ঢাকা ১০:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন অনেক প্রার্থী

আগামী ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলেও ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অর্ধেকের বেশি প্রার্থী। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনকারী জাতীয় পার্টি (জাপা) বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে লড়াই করতে ২৮৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও ছাড়ের আসনগুলো বাদে আর কোথাও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। যে কারণে ২৫৭টি আসনে তাদের প্রার্থীরা অনেকটা নামকাওয়াস্তেই রয়েছে। এরইমধ্যে দলটির মনোনীত অনেক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন শুরু করেছে ঘোষণা দিয়ে। তবে ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের বেশিরভাগই প্রচার-প্রচারণায় নেই। এমনকি অনেকে পোস্টার পর্যন্ত ছাপায়নি বলে জানা গেছে।

ছোট দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে (১৩৫ আসন) প্রার্থী দেয়া তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ দু’তিন জন নেতা বাদে প্রার্থীদের বাকি সবাই নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তারা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছেন। একই অবস্থা, বিএনএম, এনপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্টসহ অনেক দলের। নির্বাচনে ২৭টি দল অংশ নিলেও মূলত ভোটের মাঠে এদের অর্ধেকও নেই। প্রায় এক ডজন ছোট দল প্রচারণা তো দূরে থাক, পোস্টার পর্যন্ত ছাপায়নি। তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের নেতারা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা ভোট জমজমাট করার চেষ্টা করছেন। প্রচার-প্রচারণা, সংঘাত-সহিংসতা সব কিছুই হচ্ছে তাদের মধ্যে। যে কারণে তেমন নির্বাচনী উত্তাপ নেই কোথাও। পৃষ্ঠা ঢাকার বাইরে শতাধিক আসনে কিছুটা উত্তাপ আছে। এমন কোনো আসন নেই যেখানে আওয়ামী লীগের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ভাবছে না তা নয়। সংস্থাটি এজন্য জোর দিচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর। নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি মনে করে, অন্তত ভোটকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা গেলে দেশিয় কিংবা আর্ন্তজাতিক সব মহলেই কথা কথা বলার সুযোগ মিলবে। অন্যথায় বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান এ বিষয়ে গতকাল রবিবার বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের দৃষ্টিতেই অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করলে হবে না। আমাদের দিকে সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমরা যদি আমাদের এই নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য করতে না পারি; তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাংলাদেশের সকল বিষয়; বিশেষ করে আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বাংলাদেশ হয়তোবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকবে।’ নির্বাচন ভবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির চেষ্টার কমতি নেই। নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।’

২৫৭ আসনে জাপার প্রার্থী নামকাওয়াস্তে, কয়েক আসনে ভোট বর্জন: আওয়ামী লীগকে হারিয়ে ‘ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর’ থাকার কথা বললেও জাতীয় পার্টি (জাপা) অধিকাংশ আসনে প্রচার ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই। ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের বাইরে মাত্র ৮-১০টিতে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে লাঙ্গল। আরও কয়েকটিতে প্রচার চালাচ্ছে। বাকি আড়াইশ’ আসনে জাপার দৌড় প্রার্থী রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দলটির শীর্ষ নেতারা নিজের আসনের বাইরে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে নামেননি।

জাপা নেতারা খোলাখুলি বলছেন, ভোটের মাঠে অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হওয়ায় ছাড় না পাওয়া আসনের আট-দশটি বাদে সবগুলোতে লাঙ্গলের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এ কারণে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ অন্তত ১১ প্রার্থী আসন ছাড় না পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থিতা বহাল থাকলেও তিনজন ভোট থেকে সরে গেছেন। দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ২৬ আসনের বাইরে লাঙ্গলের অধিকাংশ প্রার্থী ‘ডামি’। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতেই তাদের মাঠে রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, ‘আসন বাটোয়ারার দিনই ২৬ আসনের বাইরে ভোট শেষ। যারা আসন ছাড় পাননি, তারা মনে করছেন জয়ের সুযোগ নেই। তাই ভোটের প্রচারে টাকা খরচ করতে চান না। ২৬ জন ছাড় পাবেন, আর বাকিদের নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে হবে- এভাবে নির্বাচন হয় না। এসব প্রার্থী সরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সুবিধার জন্য ভোটে রাখা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না: প্রেস সচিব

ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন অনেক প্রার্থী

আপডেট সময় ১২:৩৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জানুয়ারী ২০২৪

