ভারতে শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারের অনুমোদন পাওয়া তিন হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে ৪৫ টন ৮০০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে। ১২ ট্রাকে করে এই ইলিশ মাছ ভারতে গেছে। তবে বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি না আসায় কোনো মাছের চালান রপ্তানি করতে পারেননি রপ্তানিকারকরা। দুপুরের দিকে অনুমতি আসার পর মাছ রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কাস্টমস ও মৎস্য দপ্তরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ইলিশের ট্রাক প্রবেশ করে। এর আগে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। আজ যে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে তার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মাহিমা এন্টারপ্রাইজ, তানিসা এন্টারপ্রাইজ, সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং, রিপা এন্টারপ্রাইজ ও প্যাসিফিক সি ফুড।
ভারতের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এস আর ইন্টারন্যাশনাল, নাজ ইমপেক্স প্রাইভেট লিমিটেড, বিমল রায় ও বারখা বিকাস ফিশ এজেন্সি। প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ইলিশ মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার তিন হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশের ৭৯টি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ইলিশের প্রথম চালানে ১২টি ট্রাকে করে ৪৫ টন ৮০০ কেজি মাছ ভারতে প্রবেশ করেছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ইলিশ রপ্তানি হবে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব ইলিশ রপ্তানির নির্দেশনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন সময় তা রপ্তানি বন্ধ রাখে বাংলাদেশ সরকার।
২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে এরপর বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার ভারত সরকারকে শুভেচ্ছা উপহারস্বরূপ ইলিশ দিয়েছে। ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় ১১৫ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভারতে চার হাজার ৬০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সময় ইলিশ সংকট ও রপ্তানি মূল্যের চেয়ে কেনা মূল্য বেশির কারণে এক হাজার ১০৮ টন ২৮০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। একই কারণে ২০২২ সালে দুই দফায় ৫৯টি প্রতিষ্ঠানকে মোট দুই হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। গত বছর ইলিশ রপ্তানি হয় ১৩০৬.৮১৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া রপ্তানি আদেশের ৪৪ ভাগ ইলিশ ভারতে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান মাছ না পেয়ে ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। তার পরও পদ্মার ইলিশ পেয়ে ওপারের অনেকে খুশি। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সেরা উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। অনেক ভোজনরসিক পদ্মার ইলিশের স্বাদ নিতে অপেক্ষায় থাকেন।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যুথী এন্টারপ্রাইজের ম্যনেজার মিজানুর রহমান বলেন, এবার প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় এক হাজার ১০০ টাকা। ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের কাস্টমস থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ইলিশের এ চালান ছাড় করা হবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে ৪৫ টন ৮০০ কেজি আজ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে গেছে। দ্রুত রপ্তানি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ পাঠাবে ৭৯ প্রতিষ্ঠান
শারদীয় দুর্গা উৎসবে ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার (২০ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে জানানো হয়, ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। তালিকায় ঢাকার ৩৯টি, যশোরের ১২টি, পাবনার ৯টি, খুলনার সাতটি, বরিশালের পাঁচটি, চট্টগ্রামের তিনটি এবং নড়াইল, মৌলভীবাজার, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজার জেলার একটি করে প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান ভারতে ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে। আবার সরকার প্রয়োজন মনে করলে রপ্তানির এই আদেশ যেকোনো সময় বন্ধও করতে পারবে। তবে সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বিধি-নিষেধ আরোপ করলে তা কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে এ অনুমতির মেয়াদ শেষ হবে বলে অনুমোদনের শর্তে বলা হয়েছে।
সেখানে আরো বলা হয়, ব্যবসায়ীদের রপ্তানি নীতি অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি কনসাইনমেন্ট রপ্তানি শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত কাগজপত্র রপ্তানি-২ অধিশাখায় দাখিল করতে হবে, অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ পাঠানো যাবে না। এ অনুমতি কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়, অনুমোদিত রপ্তানিকারক ব্যতীত সাবকন্ট্রাক্টে রপ্তানি করা যাবে না।
ঢাকার অর্পিতা ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী বিষুদানন্দ আচার্য্য বিশু বলেন, ‘দুর্গাপূজায় ভারতে ৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছি। বুধবার এসংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়ে রপ্তানির সব কার্যক্রম শুরু করেছি। এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বুধবার এসংক্রান্ত একটি চিঠি হাতে পেয়েছি। চিঠির আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’