রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মার্কেটিং বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে তার নিজ বিভাগের এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতে ও গলা চেপে ধরার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় মার্কেটিং বিভাগের একাডেমিক আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষক মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক। তবে দুজনেই নাম তাদের নাম না প্রকাশ করতে অনুরোধ করেছেন।
একাডেমিক মিটিংয়ে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের একাডেমিক মিটিং ছিল। এ সময় বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষক মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। একপর্যায়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার তারিখ নিয়ে আলোচনা তোলেন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. শুভ্রা রানি। কমিটির সভাপতিকে না জানিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে কমিটির সদস্য করেন বিভাগের সভাপতি। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।
আরও জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা কমিটিতে বিভাগের একজনকে সভাপতি এবং চারজন শিক্ষককে সদস্য করতে হয়। এতে বিভাগের থাকবেন তিনজন শিক্ষক এবং বহিরাগত থাকবেন একজন শিক্ষক। প্রথমবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বিভাগের শিক্ষক ড. শুভ্রা রানিকে না জানিয়ে বহিরাগত একজন শিক্ষককে কমিটির সদস্য করায় প্রশ্ন তোলেন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে বিভাগের সভাপতি ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতির কথায় সমর্থন জানিয়ে কথা বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। তিনি মিটিং চলাকালে আরও বিভিন্ন বিষয়ে বিভাগের সভাপতিকে প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে এসে কথা বলা বন্ধ করতে ভুক্তভোগীর মুখ ও গলা চেপে ধরেন বিভাগের সভাপতি। পরে মিটিংয়ে থাকা অন্য শিক্ষকরা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, বিভাগের সভাপতি আমার আমার গলা চেপে ধরে একধরনের অমানবিক অন্যায় করেছেন। তিনি তার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন সভাপতি পদে থাকার। তাকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে, তিনি যদি বিভাগের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে আমি এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবো না। আর যদি তিনি পদত্যাগ না করেন তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেবো।
এ বিষয়ে জানতে বিভাগের অভিযুক্ত সভাপতির ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. শুভ্রা রানি বলেন, আমাদের নিয়ম হচ্ছে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ঠিক করবেন বহিরাগত কোন শিক্ষককে রাখা যায় কমিটিতে। আমাকে না জানিয়ে বহিরাগত একজনকে সদস্য করেন বিভাগের সভাপতি। এ নিয়ে আমি মিটিংয়ে কথা তুলি, তখন সবাই আমার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। এক পর্যায়ে তার মুখ চেপে ধরেন সভাপতি। কিন্তু গলা চেপে ধরার বিষয়টি সোফায় বসে থাকার ফলে আমি দেখিনি, পরে সবাই বলেছে আমাকে। আমার ৩৩ বছরের শিক্ষকতার ইতিহাসে এমন দেখিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আর এগুলো একাডেমিক বিষয়, সেগুলো সেখানে সমাধান করতে হবে। সেখানে সমাধান না হলে আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ জানালে আমরা সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো।