পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, যারা বিদেশে কাজ করেন তারা আমাদের দেশের মেরুদণ্ডের মতো। প্রবাসীরা একইসাথে দুটি কাজ করেন। তাদের কষ্টের টাকায় দেশ উপকৃত হয় এবং তাদের নিজের পরিবার উপকৃত হয়। তাই আমাদের উচিত প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের আরো বেশি মনোযোগী হওয়া।
স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকালে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের ক্রিস্টাল বল রুমে প্রবাসী দিবসের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা নিম্নআয়ের প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠানোর সময় তাদের জন্য ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি। যারা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে তাদের বেশি সুবিধা দেওয়া উচিত, তাদের সন্তানদের স্কুলে, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বিশেষ অতিথির পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রবাসী দিবস চালুর পেছনে স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের অবদান অনস্বীকার্য।
প্রবাসী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আমরা এখন বিশ্বের ষষ্ঠ। বিশ্বের প্রায় ১৪৭টি দেশে আমাদের প্রবাসীরা রয়েছেন। প্রবাসীদের জন্য আমরা ইতিমধ্যে অনেক সুবিধা চালু করেছি। প্রবাসীদের জন্য আইনটি হালনাগাদ করা হচ্ছে।
শিগগিরই আমরা প্রবাসীদের জন্য ইনস্যুরেন্স চালু করব। বিদেশে আমাদের কনস্যুলার অফিসগুলো প্রবাসীদের সেবা দিতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, কম সুবিধাভোগী প্রবাসীরা অনেকে নিবন্ধনের বাইরে থাকেন। তাদের তালিকায় নিয়ে আসা উচিত। ফিলিপাইন আমাদের চেয়ে কম প্রবাসী পাঠিয়ে অনেক রেমিট্যান্স পাচ্ছেন কারণ তারা যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী পাঠায়।
আমাদেরও উচিত যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে কর্মী পাঠানো। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রবাসীদের দিকে আরো মনোযোগ দেওয়া। একইসঙ্গে প্রবাসীরা যেসব দেশে অবস্থান করছেন সেসব দেশেরও উচিত এসব প্রবাসীদের বেশি করে সম্মান জানানো। কারণ এসব প্রবাসী ছাড়া সেসব দেশও অচল।
২০০৫ সাল থেকে ‘এনআরবি ডে’ বা প্রবাসী দিবস প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে ৩০ ডিসেম্বর নিয়মিত দেশে ও বিদেশে প্রবাসী দিবস উদ্যাপন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি এবারও দুই দিনব্যাপী প্রবাসী দিবস আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুই দিনব্যাপী রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি এবং সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম বলেন, প্রবাসীদের সমস্যা দূরীকরণ ও সম্ভাবনাকে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে আমরা প্রথম ‘এনআরবি ডে’ বা প্রবাসী দিবসের দাবি জানিয়ে আসছি ও নিজেরা ২০১৭ সাল থেকে প্রবাসী দিবস উদযাপন করে আসছি। প্রবাসীদের মর্যাদার সংকট ও দেশের উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়াসে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের জন্য একটি বিশেষ দিবস ঘোষণা ও দিনটি উদ্যাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম।
গত ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৩০ ডিসেম্বর দিনটিকে ‘জাতীয় প্রবাসী দিবস’ উদ্যাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রস্তাবিত ৩০ ডিসেম্বর দিনটির স্বীকৃতিতে আমরা আনন্দিত। এবার সরকারিভাবে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে উদ্যাপিত হচ্ছে ‘প্রবাসী দিবস’।
প্রবাসী দিবসের প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল প্রবাসী দিবসের থিম সং, লোগো উন্মোচন, আলোচনা অনুষ্ঠান। এ দিনে দেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য জাপানের তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল জাপানিজ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক পেমা গিয়ালপোকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রবাসে কাজ করতে যেয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন এমন ছয়জন প্রবাসীর সন্তানদের হাতে শিক্ষা সহায়তা হিসেবে নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়।