ঢাকা ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাবিতে তেলাপোকার ভয় দেখিয়ে ৫ বছর ধরে ফ্রিতে খাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলার ভয় দেখিয়ে গত ৫ বছর ধরে ডাইনিং ও ক্যান্টিনে ফ্রিতে খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত তিন মাস ধরে ডাইনিং থেকে দুপুর-রাতে দু’বেলা খাবার ফ্রিতে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই হলের আরেক নেতা সোহানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ক্যান্টিন মালিক হলেন মো. আলতাফ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান আবাসিক হলে ২০০৬ সাল থেকে ক্যান্টিন চালান। ১৯৭১ সালে বাবার সঙ্গে নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর ছেড়ে রাজশাহীতে পাড়ি জমান আলতাফ। আরেক ভুক্তভোগী হলেন হবিবুর রহমান হলের ডাইনিং কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মো. মিনহাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও হলের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। মিনহাজুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে আরেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। সোহান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।

হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিং সূত্রে জানা যায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ওঠার পর থেকেই ক্যান্টিনে বাকি খেতে শুরু করেন মিনহাজ। বাকির খাতায় ২৫-৩০ হাজার টাকা জমা হলেও কখনোই টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। ফলে টাকা না পেয়ে একরকম হতাশ হয়ে তার নামে বাকি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন ক্যান্টিন মালিক আলতাফ। ফলে ৫ বছর ধরে ক্যান্টিনে ফ্রিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। বাকির টাকা চাইলে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলে দেবেন বলে ভয় দেখান ক্যান্টিন মালিককে। এদিকে গত কয়েকমাস ধরে হলের ডাইনিংয়েও নিয়মিত ফ্রিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন এ ছাত্রলীগ নেতা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের আরেক নেতা সোহান আহমেদও মিনহাজের দেখাদেখি গত তিন মাস ধরে ডাইনিংয়ে দু’বেলা খাবার ফ্রিতে খাচ্ছেন।

ডাইনিং কর্মচারীদের অভিযোগ, এই দুই নেতার রুমে প্রতিদিন দুবেলা খাবার দিয়ে আসতে হয় তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় ফ্রিতে খাবার দিয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কিছু বলতে গেলে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলে ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ করে দেবেন এমন ভয়ে ফ্রিতেই খাবার দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

ডাইনিং ম্যানেজার ও ক্যান্টিন মালিকরা তাদের বাকির টাকা ফেরত চান এবং অভিযুক্তরা যেন ফ্রিতে খাবার খেতে না আসেন সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হলে ওঠার পর থেকে আমার ক্যান্টিনে বাকি খাচ্ছে মিনহাজ। বাকির টাকা লিখতে লিখতে হতাশ হয়ে গেছি আমি। তাই এখন আর তার বাকির টাকা লিখি না। একবার টাকা চেয়েছিলাম বিধায় হুমকি দিয়েছিল তেলাপোকা ও মাছি মেরে খাবারে দিয়ে দিবে। এরপর থেকে আর টাকা চাইনি আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রভোস্টদের জানিয়েও সমাধান পাইনি। তারা শুধু বাকি দিতে মানা করেন। আমি শারীরিকভাবে হার্টের রোগী, আমার শরীরে তিনটি রিং বসানো হয়েছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে। এসব বিষয় বলার পরেও তারা কোনো কেয়ার করে না।

তবে ফ্রিতে খাবার খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্যান্টিনে আমার এতো টাকা বাকি নেই। বাকি খাচ্ছি এবং মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। তিন-চারশো টাকা হয়তো বাকি থাকতে পারে। ডাইনিং থেকে কখন আমার রুমে খাবার আসে এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

অভিযোগ অস্বীকার করেন আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদও। তিনি বলেন, এমন অভিযোগ দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার রুমে কোনো ধরনের খাবার আসে না। এসব অভিযোগ এনে ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমার সামনের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করতে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এ বিষয়টি আমি মাত্রই শুনেছি। কমিটি পাওয়ার পর থেকেই ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে ফ্রিতে খাবার বা বাকি খাওয়ার বিষয়ে আমরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছি। এ বিষয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকদের সঙ্গে দেখাও করেছি। হবিবুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নামে যে অভিযোগ পেয়েছি, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসবো। এ বিষয়ে সত্যতা পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম বলেন, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের কর্মচারীরা এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদেরকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিতে নিষেধ করে দিয়েছি। তবুও কেন তাদেরকে তারা বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিয়ে থাকে সেটা আমি জানি না।

ট্যাগস :

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বেড়ে নিহতের সংখ্যা এখন ২০৪

রাবিতে তেলাপোকার ভয় দেখিয়ে ৫ বছর ধরে ফ্রিতে খাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা

