ঢাকা ১০:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব–১৬ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরের আনফা একাডেমিতে বাংলাদেশের বীর গোলকিপার ইয়ারজান বেগম। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের ফুটবলে টাইব্রেকারে গড়ানো ফাইনালে বাংলাদেশের গোলকিপার ইয়ারজান ভারতের তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেশকে এনে দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ ফুটবলের শিরোপা। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৫ শিরোপা জিতলেও এই প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ছিল ১-১ গোলে ড্র। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে ভারত অনুশকা দেবীর গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ মরিয়াম বিনতে আন্নার গোলে গোলে সমতায় ফেরে।

শুরুতেই গোল খেয়ে হতভম্ব ব্যাপারটি কাটাতে খানিকটা বেশি সময়ই নিয়ে ফেলল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মেয়েরা। ফাইনাল খেলার চাপেই কিনা, স্বাভাবিক খেলাটা একেবারেই খেলতে পারছিল না সুরভী আকন্দ, থুইনুই মারমারা। ভারতের মেয়েদের প্রেসিং ফুটবলে জায়গাটাও ঠিকমতো করে নিতে পারছিল না বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বল পায়ে রেখে খেলার পুরস্কারটা বাংলাদেশ আদায় করে নিয়েছে ম্যাচের ৭১ মিনিটে। মরিয়ামের সুযোগ সন্ধানী এক গোলে ১-১ সমতায় ফিরে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের ফাইনাল টাইব্রেকারে নিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধে একেবারেই ভালো খেলতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। বারবার বল হারাতে হয়েছে। ভারতও যে খুব গতিময়, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, এটা বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশ দল স্নায়ুর চাপে ভুগছিল বেশ ভালো ভাবেই। বাংলাদেশের নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ ভারত নিতেই পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা প্রথমার্ধে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনেও। কিন্তু ফাতেমা আক্তারের ফ্রি কিকের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ফেরান ভারতের গোলকিপার মুন্নি।

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কোচ সাইফুল বারী দুটি বদল আনেন। ফাতেমার জায়গায় মমিতা আর ক্রানুচিং মারমার জায়গায় মাঠে নামেন অনন্যা মুরমু বীথি। ভারতকে এরপর চেপে ধরে বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। পুরস্কার আসে ৭১ মিনিটে। অনন্যা মুরমু বীথির কর্নার থেকে মারিয়াম বক্সের মধ্যকার জটলায় বল ঠেলে দেন ভারতের গোলে।

১-১ সমতার পর ভারত কোনো সুযোগই পায়নি। বাকি ১৯ মিনিট খেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বাংলাদেশ। এই সময় কয়েকটি সুযোগও তৈরি হয়। কিন্তু গোল হয়নি। ১-১ সমতায় খেলা শেষ হলে সাফের বাইলজ অনুযায়ী খেলা সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ভারতের কোচ গোলকিপার মুন্নিকে বদলিয়ে নামান অন্য গোলকিপার সুরুজ কুমারীকে।

টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম শটটি নিতে আসেন সেরা খেলোয়াড় সুরভী আকন্দ। কিন্তু তার শটটি ঠেকিয়ে দেন ভারতীয় গোলকিপার সুরুজ কুমারী। এরপর ভারতের শভেতা রানী টাইব্রেকারে ১-০’তে এগিয়ে দেন ভারতকে। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় শটে গোল করেন মরিয়াম। ভারতের দ্বিতীয় শটটি মিস করেন আলিনা। গোলকিপার ইয়ারজান ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে শটটি ঠেকান। বাংলাদেশের তৃতীয় শটটিতে গোল করেন থুইনুই মারমা। ভারতের বনিফিলিয়ার করেন মিস।

বাংলাদেশের চতুর্থ শটে গোল করনতে পারেননি আলপি। ভারতের চার নম্বর শট জালে ঠেলেন অনিতা রঘু রামন। সাথী মানদা পঞ্চম শটে গোল করেন। এরপর ইয়ারজান ভারতের দেবযানীর শটটি ঠেকিয়ে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেন।

গতমাসে ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের ফাইনালে ৯৩ মিনিটে মোসাম্মাৎ সাগরিকার সমতাসূচক গোলে একই ভাবে সেই ফাইনাল টাইব্রেকারে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর পেনাল্টি শুট আউট ও সাডেন ডেথ মিলে স্কোরলাইন ছিল ১১-১১ সমতায়। এরপর ম্যাচ কমিশনারের টসে শিরোপা নির্ধারণের সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কমলাপুর স্টেডিয়ামে নাটকের জন্ম দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব

ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব–১৬ সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা

