মাছ চাষের জন্য ঝিনাইদহে নবগঙ্গা নদীতে দেওয়া সব বাঁধ আপসারণের ব্যবস্থা নিতে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক, হরিণাকুণ্ডু, কোটচাঁদপুর ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে নবগঙ্গা নদী ভরাট, দখল ও নদীতে বাঁধ নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিএস-আরএস জরিপের মাধ্যমে নবগঙ্গা নদীর হরিণাকুণ্ডু, হামিরহাটি, চাঁদপুর, হাকিমপুর ও জয়গ্রাম অংশের সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি এসব অংশের নদী দখলকারীদের তালিকা তৈরি করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। হলফনামা করে ৬০ দিনের মধ্যে সে তালিকা আদালতে দাখিল করতে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জনস্বার্থের এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
ঝিনাইদহে নবগঙ্গা নদী রক্ষায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালযয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ১৮ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নবগঙ্গায় ২ কিমিতে আড়াআড়ি সাত বাঁধ’ শিরোনামে ১০ ডিসেম্বর কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন গণাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ চৌধুরী ও রিপন বাড়ৈ।
আদালতের রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
পরে মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন আইনে নদী সুরক্ষার নির্দেশনা আছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে নবগঙ্গা নদী দখল করছে প্রভাবশালীরা। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। এতে নবগঙ্গা নদী দখল এবং জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহে প্রবহমান নবগঙ্গা নদীর আড়াই কিলোমিটারে সাত জায়গায় আড়াআড়ি মাটির বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর ওই অংশের শ্রেণি পরিবর্তন করে চাঁদপুর বাঁওড় নামকরণ করা হয়েছে। এরপর ইজারা নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত।
নবগঙ্গা নদীটি জেলার হরিণাকুণ্ডুর হামিরহাটি, চাঁদপুর, হাকিমপুর ও সদর উপজেলার জাড়গ্রাম অংশে ইংরেজি অক্ষর ‘ইউ’ আকৃতি ধারণ করে ঝিনাইদহ শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। ইউ আকৃতির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এর মাঝ বরাবর পড়েছে জাড়গ্রাম। জাড়গ্রামের তিন পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিল নদীটি। এখানে নদীর সাত জায়গায় মাটির বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।