ঢাকা ১২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে গাজাবাসীর করুণ ছবি দেখালেন এরদোয়ান

নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আমি আন্তরিকভাবে সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আজই সেই দিন, আজ মানবতার খাতিরে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর দিন। যখন আপনাদের জনগণ গাজায় চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তখন সাহস দেখান, এগিয়ে আসুন।”

ফিলিস্তিনকে যেসব দেশ এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি তাদের উচিত ‘আর দেরি না করে’ পদক্ষেপ নেওয়া। গত ২৩ মাস ধরে গাজায় প্রতি ঘণ্টায় একটি করে শিশু নিহত হয়েছে।’ এরদোয়ান বলেন, ‘এগুলো সংখ্যা নয়, এরা নিষ্পাপ মানুষ।’

প্রতিদিন ২৫ লাখ গাজাবাসী তাদের অবস্থান থেকে স্থানচ্যুত হচ্ছে, অন্যত্র যেতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে বলেও জানান তিনি। গাজার শিশুদের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে এরদোয়ান বলেন, ‘মাত্র দুই বা তিন বছরের ছোট ছোট বাচ্চারা হাত-পা হারাচ্ছে। আজ গাজায় এটি এক সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এরপর এক জীবিত কঙ্কাল হয়ে যাওয়া শিশুর ছবি দেখিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কোন বিবেক এটি সহ্য করতে পারে, কোন বিবেক নীরব থাকতে পারে? যে বিশ্বে শিশুরা ক্ষুধায়, ওষুধের অভাবে মারা যায়, সেখানে শান্তি কীভাবে সম্ভব?’ ইসরায়েলের চলমান ‘গণহত্যার’ প্রমাণ হিসেবে আনাদোলুর তোলা এ ছবি উপস্থাপন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকায়, ইউরোপে, বিশ্বজুড়ে কোথাও যদি কোনো শিশুর হাতে ছোট্ট কাঁটা বিঁধে, তখন বাবা-মায়ের হৃদয় কেঁপে ওঠে। অথচ গাজায় শিশুদের হাত-পা অজ্ঞান না করেই কেটে ফেলতে হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলি, এটাই মানবতার সর্বনিম্ন স্তর। গত শতকে মানব ইতিহাস এমন বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেনি। আমাদের চোখের সামনেই সবকিছু ঘটছে। গণহত্যা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।’

এরদোয়ান বলেন, ‘গাজায় আসলে কোনো যুদ্ধ চলছে না, ইসরায়েলি সেনারা সর্বাধুনিক ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনার অজুহাতে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব কোনো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নয়, বরং নির্বাসন, গণহত্যা ও গণনিধনের নীতি।’

ইসরায়েল শুধু গাজা ও পশ্চিম তীরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন ও লেবাননে হামলা চালিয়ে আঞ্চলিক শান্তিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া কাতারে সাম্প্রতিক হামলার পর ইসরায়েল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, এটি প্রমাণ করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শান্তি চান না কিংবা বন্দিদের মুক্ত করতেও আগ্রহী নন।’

ইসরায়েলি হামলায় নারী-শিশুর অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিবাদের অধিকার, সমতা ও ন্যায়বিচার, সবকিছুই উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করতে হবে, হামলা বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই গণহত্যার জন্য দায়ীদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনে জবাবদিহি করতে হবে এবং এটি অবশ্যই ঘটবে।

সূত্র: আনাদোলু

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘে গাজাবাসীর করুণ ছবি দেখালেন এরদোয়ান

আপডেট সময় ০৮:২৯:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি এ কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এখান থেকে আমি আন্তরিকভাবে সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আজই সেই দিন, আজ মানবতার খাতিরে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর দিন। যখন আপনাদের জনগণ গাজায় চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তখন সাহস দেখান, এগিয়ে আসুন।”

ফিলিস্তিনকে যেসব দেশ এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যারা এখনও স্বীকৃতি দেয়নি তাদের উচিত ‘আর দেরি না করে’ পদক্ষেপ নেওয়া। গত ২৩ মাস ধরে গাজায় প্রতি ঘণ্টায় একটি করে শিশু নিহত হয়েছে।’ এরদোয়ান বলেন, ‘এগুলো সংখ্যা নয়, এরা নিষ্পাপ মানুষ।’

প্রতিদিন ২৫ লাখ গাজাবাসী তাদের অবস্থান থেকে স্থানচ্যুত হচ্ছে, অন্যত্র যেতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে বলেও জানান তিনি। গাজার শিশুদের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে এরদোয়ান বলেন, ‘মাত্র দুই বা তিন বছরের ছোট ছোট বাচ্চারা হাত-পা হারাচ্ছে। আজ গাজায় এটি এক সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

এরপর এক জীবিত কঙ্কাল হয়ে যাওয়া শিশুর ছবি দেখিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কোন বিবেক এটি সহ্য করতে পারে, কোন বিবেক নীরব থাকতে পারে? যে বিশ্বে শিশুরা ক্ষুধায়, ওষুধের অভাবে মারা যায়, সেখানে শান্তি কীভাবে সম্ভব?’ ইসরায়েলের চলমান ‘গণহত্যার’ প্রমাণ হিসেবে আনাদোলুর তোলা এ ছবি উপস্থাপন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকায়, ইউরোপে, বিশ্বজুড়ে কোথাও যদি কোনো শিশুর হাতে ছোট্ট কাঁটা বিঁধে, তখন বাবা-মায়ের হৃদয় কেঁপে ওঠে। অথচ গাজায় শিশুদের হাত-পা অজ্ঞান না করেই কেটে ফেলতে হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলি, এটাই মানবতার সর্বনিম্ন স্তর। গত শতকে মানব ইতিহাস এমন বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেনি। আমাদের চোখের সামনেই সবকিছু ঘটছে। গণহত্যা সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।’

এরদোয়ান বলেন, ‘গাজায় আসলে কোনো যুদ্ধ চলছে না, ইসরায়েলি সেনারা সর্বাধুনিক ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনার অজুহাতে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব কোনো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান নয়, বরং নির্বাসন, গণহত্যা ও গণনিধনের নীতি।’

ইসরায়েল শুধু গাজা ও পশ্চিম তীরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন ও লেবাননে হামলা চালিয়ে আঞ্চলিক শান্তিকেও হুমকির মুখে ফেলেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া কাতারে সাম্প্রতিক হামলার পর ইসরায়েল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, এটি প্রমাণ করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শান্তি চান না কিংবা বন্দিদের মুক্ত করতেও আগ্রহী নন।’

ইসরায়েলি হামলায় নারী-শিশুর অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিবাদের অধিকার, সমতা ও ন্যায়বিচার, সবকিছুই উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করতে হবে, হামলা বন্ধ করতে হবে এবং মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই গণহত্যার জন্য দায়ীদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনে জবাবদিহি করতে হবে এবং এটি অবশ্যই ঘটবে।

সূত্র: আনাদোলু