ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব; বিতর্কের পর পোস্ট সরাল ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত দাবি করে দেয়া ফেসবুক পোস্টটি বিতর্কের জেরে সরিয়ে নিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারী) থেকে এ-সংক্রান্ত পোস্টটি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে দেখা যায়নি। এছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির পেটেন্ট পেতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া একটি পোস্টের মাধ্যমে।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’ পোস্টটির পর পরই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ওঠে এবং টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বাংলাদেশের নেয়ার দাবি ওঠে।

ভারতের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তন্তুবায়ী সমবায় সমিতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ এ স্বীকৃতি দেয়। তাতে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শাড়িটির জিআই চিহ্ন হিসেবে বলা হয়েছে, এর নাম ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’। শান্তিপুর ডিজাইন ও ঢাকাই টাঙ্গাইলের সংমিশ্রণে এক ধরনের সংকর শাড়ি এটি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতেই সেটি তৈরি হয়েছে। তাই উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা ২০৩০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, নদীয়া জেলায় ফুলিয়াকে ঘিরে থাকা তাঁতি গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে যাওয়া তাঁতিরা বর্তমানে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ তৈরি করেন। এ শাড়ির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমান পূর্ব ব্রাহ্মণপাড়ার ধাত্রিগ্রাম ও সমুদ্রগড় এবং নদীয়ার ফুলিয়া শহরে তৈরি হয় এ শাড়ি। পাশাপাশি আরো কিছু স্থানেও তৈরি হয়।

যদিও গবেষকদের মতে, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে এবং এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে লুঙ্গি-গামছা এবং মেয়েরা শাড়ি পরিধান করে, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখনই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়।

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের ভৌগোলিক পণ্য দাবি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ঐতিহাসিকভাবেই টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের। এখান থেকে যেসব তাঁতি ভারতে গিয়েছিলেন তারা সেখানেও অনেকটা একই ধরনের শাড়ি তৈরি করলেও টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের নিজেদের পণ্য দাবি করার সুযোগ নেই। এছাড়া জলবায়ুগত পার্থক্যের কারণে ভারতে তৈরি করা টাঙ্গাইল শাড়ির গুণগত মান বাংলাদেশে তৈরি করা টাঙ্গাইল শাড়ির মতো নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব; বিতর্কের পর পোস্ট সরাল ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়

আপডেট সময় ০৫:১৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত দাবি করে দেয়া ফেসবুক পোস্টটি বিতর্কের জেরে সরিয়ে নিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারী) থেকে এ-সংক্রান্ত পোস্টটি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে দেখা যায়নি। এছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ির পেটেন্ট পেতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া একটি পোস্টের মাধ্যমে।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’ পোস্টটির পর পরই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ওঠে এবং টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বাংলাদেশের নেয়ার দাবি ওঠে।

ভারতের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তন্তুবায়ী সমবায় সমিতির করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ এ স্বীকৃতি দেয়। তাতে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শাড়িটির জিআই চিহ্ন হিসেবে বলা হয়েছে, এর নাম ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’। শান্তিপুর ডিজাইন ও ঢাকাই টাঙ্গাইলের সংমিশ্রণে এক ধরনের সংকর শাড়ি এটি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতেই সেটি তৈরি হয়েছে। তাই উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা ২০৩০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবেদনপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, নদীয়া জেলায় ফুলিয়াকে ঘিরে থাকা তাঁতি গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে যাওয়া তাঁতিরা বর্তমানে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ তৈরি করেন। এ শাড়ির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমান পূর্ব ব্রাহ্মণপাড়ার ধাত্রিগ্রাম ও সমুদ্রগড় এবং নদীয়ার ফুলিয়া শহরে তৈরি হয় এ শাড়ি। পাশাপাশি আরো কিছু স্থানেও তৈরি হয়।

যদিও গবেষকদের মতে, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে এবং এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে লুঙ্গি-গামছা এবং মেয়েরা শাড়ি পরিধান করে, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখনই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়।

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের ভৌগোলিক পণ্য দাবি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শাড়ির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, ঐতিহাসিকভাবেই টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের। এখান থেকে যেসব তাঁতি ভারতে গিয়েছিলেন তারা সেখানেও অনেকটা একই ধরনের শাড়ি তৈরি করলেও টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের নিজেদের পণ্য দাবি করার সুযোগ নেই। এছাড়া জলবায়ুগত পার্থক্যের কারণে ভারতে তৈরি করা টাঙ্গাইল শাড়ির গুণগত মান বাংলাদেশে তৈরি করা টাঙ্গাইল শাড়ির মতো নয়।