, আমাদের গুনাহগুলো তো বড় বেশি ভারী আর অন্তরগুলো তো বড়োই দুর্বল!” যেহেতু তারা জীবনকে আখিরাতের লেন্স দিয়ে দেখে, তাই তাদের প্রস্তুতি হয় উপরের লোকগুলো থেকে পুরো বিপরীত মেরুর। তাহলে কিভাবে তারা প্রস্তুতি নেয়?

আখিরাত পিয়াসী বান্দারা রমাদানের প্রস্তুতি নেয় পাঁচভাবে:

১. রমাদানের অনেক পূর্ব থেকে দুআ করা: তারা আল্লাহর কাছে আবেগময় দুআ করে যাতে করে আল্লাহ তাদেরকে আরো একটি রমাদানের সাক্ষী হিসেবে কবুল করে নেন। এমন একটি মাস যেটা অসম্ভব প্রয়োজনীয় সুযোগ আর মিস না করার মত অসংখ্য পুরস্কারে ভরপুর।

মু’আল্লা ইবনুল ফাদ্বল বলেন, “তারা রমাদানের ছয় মাস আগে থেকেই দুআ করতেন যাতে করে আল্লাহ তাদের রমাদানে পৌঁছে দেন, এই মাসের সাক্ষী বানান।”

ইয়াহইয়া ইবনু আবি কাসীর তার দুআয় আরো বলতেন, “ও আল্লাহ! আমাকে রমাদানের কাছে পৌঁছিয়ে দিন আর রমাদানকে আমার কাছে পৌঁছিয়ে দিন। আর আমার কাছ থেকে এটাকে কবুল করে গ্রহণ করে নিন।” (সাতাইফুল নাআরিফ, পৃষ্ঠা: ১৪৮)

২. তাকওয়া অর্জনের প্রস্ত্ততি: তারা আগে থেকেই নিখুঁত নিয়ত নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যায়। রমাদানের প্রতিটা দিনে তারা সতেজ হয়ে উঠে। এই উপলব্ধি তাদের থাকে যে নিয়তের নির্দিষ্ট ধাঁচের সঙ্গেই গুনাহর মাগফিরাত সরাসরি সম্পর্কিত থাকে। রামাদানে এমন তিনটা সুযোগ থাকে যার মাধ্যমে নিজের গুনাহর বোঝা সম্পূর্ণরূপে শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত আছে, যেটা তিনটা বর্ণনায় পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।

প্রথম সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রমাদানের পুরো মাসে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সিয়াম পালন করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)

দ্বিতীয় সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি রমাদানের রাতে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস-ক্রম: ৩৭, মুসলিন, হাদিস: ৭৫৯)

তৃতীয় সুযোগের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান নিয়ে ও পুরস্কারের আশায় সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৭; মুসলিম, হাদিস: ৭৫৯)

এই তিনটা সুযোগই নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত। এভাবেই এই ক্যাটাগরির লোকেরা আল্লাহকে আগ্রহভরে দেখিয়ে দেয় যে রমাদানকে পেয়ে তারা খুশি, দুঃখিত নয়। তারা সিয়াম পালন করেছে পুরস্কার পাবার তীব্র ইচ্ছায়, এজন্য না যে অন্যরা রাখছে, তাই তারাও রাখছে। এই নিয়তকে তারা প্রতিদিনই নবায়ন করে নেয়।

৩. মৌলিক ইবাদাতসমূহের সাথে সম্পর্ক বাড়ানো: আখিরাতপ্রেমী ঈমানদার বান্দারা রমাদানের প্রস্তুতিস্বরূপ রমাদান মাস আসার আগে থেকেই কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। একইসাথে রমাদানের আগেই তারা শুরু করে সাওম আর রাতের ইবাদত। আগেভাগে ওয়ার্ম আপ না করে কোন অ্যাথলেটই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় না, কোনো বক্সারও আগে থেকে ট্রেনিং এর প্রতি আন্তরিক না হয়ে বারো রাউন্ড দীর্ঘ লড়াইয়ে জেতার স্বপ্নও দেখতে পারে না। একইভাবে আখিরাত পিয়াসী মানুষগুলো রমাদানের জন্য ওয়ার্ম আপ সেরে নেয় আগেভাগেই যাতে করে তারা আসামাত্রই দৌড়তে পারে। আমাদের কেউ কেউ ধরে নেয়, রমাদান এলেই ঈমানের দশা রাতারাতি একবারে এক রাতের মধ্যেই পাল্টে যাবে।
এ যেন একটা বাটন, চাপলেই কাজ হয়ে যায়। অনেকেরই রমাদানের প্রথম কয়েকদিনে খুব উৎসাহ উদ্দীপনা থাকে, কিন্তু এক সপ্তাহ বা তার পরেই দেখা যায় উদ্দীপনার জোয়ারে ভাটা পড়ে যায়। বেশিরভাগ সময়েই এটা হয় যথাযথ প্রস্তুতি না থাকার কারণে। এজন্যই ঈমানদাররা সময় থাকতেই প্রস্তুত হয়।

