জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২১ নং হলে (পূর্বের শেখ রাসেল হল) র্যাগিংয়ের অভিযোগে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ১৬ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃতদের মধ্যে দুইজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসেবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা কেউই শিবিরের নন।
ছাত্রশিবির কর্মী হিসেবে দাবিকৃত ওই দুইজন শিক্ষার্থী হলেন, তানভীর রহমান মুন ও আব্দুল্লাহ আল সাঈদ।
সোমবার বিকেলে অভিযুক্তদের বহিষ্কারাদেশের পরপরই ছাত্রদল নিয়ন্ত্রিত একটি অখ্যাত পেইজবুক পেইজ (জেইউ মিডিয়া সেল) থেকে সর্বপ্রথম একটি পোস্টের মাধ্যমে তাদেরকে শিবিরের কর্মী হিসেবে দাবি করা হয় । পোস্টটিতে তাদের ছবি চিহ্নিত করা হয় এবং আব্দুল্লাহ আল সাঈদের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ারকৃত কয়েকটি পোস্টের স্ক্রিনশট প্রকাশ করা হয়। তবে সেগুলোতে শিবিরের কোনো কর্মসূচির ছবি ছিল না। একজনের পোস্টে ছিল ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমের একটি ইসলামিক গান সম্পর্কিত পোস্ট শেয়ার করা আর আরেকজনের ছিল ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণের ছবি ও জাকসু ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহর করা নির্বাচনকালীন স্ট্যাটাস শেয়ার করা। শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ ছিলো-“আরিফুল্লাহ আদিব ভাই জিতলেই ডাকসু ও জাকসুর দুই ভিপিই চাটগাইয়া হবে”।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাকর্মীরা পোস্টটি শেয়ার করলে তা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি করে। তবে পোস্টে শুধু শেয়ারকৃত কয়েকটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছাড়া আর অন্যকোনো প্রমাণ ছিল না ।
শেয়ারকৃত পোস্টের স্ক্রিনশট এবং শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল সাঈদ বলেন, আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলাম না। শিবিরের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ ভাই আমাদের জেলার মানুষ, জাকসু নির্বাচনের সময়কালীন তিনি নিজের নির্বাচনী পোস্ট জেলা সমিতির সবাইকে শেয়ার করতে বলেছিলেন, আমি কেবল সেটিই শেয়ার করি। অথচ সেটির স্ক্রিনশট ব্যবহার করে আমাকে শিবির বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাগছাসসহ বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার অনুষ্ঠানে বন্ধুরা মিলে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানকার এক ছবির স্ক্রিনশট উপস্থাপন করে আমাকে শিবিরের কর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। এই মিথ্যা প্রচারণায় আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের ছাত্রশিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন সংগঠনটির শাখা সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, র্যাগিং ইস্যুকে কেন্দ্রে করে শিবিরের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গত রমজানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির গণইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে সেখানে বিভিন্ন মতাদর্শের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সেই প্রোগ্রামে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ছবি তুলে। সেই প্রোগ্রামের ছবি থাকা তাদেরই একজনকে শিবির নেতা হিসেবে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়ে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। বাস্তবে ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।”
জাকসুর জিএস এবং শাখা শিবিরের অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কেউ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। র্যাগিংয়ের বিষয়টি জানার পরপরই আমরা হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তদন্ত ও শাস্তির দাবি জানিয়েছিলাম। প্রশাসনও দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অভিযুক্তদের শিবিরের কর্মী হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তিনি আরও বলেন, এসকল প্রোপাগান্ডা থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্যাগিং নামক এই অপসংস্কৃতিকে নির্মূল করতে হবে। প্রশাসনকেও এবিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে।
এছাড়াও তাদের বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং সহপাঠীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিবিরের কোনো প্রোগ্রামে বা শিবির সংশ্লিষ্ট কোনো কাজে কখনো তাদের দেখা যায়নি ।
এর আগে, গত ১২ অক্টোবর রাতে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী একই বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই প্রশাসন প্রাথমিক তদন্ত সাপেক্ষে পরদিন (১৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একে এম রাশিদুল আলম ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে আগামী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কৃত অন্যান্য শিক্ষার্থীরা হলেন, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, এস এম মাহামুদুন্নবী, আবু সাঈদ, জান্নাতুল আদন, আহমেদ আরেফিন রাতুল, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, মাহমুদুল হাসান ফুয়াদ, আল হাসিব, আব্দুল্লাহ আল নোমান, রাকিবুল হাসান নিবিড়, জাহিদুল ইসলাম ও উশান্ত ত্রিপুরা। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং একই বিভাগের ছাত্র।