গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এক অজানা রোগে শতাধিক গরু-ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। সামান্য জ্বরেই মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র খামারিরাসহ কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালেও তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি। এদিকে রোগাক্রান্ত গরু-ছাগল স্থানীয় কসাইয়ের কাছে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া গরুর অজানা রোগাক্রান্ত গরু জবাই করে আক্রান্ত হয়েছে একেই মহল্লার বেশ কয়েকজন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন শিশু-কিশোরসহ সাধারণ মানুষ।
জানাযায়, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের আলুটারী মহল্লার আব্দুর রহমানের পুত্র মতিন মিয়ার একটি গরু অজানা রোগে আক্রান্ত হয়। তিনি দ্রুত স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করলে হাসপাতালের টিম গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আশে। কিন্তু চিকিৎসা নেয়ার পরও গরু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরে। কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনসহ আক্রান্ত গরুকে জবাই করে মাংস বিক্রয় করেন। পরের দিন থেকে কযেকজনের শরীরে অসুস্থ দেখা দিয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিরা হলেন, ওই মহল্লার জবেদ আলীর পুত্র রওশন মিয়া, ফুল মিয়ার পুত্র নুর আলম দেলাবান্দের পুত্র ফতু মিয়া ও আব্দুল গফুর মিয়া,
অসুস্থ আব্দুর গফুর মিয়া জানান, অসুস্থ গরু জবাই করার পরের দিন থেকে হাতে কয়েক স্থানে ফোড়া উঠাসহ হাত ফুলে যায় এবং গায়ে জ্বর বইছে। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে। অসুস্থ ফতু মিয়াও একেই কথা বলেন।
এছাড়া উপজেলার কয়েকজন খামারিরা সাথে কথা হলে তারা জানান, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়ত ছড়িয়ে পড়ছে গবাদী পশুর অজানা রোগ। শরীরে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বাড়া ও কমার ফলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অসুস্থ্ হয়ে মারা যাচ্ছে গবাদী পশু। অনেকে আবার অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রয় করছে গ্রামেই। কেউ আবার কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন স্থানীয় কসাইয়ের কাছে।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার ঝিনিয়া গ্রামের ফারুক মিয়ার ৩টি গরু, বামনজল গ্রামের আলা আমিন মিয়ার ১টি ছাগল, উত্তর ধুমাইটারী গ্রামের মমিনুল মিয়ার ১টি গরু, একেই গ্রামের এরশাদ মিয়ার ১টি গরু ও কালাম মিয়ার ১টি গরু, বামনডাঙ্গার রামদেব গ্রামের ফজলু মিয়ার ২টি গরু, রামধন গ্রামের সাইফুল মিয়ার ১টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। রামধন গ্রামের সাইফুল মিয়া বলেন, দুপুরে গরুর গায়ে জ্বর ছিল, স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে গরুর চিকিৎসা করা হয়। সকাল বেলাই গরুটি মারা গেল। এভাবে আমার ১টি গরু মারা গেছে। মারা যাওয়ার ভয়ে অন্য গরু-ছাগলগুলো পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমার গোয়াল শুন্য।
স্থানীয়রা বলেন, খামারিদের এই বিপদের দিনে প্রাণি সম্পদ অফিসের কাউকে পাওয়া যায় না। অফিসে গেলে তার সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। তারা ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর মিটিং সেমিনার করে সময় পার করছেন।
এদিকে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এতে এনথ্রাক্স (তড়কা) গবাদিপশুর একটি সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে গবাদিপশুর জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গায়ের লোম খাড়া হয়ে থাকা এবং শরীরের কাঁপুনি দেখা যায়। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে ২ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গবাদিপশুর মৃত্যু হয়। মৃত পশুর পেট দ্রুত ফেঁপে (ফুলে) যায় এবং নাক, মুখ, কান, মলদ্বার ও যোনিপথ দিয়ে আলকাতরার মত রক্ত বের হয়। এছাড়া এনথ্রাক্স একটি জুনোটিক রোগ এটি আক্রান্ত পশু থেকে মানুষে সংক্রামিত হয়। তাই এ রোগের লক্ষণ দেখার সাথে সাথে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে এসব বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এনথ্রাক্স (তড়কা) গবাদিপশুর একটি সংক্রামক রোগ এখনো এই উপজেলায় দেখা দেয়নি, তবে আমরা আগাম উপজেলার চারটি ইউনিয়নে এনথ্রাক্সর ভ্যাকসিন দিচ্ছি। অফিসের জনবল কম থাকায় সকল ইউনিয়নে একসাথে দেয়া সম্ভাব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে আমাদের মাঠ পর্যায়ে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ছাগলকে পিপিআর ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। গরু-ছাগল মারা যাওয়ার বিষয় তার কাছে কোনো তথ্য নেই। আর যদি মারা যায় তাহলে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এনে পরীক্ষা করা হবে, তাহলে বোঝা যাবে গবাদী পশুর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।