৪. গুন্নাহ ছেড়ে দেওয়ার সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়া: রমাদান আসার আগেই মুমিনরা তাদের এমন প্রত্যেকটি গুনাহর মূল্যায়ন করে ও সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয় যেগুলো নিয়ে তারা নিজেদের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে আছে। তারা সেসব গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবাহ করে। এই সবকিছুই তারা রমাদান আসার আগেই সেরে নেয়। তারা সেইসব লোকদের মত আল্লাহর সাথে তামাশায় লিপ্ত হয় না যারা বলে রমাদান আসার আগে যত পারি গুনাহ করে নেওয়া যাক আর রমাদান এলে তখন না হয় সব ছেড়েছুড়ে ভালো হয়ে যাব। ঈমানদাররা রমাদানের আগে থেকেই গুনাহ ত্যাগ করতে শুরু করে দেয়। মুমিনরা এরকম করে এজন্যই যে তারা দেখে প্রতি বছরই অসংখ্য মুসলিম রমাদান পায় কিন্তু সেই সময় তারা না পারে খুব বেশি তিলাওয়াত করতে, না পারে অতিরিক্ত সালাত পড়তে, আর না পারে সময়ের বিরাট ব্যবহার করতে। কিছুই তারা ঠিকঠাক করতে পারে না। ঠিক এই বইয়ে বর্ণিত প্রথম রূপক গল্পের মত। ফলে রমাদান শেষ হয়ে গেলেও রমাদান তাদের উপর খুব কমই প্রভাব ফেলতে পারে। কোন জিনিসটি তাদের এভাবে পেছনে ফেলে রাখল? এটা হচ্ছে সেই গুনাহগুলো যা থেকে তারা রমাদানের আগেই বিরত হয়ে যায়নি। গুনাহ হচ্ছে সেই আঘাতের মত যা একটা মানুষের ইবাদাতের স্বাদ উপভোগের সক্ষমতাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আর যেহেতু রমাদান ইবাদাতের মাস, তাই ঈমানদার মানুষজন এই মাসে আল্লাহর কাছে যাবার মিষ্টতা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবার আশঙ্কায় থাকেন সর্বদা।

উহাইব ইবনুল ওয়ারদকে জিজ্ঞেস করা হয়, “সবসময় গুনাহ করে এমন কেউ কি কখনো ইবাদাতের মিষ্টতা উপভোগ করতে পারে?” তিনি জবাব দিলেন, “না। এমনকি যে গুনাহর ইচ্ছা করে, সেও নয়।” (ফাতহুল বারী, ইবনু রজব, ১/৪৫)

