ঢাকা ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় বোমার চেয়ে রোগবালাইয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে: জাতিসংঘ

গাজা উপত্যকার মানুষেরা জরুরি মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো সহায়তাটুকুও পাচ্ছেন না। বোমা হামলা, অনাহার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে তাদের নাজেহাল অবস্থা। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধের কারণে যত না মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে রোগবালাইয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, যতটুকু সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের। বলা চলে, প্রাথমিক পর্যায়ের প্রয়োজন মেটানোর জন্যও এটা যথেষ্ট নয়। এখানে যা দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই জরুরি সেবা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় একেবারে ‘বিন্দু বিন্দু’ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, ‘এর প্রভাব খুবই সামান্য।’

গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যে সেখানকার মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এবং ত্রাণ সরবরাহ করতে মানবিক সহায়তা কর্মীরা তৎপর। তারা গাজার মানুষদের কাছে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, গাজার ১৮ লাখ মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে গেছেন। অর্থাৎ প্রতি ৫ জন বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৪ জনই ঘর ছেড়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই শিশু। এসব মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, তাবু কিংবা গাড়ির ভেতর থাকছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘শুধু হাসপাতালই নয়, সব জায়গায় সবারই চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ, তারা অনাহারে আছেন, তাদের বিশুদ্ধ পানির অভাব, তারা গাদাগাদি করে থাকেন। তারা আতঙ্কের মধ্যে থাকায় তাদের অনেক বেশি মানসিক সমর্থন প্রয়োজন। সংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েই যাচ্ছে। আমরা যদি এ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আগের অবস্থায় না ফেরাই এবং মৌলিক প্রয়োজন না মেটাতে পারি, তবে দেখব, বোমা হামলায় যত না মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ রোগে মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালগুলো চালাতে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অবশ্যই জ্বালানি প্রয়োজন।’

হ্যারিস আরও বলেন, গত বছর একই সময়ের তুলনায় এবার ডায়রিয়া এবং অন্য সংক্রামক রোগের হার ৪৫ গুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে শুরু করে উকুনের প্রকোপের মতো সমস্যাগুলো বেড়েছে। তবে চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাপারে মানুষ আশা করেন না বললেই চলে।

ডব্লিউএইচও বলেছে, যুদ্ধবিগ্রহের কারণে কিংবা জ্বালানির অভাবে গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হাসপাতাল ও দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানকার হাসপাতালগুলো প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

২৪ নভেম্বর থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর মেয়াদ ২৭ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কাতারের মধ্যস্থতায় এর মেয়াদ আরও দুই দিন বেড়েছে। আজ বুধবার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় বোমার চেয়ে রোগবালাইয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে: জাতিসংঘ

আপডেট সময় ০১:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩

গাজা উপত্যকার মানুষেরা জরুরি মৌলিক চাহিদা মেটানোর মতো সহায়তাটুকুও পাচ্ছেন না। বোমা হামলা, অনাহার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে তাদের নাজেহাল অবস্থা। এমন অবস্থায় গাজায় যুদ্ধের কারণে যত না মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে রোগবালাইয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়েছিলেন। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, যতটুকু সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ের। বলা চলে, প্রাথমিক পর্যায়ের প্রয়োজন মেটানোর জন্যও এটা যথেষ্ট নয়। এখানে যা দেওয়া হচ্ছে, তা একেবারেই জরুরি সেবা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় একেবারে ‘বিন্দু বিন্দু’ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন, ‘এর প্রভাব খুবই সামান্য।’

গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যে সেখানকার মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এবং ত্রাণ সরবরাহ করতে মানবিক সহায়তা কর্মীরা তৎপর। তারা গাজার মানুষদের কাছে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, গাজার ১৮ লাখ মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় সরে গেছেন। অর্থাৎ প্রতি ৫ জন বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৪ জনই ঘর ছেড়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকই শিশু। এসব মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, তাবু কিংবা গাড়ির ভেতর থাকছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘শুধু হাসপাতালই নয়, সব জায়গায় সবারই চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ, তারা অনাহারে আছেন, তাদের বিশুদ্ধ পানির অভাব, তারা গাদাগাদি করে থাকেন। তারা আতঙ্কের মধ্যে থাকায় তাদের অনেক বেশি মানসিক সমর্থন প্রয়োজন। সংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েই যাচ্ছে। আমরা যদি এ স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আগের অবস্থায় না ফেরাই এবং মৌলিক প্রয়োজন না মেটাতে পারি, তবে দেখব, বোমা হামলায় যত না মানুষ মারা যাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি মানুষ রোগে মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালগুলো চালাতে খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অবশ্যই জ্বালানি প্রয়োজন।’

হ্যারিস আরও বলেন, গত বছর একই সময়ের তুলনায় এবার ডায়রিয়া এবং অন্য সংক্রামক রোগের হার ৪৫ গুণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে শুরু করে উকুনের প্রকোপের মতো সমস্যাগুলো বেড়েছে। তবে চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাপারে মানুষ আশা করেন না বললেই চলে।

ডব্লিউএইচও বলেছে, যুদ্ধবিগ্রহের কারণে কিংবা জ্বালানির অভাবে গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ হাসপাতাল ও দুই-তৃতীয়াংশ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। সেখানকার হাসপাতালগুলো প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

২৪ নভেম্বর থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এর মেয়াদ ২৭ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কাতারের মধ্যস্থতায় এর মেয়াদ আরও দুই দিন বেড়েছে। আজ বুধবার বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে।