আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জন করলেও দলটির ভোটারদের ভোট পেতে চায় আওয়ামী লীগ। বিএনপির ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে প্রচারণায় নানারকম কৌশল যোগ করেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীরা। এ কৌশলের অন্যতম হলো ভোট দিলে হামলা-মামলা থেকে রেহাই মিলবে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের এমন আশ্বাস দেওয়া। আর এমন আশ্বাসে আস্থা রাখার কথাও জানা যাচ্ছে বিভিন্ন সংসদীয় এলাকা থেকে।
খুলনা, রাজশাহী, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন আসন ঘুরে এবং খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্য মিলেছে। ওইসব এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত এবং স্বতন্ত্র সব প্রার্থীকেই বিএনপি অধ্যুষিত গ্রাম-পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াতে দেখা গেছে।
খুলনা-৫ সংসদীয় এলাকার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়ন বিএনপির এক সদস্য বলেন, ‘নৌকা ও স্বতন্ত্র সব প্রার্থীই বিএনপির ভোটার টানার চেষ্টা করছেন। খুলনা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছেন।’ অবশ্য তিনি মনে করেন, এটা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল।
সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি চাপে থাকা সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা এবং কেন্দ্রে ভোটার আনা। কারণ মাঠের বড় দল বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ ১৬টি নিবন্ধিত দল নির্বাচন বর্জন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুরা-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তার নির্বাচনী সমন্বয়ক ও তার সঙ্গে থাকা মাগুরা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির ভোটারদের কাছে বেশি ছুটছেন। মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, সাকিব এ আসনে বিজয়ী হবেন। তবুও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সবার ঘরে ঘরে যাচ্ছেন তারা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ঘটানো। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ভোট চাইতে বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা ও নেতাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করছি। তাদের কাছে অনুরোধ রাখছি, ভোটকেন্দ্রে এসে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে যেতে।
বিএনপিবিহীন এবারের ভোটে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজেও নির্বাচনী জনসভায় দলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। কারণ তার সরকারের লক্ষ্য কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে বিদেশিদের সমালোচনার জবাব দেওয়া। বিএনপির ভোটার আনার পরিকল্পনায় সফল হতে পারলে আওয়ামী লীগ বিদেশিদের বলতে পারবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিএনপি সমর্থক ও ভোটাররা দ্বাদশ নির্বাচনে আসতে মুখিয়ে ছিল সেটাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, ভোটার বাড়াতে প্রার্থীদের সব চেষ্টা করে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেতারা বলেন, প্রার্থীদের কাছে এখন কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি, সেটা বিবেচ্য নয়। ভোটের জন্য সবার কাছে যেতে হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতেও যেতে হবে প্রার্থীদের।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসবে এ শর্তে বিএনপির নেতাদের মামলা-হামলা থেকে রেহাই দেওয়ার আশ্বাসও দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। আর ভোট দিতে না এলে মামলা-হামলার বিষয়টিও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। অনেক আসনে নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হলেও ভোটার বাড়াতে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, অনেক এলাকায় বিএনপির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের আশ্বাসে রাজি হচ্ছেন। নিজ এলাকায় নিরাপদে থাকতে পারার আশায় আওয়ামী লীগের এ কৌশলে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের অনেকে রাজি হয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
বিএনপির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ নেতাকর্মীরা খুব বিপদে রয়েছেন। বাসাবাড়িতে থাকতে পারেন না। বাজার-হাটে উঠতে পারেন না। পালিয়ে বেড়াতে হয়। ভোট দিয়ে যদি মামলা-হামলা থেকে বাঁচা যায়, খারাপ কী।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূল বিএনপির পদ-পদবিতে থাকা নেতারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। সমর্থকদের পাঠাবেন এমন আশ্বাস অনেক নির্বাচনী এলাকায় পাওয়া গেছে। কারণ যারা নেতৃস্থানীয় তারা যেহেতু পরিচিত, তাই তাদের পক্ষে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাওয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, প্রথমে অনুরোধ করা হচ্ছে। অনুরোধে কাজ না হলে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে মামলা-হামলায় ফাঁসানোর হুমকি-ধমকি দিয়ে কাবু করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনে করছেন, বিএনপির সাধারণ সমর্থকরা কেন্দ্রে এলে নৌকাকে ভোট দেবেন এ সংখ্যা শূন্য বললেই চলে। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। ফলে জয়ের ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা মিলবে। তাই বিএনপির সাধারণ সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে আসুক, এটা নৌকার প্রার্থীরা একটু কমই চাইছেন।