যেভাবে অসুস্থ শরীর খাবারের মজা বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে, সেভাবেই অসুস্থ অন্তর গুনাহ করে ইবাদাতের স্বাদ উপভোগ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। একজন ব্যক্তি হারাম কোন জিনিসের প্রতি তার কামনা নিয়ে দৃষ্টিপাত করার সাথে সাথে তার কুরআন তিলাওয়াতের মজা, কুরআন তিলাওয়াতের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একইভাবে একজন মানুষ হারাম যোগাযোগ, হারাম নিঃশ্বাস, হারাম কথোপকথন, হারাম অর্থনৈতিক লেনদেন এবং এমন আরো অনেক হারামে লিপ্ত হয়ে পড়তে পারে এবং এগুলোর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তার সালাত, দা’ওয়াহ, দুআ এবং আরো অনেক ইবাদাতের প্রতিই ভালোবাসা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এরকম একজন মানুষ হয়তো এটা ভেবে অবাক হতে পারে যে সে এতো এতো গুনাহ করছে অথচ তা উপর আল্লাহর শাস্তি আপতিত হচ্ছে না। আল্লাহ তাকে শাস্তি দিচ্ছেন না। বাস্তবে সে যে সবদিক থেকেই নিকৃষ্ট শাস্তির মধ্যে রয়েছে, কিন্তু সে এটা দেখতে পারছে না, এটা সে বুঝে উঠতে পারে না। আল্লাহর কাছাকাছি হবার আর আখিরাতের জন্য কাজ করবার আনন্দকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, এটা তার বুঝে আসে না। এটা কি শাস্তি হিসেবে কম কিছু?

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর থেকে দূরে যাওয়ার অনুভূতির চেয়ে কঠিন, নিকৃষ্ট কোন শাস্তি আর কিছুই হতে পারে না।” (আল ফাওয়াইদ, ইবনুল কায়্যিম, ৯৭)

এজন্যই আখিরাতের আশায় থাকা মানুষেরা এইসব বাধাবিপত্তি অর্থাৎ গুনাহ দূর করার মাধ্যমেই রমাদানের জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সেটা করে রমাদান আসার আগে আগেই।

৫. রমাদানের পরিকল্পনা গ্রহণ: রমাদানের জন্য প্রস্তুত হতে তারা একটা সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে। তারা এরকম টার্গেট রাখে না যে “আমি যতটুকু সম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করবো”; বরং তারা নিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে, জানে ঠিক কতোটুকু তারা রমাদান থেকে প্রত্যাশা করে। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা রমাদানের লক্ষ্য পূরণে বিফল হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করব ও সফলভাবে রমাদানের লক্ষ্য নির্ধারণ করার পদ্ধতি আলোচনা করব।

সিয়ামের উপকারিতা

সিয়ামের শারীরিক অনেক উপকারিতা আছে । তারমধ্যে কয়কেটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. সিয়াম পালনের ফলে মানুষের শরীরে কোনো ক্ষতি হয় না বরং অনেক কল্যাণ সাধিত হয়, তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত Science for Fasting গ্রন্থে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন,
The power and endurance of the body under fasting Conditions are remarkable; After a fast properly taken the body is literally boom afresh.
অর্থাৎ ‘রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য; সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
২. বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়।
৩. স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা: আব্রাহাম জে হেনরি রোজা সম্পর্কে বলেছেন, ‘রোজা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। কারণ রোজা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।’
৪. ডা: আইজাক জেনিংস বলেছেন, ‘যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে।
৫. ডাক্তার দেওয়ান এ কে এম আব্দুর রহিম বলেছেন, ‘মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয় রোজা পালনের কারণে।

সিয়ামের প্রতিদান সম্পর্কে হাদীসসমূহ

১. রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম বন্দার জন্য ঢালস্বরূপ।— অবশ্যই সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের থেকেও সুগন্ধি। সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যখন যে ইফতার করে এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহিহ বুখারী: ১৯০৪)

২. হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনি আদমের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি হতে থাকে, ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত, এমনকি আল্লাহ চাইলে তার চেয়েও বেশি দেন। (সহিহ মুসলিম হাদিস: ১১৫১)
৩. হযরত সাহল বিন সা’দ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সিয়াম পালনকারী ব্যক্তিই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহ্বান করা হবে- সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়…? তাঁরা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল সিয়াম পালনকারী ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না। (সহিহ বুখারী: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)
৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রোজা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির চাহিদা মেটানো থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাঁকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন দুজনের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমদ হাদিস : ৬৫৮৯)
৫. আল্লাহ তাআলা নিজের ওপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তাঁর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কেয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ১০৩৯)
৬. কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস : ৮১১৫)
৭. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৩২৪)

সিয়ামের মতো এ অসাধারণ নিয়ামত যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে  তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে কুরআন নাজিলের মাসে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্ঠারত থেকে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করাই মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য।

লেখক: মুবাইদুল ইসলাম
লেখক ও সম্পাদক