ঢাকা ১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারের সেই বিদ্যালয়ের হামলায় জড়িত বিএনপি নেতা!

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 58

মৌলভীবাজারের মনুমুখ ইউনিয়নের সাধুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঘটেছে এক ভয়ঙ্কর ঘটনায়। স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাটি হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, দুইজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই হামলার মূল হোতা হচ্ছেন মনুমুখ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি রায়হান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে সাধারণ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি করেছিল। পরীক্ষার পর এ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে উঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সময় রায়হানকে এক বিএনপি নেতার সহযোগিতা ও নির্দেশনায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর আহত হানিফ ও তামিমসহ আরও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হানিফের চাচা সুমন আহমদ বলেন, “পরীক্ষার পর ঝগড়া হওয়ার পর রায়হান মামা পরিচয়ে এসে প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন। আমার ভাতিজা গুরুতর আহত হয়েছে, অন্যদেরও গুরুতর চোট লেগেছে।”

আহতরা হলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহান আহমেদ, সোহাগ মিয়া, আরিয়ান আহমেদ, তানিম আহমেদ, সালেহ আহমেদ, হুসাইন আহমেদ, হাসান আলি, মারুফ মিয়া, জিহান আহমেদ, হাবিব আহমেদ, এস এম হানিফ, তামিম আহমেদ।

আহত শিক্ষার্থীর মা হাছনা বেগম বলেন, “এ ধরনের হামলা কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি অমানবিক আচরণ। যারা পরিকল্পিতভাবে শিশুদের নিরাপত্তা ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু স্কুল ছাত্রদের উপর হামলা নয়, এই ঘটনা রাজনৈতিক প্রভাবে সংঘটিত হয়েছে। বিএনপির সহযোগিতা ও স্থানীয় নেতাদের সাপোর্ট থাকায় হামলাকারী নির্ভয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।

সাধুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিনাশ চন্দ্র দে বলেন, “এই হামলার কারণে কয়েকজন ছাত্র গুরুত্বর আহত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। হামলাকারী এবং তাকে সহযোগিতা করা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”

সাধুহাটি আব্দুল বারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নাল মিয়া বলেন, আমরা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এরশাদ আসনে লাঠি নিয়ে, তার সাথে ছিলেন রায়হান। শিক্ষার্থীরা যে ভাবে মারধরের শিকার হয়েছে তা আমাদের বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি রায়হান বলেন, প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি প্রায় সময় স্কুলে যাই। আমার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে কিংবা এরকম কোন কিছুই আমি জানিনা। আমি এই হামলার সাথে জড়িত নই, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। হামলার কথা শুনে আমি এরশাদের সাথে শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। এখানে মূলত ওই স্কুলের ছাত্ররাই একে অপরের সাথে মারামারি করেছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী মো. মাহবুব বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও, আইন সবাইকে সমানভাবে প্রযোজ্য।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে স্কুলে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তারা মনে করেন, যদি রাজনৈতিক নেতারা শিশুদের উপর হামলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তবে সমাজে শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু বলেন, আমি এ বিষয়ে গতকাল রাত অবগত হয়েছি। আমি ফেসবুকে দেখেছি ঘটনাটা ঘটেছে। আমি সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল মাহমুদ ভাইয়ের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম পাঠিয়েছি তারা মাঠে আছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৌলভীবাজারের সেই বিদ্যালয়ের হামলায় জড়িত বিএনপি নেতা!

আপডেট সময় ০৯:৪৭:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মৌলভীবাজারের মনুমুখ ইউনিয়নের সাধুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঘটেছে এক ভয়ঙ্কর ঘটনায়। স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাটি হয়েছে। এ ঘটনায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, দুইজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, এই হামলার মূল হোতা হচ্ছেন মনুমুখ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি রায়হান।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে সাধারণ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি করেছিল। পরীক্ষার পর এ দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে উঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সময় রায়হানকে এক বিএনপি নেতার সহযোগিতা ও নির্দেশনায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর আহত হানিফ ও তামিমসহ আরও ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হানিফের চাচা সুমন আহমদ বলেন, “পরীক্ষার পর ঝগড়া হওয়ার পর রায়হান মামা পরিচয়ে এসে প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন। আমার ভাতিজা গুরুতর আহত হয়েছে, অন্যদেরও গুরুতর চোট লেগেছে।”

আহতরা হলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহান আহমেদ, সোহাগ মিয়া, আরিয়ান আহমেদ, তানিম আহমেদ, সালেহ আহমেদ, হুসাইন আহমেদ, হাসান আলি, মারুফ মিয়া, জিহান আহমেদ, হাবিব আহমেদ, এস এম হানিফ, তামিম আহমেদ।

আহত শিক্ষার্থীর মা হাছনা বেগম বলেন, “এ ধরনের হামলা কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি অমানবিক আচরণ। যারা পরিকল্পিতভাবে শিশুদের নিরাপত্তা ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু স্কুল ছাত্রদের উপর হামলা নয়, এই ঘটনা রাজনৈতিক প্রভাবে সংঘটিত হয়েছে। বিএনপির সহযোগিতা ও স্থানীয় নেতাদের সাপোর্ট থাকায় হামলাকারী নির্ভয়ে স্কুলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।

সাধুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিনাশ চন্দ্র দে বলেন, “এই হামলার কারণে কয়েকজন ছাত্র গুরুত্বর আহত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। হামলাকারী এবং তাকে সহযোগিতা করা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।”

সাধুহাটি আব্দুল বারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নাল মিয়া বলেন, আমরা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এরশাদ আসনে লাঠি নিয়ে, তার সাথে ছিলেন রায়হান। শিক্ষার্থীরা যে ভাবে মারধরের শিকার হয়েছে তা আমাদের বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিদ্যালয়ে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি রায়হান বলেন, প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি প্রায় সময় স্কুলে যাই। আমার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে কিংবা এরকম কোন কিছুই আমি জানিনা। আমি এই হামলার সাথে জড়িত নই, আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। হামলার কথা শুনে আমি এরশাদের সাথে শুধু দেখতে গিয়েছিলাম। এখানে মূলত ওই স্কুলের ছাত্ররাই একে অপরের সাথে মারামারি করেছে।

মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী মো. মাহবুব বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও, আইন সবাইকে সমানভাবে প্রযোজ্য।

স্থানীয়রা দাবি করছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে স্কুলে নিরাপত্তা জোরদার করা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তারা মনে করেন, যদি রাজনৈতিক নেতারা শিশুদের উপর হামলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তবে সমাজে শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান মজনু বলেন, আমি এ বিষয়ে গতকাল রাত অবগত হয়েছি। আমি ফেসবুকে দেখেছি ঘটনাটা ঘটেছে। আমি সাংগঠনিক সম্পাদক কাজল মাহমুদ ভাইয়ের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম পাঠিয়েছি তারা মাঠে আছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা ব্যবস্থা নেব।