আগামী ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলেও ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অর্ধেকের বেশি প্রার্থী। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালনকারী জাতীয় পার্টি (জাপা) বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীনদের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে লড়াই করতে ২৮৬টি আসনে প্রার্থী দিলেও ছাড়ের আসনগুলো বাদে আর কোথাও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। যে কারণে ২৫৭টি আসনে তাদের প্রার্থীরা অনেকটা নামকাওয়াস্তেই রয়েছে। এরইমধ্যে দলটির মনোনীত অনেক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন শুরু করেছে ঘোষণা দিয়ে। তবে ছোট দলগুলোর প্রার্থীদের বেশিরভাগই প্রচার-প্রচারণায় নেই। এমনকি অনেকে পোস্টার পর্যন্ত ছাপায়নি বলে জানা গেছে।

ছোট দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনে (১৩৫ আসন) প্রার্থী দেয়া তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ দু’তিন জন নেতা বাদে প্রার্থীদের বাকি সবাই নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে তারা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছেন। একই অবস্থা, বিএনএম, এনপিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ফ্রন্টসহ অনেক দলের। নির্বাচনে ২৭টি দল অংশ নিলেও মূলত ভোটের মাঠে এদের অর্ধেকও নেই। প্রায় এক ডজন ছোট দল প্রচারণা তো দূরে থাক, পোস্টার পর্যন্ত ছাপায়নি। তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের নেতারা যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা ভোট জমজমাট করার চেষ্টা করছেন। প্রচার-প্রচারণা, সংঘাত-সহিংসতা সব কিছুই হচ্ছে তাদের মধ্যে। যে কারণে তেমন নির্বাচনী উত্তাপ নেই কোথাও। পৃষ্ঠা ঢাকার বাইরে শতাধিক আসনে কিছুটা উত্তাপ আছে। এমন কোনো আসন নেই যেখানে আওয়ামী লীগের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে ভাবছে না তা নয়। সংস্থাটি এজন্য জোর দিচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর। নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি মনে করে, অন্তত ভোটকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করা গেলে দেশিয় কিংবা আর্ন্তজাতিক সব মহলেই কথা কথা বলার সুযোগ মিলবে। অন্যথায় বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান এ বিষয়ে গতকাল রবিবার বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের দৃষ্টিতেই অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করলে হবে না। আমাদের দিকে সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমরা যদি আমাদের এই নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য করতে না পারি; তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাংলাদেশের সকল বিষয়; বিশেষ করে আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বাংলাদেশ হয়তোবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকবে।’ নির্বাচন ভবনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির চেষ্টার কমতি নেই। নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক করতে হবে।’

২৫৭ আসনে জাপার প্রার্থী নামকাওয়াস্তে, কয়েক আসনে ভোট বর্জন: আওয়ামী লীগকে হারিয়ে ‘ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর’ থাকার কথা বললেও জাতীয় পার্টি (জাপা) অধিকাংশ আসনে প্রচার ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই। ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের বাইরে মাত্র ৮-১০টিতে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে লাঙ্গল। আরও কয়েকটিতে প্রচার চালাচ্ছে। বাকি আড়াইশ’ আসনে জাপার দৌড় প্রার্থী রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দলটির শীর্ষ নেতারা নিজের আসনের বাইরে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের প্রচারে নামেননি।

জাপা নেতারা খোলাখুলি বলছেন, ভোটের মাঠে অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হওয়ায় ছাড় না পাওয়া আসনের আট-দশটি বাদে সবগুলোতে লাঙ্গলের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এ কারণে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ অন্তত ১১ প্রার্থী আসন ছাড় না পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। প্রার্থিতা বহাল থাকলেও তিনজন ভোট থেকে সরে গেছেন। দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ২৬ আসনের বাইরে লাঙ্গলের অধিকাংশ প্রার্থী ‘ডামি’। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতেই তাদের মাঠে রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, ‘আসন বাটোয়ারার দিনই ২৬ আসনের বাইরে ভোট শেষ। যারা আসন ছাড় পাননি, তারা মনে করছেন জয়ের সুযোগ নেই। তাই ভোটের প্রচারে টাকা খরচ করতে চান না। ২৬ জন ছাড় পাবেন, আর বাকিদের নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে হবে- এভাবে নির্বাচন হয় না। এসব প্রার্থী সরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সুবিধার জন্য ভোটে রাখা হয়েছে।