ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার থেকে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে হস্তান্তর

  • ফখরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় ০২:০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 147

মিয়ানমার থেকে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে হস্তান্তর

সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিককে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ০৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ০২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ০৪ জন বেসামরিক নাগরিকসহ সর্বমোট ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে হস্তান্তর করে। এসময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমার নাগরিকদের হস্তান্তর কার্যক্রম শেষে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সেদেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

অতি সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও এসে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও বাইশফাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পে আক্রমণ করে।

একই সাথে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী, পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের বিপরীতে কাইচিংরং, মইদু , গুদুছড়া ও মংডু এলাকায়ও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবি’র কাছে আত্মসমর্পণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবি’র তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ০৯ জন বিজিপি সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বিজিবি’র রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীর এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে ০৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি হস্তান্তর কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষের সাথে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেলের নেতৃত্বে ০৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আসে এবং বিজিবি’র নিকট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে গহণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান বিজিবি মহাপরিচালক।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ চালু করলো পাকিস্তান

মিয়ানমার থেকে আসা ৩৩০ জন নাগরিককে হস্তান্তর

আপডেট সময় ০২:০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিককে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ০৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ০২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ০৪ জন বেসামরিক নাগরিকসহ সর্বমোট ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে হস্তান্তর করে। এসময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমার নাগরিকদের হস্তান্তর কার্যক্রম শেষে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সেদেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

অতি সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও এসে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও বাইশফাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পে আক্রমণ করে।

একই সাথে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী, পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের বিপরীতে কাইচিংরং, মইদু , গুদুছড়া ও মংডু এলাকায়ও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবি’র কাছে আত্মসমর্পণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবি’র তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ০৯ জন বিজিপি সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ প্রেক্ষিতে বিজিবি’র রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীর এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধিনায়ক, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে ০৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি হস্তান্তর কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষের সাথে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেলের নেতৃত্বে ০৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আসে এবং বিজিবি’র নিকট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে গহণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান বিজিবি মহাপরিচালক।