আপডেট সময় ০৬:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

কাঠমান্ডুর অদূরে ললিতপুরের আনফা একাডেমিতে বাংলাদেশের বীর গোলকিপার ইয়ারজান বেগম। সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের ফুটবলে টাইব্রেকারে গড়ানো ফাইনালে বাংলাদেশের গোলকিপার ইয়ারজান ভারতের তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেশকে এনে দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ ফুটবলের শিরোপা। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৫ শিরোপা জিতলেও এই প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ছিল ১-১ গোলে ড্র। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে ভারত অনুশকা দেবীর গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ মরিয়াম বিনতে আন্নার গোলে গোলে সমতায় ফেরে।

শুরুতেই গোল খেয়ে হতভম্ব ব্যাপারটি কাটাতে খানিকটা বেশি সময়ই নিয়ে ফেলল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মেয়েরা। ফাইনাল খেলার চাপেই কিনা, স্বাভাবিক খেলাটা একেবারেই খেলতে পারছিল না সুরভী আকন্দ, থুইনুই মারমারা। ভারতের মেয়েদের প্রেসিং ফুটবলে জায়গাটাও ঠিকমতো করে নিতে পারছিল না বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বল পায়ে রেখে খেলার পুরস্কারটা বাংলাদেশ আদায় করে নিয়েছে ম্যাচের ৭১ মিনিটে। মরিয়ামের সুযোগ সন্ধানী এক গোলে ১-১ সমতায় ফিরে মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের ফাইনাল টাইব্রেকারে নিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধে একেবারেই ভালো খেলতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। বারবার বল হারাতে হয়েছে। ভারতও যে খুব গতিময়, আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, এটা বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশ দল স্নায়ুর চাপে ভুগছিল বেশ ভালো ভাবেই। বাংলাদেশের নড়বড়ে অবস্থার সুযোগ ভারত নিতেই পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা প্রথমার্ধে সমতায় ফেরার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনেও। কিন্তু ফাতেমা আক্তারের ফ্রি কিকের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ফেরান ভারতের গোলকিপার মুন্নি।

দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কোচ সাইফুল বারী দুটি বদল আনেন। ফাতেমার জায়গায় মমিতা আর ক্রানুচিং মারমার জায়গায় মাঠে নামেন অনন্যা মুরমু বীথি। ভারতকে এরপর চেপে ধরে বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন। পুরস্কার আসে ৭১ মিনিটে। অনন্যা মুরমু বীথির কর্নার থেকে মারিয়াম বক্সের মধ্যকার জটলায় বল ঠেলে দেন ভারতের গোলে।

১-১ সমতার পর ভারত কোনো সুযোগই পায়নি। বাকি ১৯ মিনিট খেলায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বাংলাদেশ। এই সময় কয়েকটি সুযোগও তৈরি হয়। কিন্তু গোল হয়নি। ১-১ সমতায় খেলা শেষ হলে সাফের বাইলজ অনুযায়ী খেলা সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ভারতের কোচ গোলকিপার মুন্নিকে বদলিয়ে নামান অন্য গোলকিপার সুরুজ কুমারীকে।

টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম শটটি নিতে আসেন সেরা খেলোয়াড় সুরভী আকন্দ। কিন্তু তার শটটি ঠেকিয়ে দেন ভারতীয় গোলকিপার সুরুজ কুমারী। এরপর ভারতের শভেতা রানী টাইব্রেকারে ১-০’তে এগিয়ে দেন ভারতকে। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় শটে গোল করেন মরিয়াম। ভারতের দ্বিতীয় শটটি মিস করেন আলিনা। গোলকিপার ইয়ারজান ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে শটটি ঠেকান। বাংলাদেশের তৃতীয় শটটিতে গোল করেন থুইনুই মারমা। ভারতের বনিফিলিয়ার করেন মিস।

বাংলাদেশের চতুর্থ শটে গোল করনতে পারেননি আলপি। ভারতের চার নম্বর শট জালে ঠেলেন অনিতা রঘু রামন। সাথী মানদা পঞ্চম শটে গোল করেন। এরপর ইয়ারজান ভারতের দেবযানীর শটটি ঠেকিয়ে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেন।

গতমাসে ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের ফাইনালে ৯৩ মিনিটে মোসাম্মাৎ সাগরিকার সমতাসূচক গোলে একই ভাবে সেই ফাইনাল টাইব্রেকারে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর পেনাল্টি শুট আউট ও সাডেন ডেথ মিলে স্কোরলাইন ছিল ১১-১১ সমতায়। এরপর ম্যাচ কমিশনারের টসে শিরোপা নির্ধারণের সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত কমলাপুর স্টেডিয়ামে নাটকের জন্ম দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারত দুই দলকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।