ঢাকা ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ: ভয়েস অব আমেরিকা

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ইতোমধ্যে ২৯৮ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, অনিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।

এক প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি দেশটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও বিরোধী দল, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে এবং সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, গত মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বিচারে গ্রেফতারের অসংখ্য ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে।

গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে তারা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও তার মিত্ররা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি অব্যাহত রেখেছে। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর বিরোধী দমন-পীড়নের ফলে প্রতিদিন শত শত বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

দেশে ৬৮টি কারাগার আছে। যার ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৭০০। বর্তমানে তা বন্দিতে উপচে পড়ছে। সেপ্টেম্বরে বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাজার ২০০ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিএনপি বলছে, বন্দিদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ হাজার বিএনপি ও তার সহযোগী দলের রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, সরকার আসলে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। সরকার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আমাদের প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে, যাতে আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। তিনি বলেন, গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির লাখো নেতা-কর্মী বাড়ি থেকে দূরে আত্মগোপনে রয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শর্ত এখন দেশে নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিকদের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা বদিউল আলম মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে আমাদের দুটি বড় দল রয়েছে- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং এই দুটির একটির অনুপস্থিতিতে ভোটাররা একতরফা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে কে জিতবে তা প্রায় পূর্বনির্ধারিত, তাকে সত্যিকারের নির্বাচন বলা যাবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

অনিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ: ভয়েস অব আমেরিকা

আপডেট সময় ০৬:২০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। ইতোমধ্যে ২৯৮ আসনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, অনিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।

এক প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি দেশটির জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও বিরোধী দল, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের পরিস্থিতি নির্বাচনের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে এবং সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।

তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কারাগারগুলো ভরে ফেলছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, গত মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশে গুম, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্বিচারে গ্রেফতারের অসংখ্য ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেছিল। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে।

গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে তারা।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও তার মিত্ররা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি অব্যাহত রেখেছে। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর বিরোধী দমন-পীড়নের ফলে প্রতিদিন শত শত বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।

দেশে ৬৮টি কারাগার আছে। যার ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৭০০। বর্তমানে তা বন্দিতে উপচে পড়ছে। সেপ্টেম্বরে বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাজার ২০০ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিএনপি বলছে, বন্দিদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ হাজার বিএনপি ও তার সহযোগী দলের রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, সরকার আসলে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়। সরকার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আমাদের প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে, যাতে আমাদের দল নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। তিনি বলেন, গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির লাখো নেতা-কর্মী বাড়ি থেকে দূরে আত্মগোপনে রয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের শর্ত এখন দেশে নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিকদের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা বদিউল আলম মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নির্বাচনে আমাদের দুটি বড় দল রয়েছে- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং এই দুটির একটির অনুপস্থিতিতে ভোটাররা একতরফা নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের নির্বাচনে কে জিতবে তা প্রায় পূর্বনির্ধারিত, তাকে সত্যিকারের নির্বাচন বলা যাবে না।