আপডেট সময় ০৪:৪৯:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিনহাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলার ভয় দেখিয়ে গত ৫ বছর ধরে ডাইনিং ও ক্যান্টিনে ফ্রিতে খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া হলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত তিন মাস ধরে ডাইনিং থেকে দুপুর-রাতে দু’বেলা খাবার ফ্রিতে খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই হলের আরেক নেতা সোহানের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ক্যান্টিন মালিক হলেন মো. আলতাফ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান আবাসিক হলে ২০০৬ সাল থেকে ক্যান্টিন চালান। ১৯৭১ সালে বাবার সঙ্গে নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর ছেড়ে রাজশাহীতে পাড়ি জমান আলতাফ। আরেক ভুক্তভোগী হলেন হবিবুর রহমান হলের ডাইনিং কর্তৃপক্ষ।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মো. মিনহাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও হলের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। মিনহাজুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে আরেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। সোহান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।

হলের ক্যান্টিন ও ডাইনিং সূত্রে জানা যায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলে ওঠার পর থেকেই ক্যান্টিনে বাকি খেতে শুরু করেন মিনহাজ। বাকির খাতায় ২৫-৩০ হাজার টাকা জমা হলেও কখনোই টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। ফলে টাকা না পেয়ে একরকম হতাশ হয়ে তার নামে বাকি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন ক্যান্টিন মালিক আলতাফ। ফলে ৫ বছর ধরে ক্যান্টিনে ফ্রিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। বাকির টাকা চাইলে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলে দেবেন বলে ভয় দেখান ক্যান্টিন মালিককে। এদিকে গত কয়েকমাস ধরে হলের ডাইনিংয়েও নিয়মিত ফ্রিতে খাবার খেয়ে যাচ্ছেন এ ছাত্রলীগ নেতা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শহীদ হবিবুর রহমান হলের আরেক নেতা সোহান আহমেদও মিনহাজের দেখাদেখি গত তিন মাস ধরে ডাইনিংয়ে দু’বেলা খাবার ফ্রিতে খাচ্ছেন।

ডাইনিং কর্মচারীদের অভিযোগ, এই দুই নেতার রুমে প্রতিদিন দুবেলা খাবার দিয়ে আসতে হয় তাদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় ফ্রিতে খাবার দিয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কিছু বলতে গেলে খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলে ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ করে দেবেন এমন ভয়ে ফ্রিতেই খাবার দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

ডাইনিং ম্যানেজার ও ক্যান্টিন মালিকরা তাদের বাকির টাকা ফেরত চান এবং অভিযুক্তরা যেন ফ্রিতে খাবার খেতে না আসেন সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হলে ওঠার পর থেকে আমার ক্যান্টিনে বাকি খাচ্ছে মিনহাজ। বাকির টাকা লিখতে লিখতে হতাশ হয়ে গেছি আমি। তাই এখন আর তার বাকির টাকা লিখি না। একবার টাকা চেয়েছিলাম বিধায় হুমকি দিয়েছিল তেলাপোকা ও মাছি মেরে খাবারে দিয়ে দিবে। এরপর থেকে আর টাকা চাইনি আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রভোস্টদের জানিয়েও সমাধান পাইনি। তারা শুধু বাকি দিতে মানা করেন। আমি শারীরিকভাবে হার্টের রোগী, আমার শরীরে তিনটি রিং বসানো হয়েছে। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে। এসব বিষয় বলার পরেও তারা কোনো কেয়ার করে না।

তবে ফ্রিতে খাবার খাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ক্যান্টিনে আমার এতো টাকা বাকি নেই। বাকি খাচ্ছি এবং মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। তিন-চারশো টাকা হয়তো বাকি থাকতে পারে। ডাইনিং থেকে কখন আমার রুমে খাবার আসে এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

অভিযোগ অস্বীকার করেন আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদও। তিনি বলেন, এমন অভিযোগ দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার রুমে কোনো ধরনের খাবার আসে না। এসব অভিযোগ এনে ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমার সামনের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করতে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এ বিষয়টি আমি মাত্রই শুনেছি। কমিটি পাওয়ার পর থেকেই ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে ফ্রিতে খাবার বা বাকি খাওয়ার বিষয়ে আমরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছি। এ বিষয়ে ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকদের সঙ্গে দেখাও করেছি। হবিবুর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নামে যে অভিযোগ পেয়েছি, সে বিষয়টি নিয়ে আমরা বসবো। এ বিষয়ে সত্যতা পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম বলেন, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের কর্মচারীরা এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদেরকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিতে নিষেধ করে দিয়েছি। তবুও কেন তাদেরকে তারা বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিয়ে থাকে সেটা আমি জানি না।