ঢাকা ০৭:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo অবশেষে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় জামাল ভূঁইয়ারা Logo নুরের জন্য দোয়া করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হলেন সাদিক কায়েম Logo জামায়াত নয়, জাকসুর ব্যালট ছাপানোর কোম্পানি বিএনপিপন্থি মালিকের Logo অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপিপন্থি ৩ শিক্ষক Logo জাকসু নির্বাচন বর্জন করল ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল Logo জাকসু নির্বাচন:রবীন্দ্রনাথ হল থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আটক Logo ছাত্রদলের আপত্তিতে হাতে গণনা হবে জাকসুর ভোট Logo লাইফ সাপোর্টে ফরিদা পারভীন, দোয়া চেয়েছে পরিবার Logo জাকসু: ছাত্রদলের ভিপি-এজিএস প্রার্থীর কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা, হট্টগোল Logo আইন বহির্ভূত বিশেষ বিধান বাদ দিয়ে সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি ডিএমটিসিএল কর্মচারীদের

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসুতে ভোট আজ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:১৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 57

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৩ বছর পর। আজ বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

ভোট গ্রহণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোসাদ্দেকুর মমিন বলেন, বহু বছর পর জাকসুতে নির্বাচন হচ্ছে। শুরুতে কিছুটা কম থাকলেও ভোট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেবেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশন গত ২৮ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণার সময় নির্ধারণ করেছিল। এ সময় প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে ও প্যানেলভিত্তিক প্রচারণা চালান।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে—গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, ছাত্রশিবিরের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, ছাত্রদলের নিজস্ব প্যানেল, বামপন্থীদের তিনটি প্যানেল, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি প্যানেল।

এবারের জাকসু নির্বাচনে সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবির।

নির্বাচনে শিবিরের সমর্থিত প্যানেলের নাম ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। তাদের প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে মনোনয়ন পেয়েছে জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও নারী এজিএস পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে স্থান পেয়েছেন ছয়জন নারী শিক্ষার্থী। রয়েছেন জাবিতে অধ্যয়নরত এক দম্পতি ও জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীও। বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’

নির্বাচনে অংশ নিতে ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে গঠিত প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল। জিএস পদে লড়বেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল

জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে একজন নারী রেখে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রদল। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি মো. শেখ সাদী হাসান। জিএস পদে এবারের নির্বাচনের একমাত্র নারী প্রার্থী ও ১৩ নং ছাত্রী হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ ছাড়া এজিএস (পুরুষ) পদে মো. সাজ্জাদুল ইসলাম এবং এজিএস (নারী) পদে আঞ্জুমান আরা ইকরাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’

নির্বাচনে বামপন্থীদের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বিভাজন এর পেছনে মূখ্য কারণ বলে জানা গেছে।

ভিপি প্রার্থিহীন হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সমর্থনে গঠিত আংশিক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। ২৫ সদস্যের হয়ে গঠিত হলেও পর্বরতীতে ছাত্রত্ব না থাকায় বাতিল করা হয়েছে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে। ভিপিহীন এই প্যানেলের নাম ‘সম্প্রীতির ঐক্য’। যেখানে রয়েছে সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, সাতজন আদিবাসী, ছয়জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, তিনজন বৌদ্ধ ও দুজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রার্থী। এই প্যানেলে জিএস পদে রয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শরন এহসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’

ছাত্র ইউনিয়ন (ইমন-তানজিম) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) নিয়ে গঠিত বামপন্থীদের আরেক অংশ শুধুমাত্র পাঁচ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করেছে। ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে গঠিত এই প্যানেল ভিপি প্রার্থী ছাড়াই ঘোষণা করা হয়। এতে জিএস পদে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) জাহিদুল ইসলাম ইমন। এই প্যানেলের বাকি সদস্যরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জন্নাতুল ফেরদৌস, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে সৈয়দ তানজিম আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে তানজিল আহমেদ এবং সহ-সমাজসেবা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) পদে সাদিয়া ইমরোজ ইলা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) আংশিক প্যানেল

জাকসু নির্বাচনে জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) কৃর্তক ৩ সদস্যের আরো একটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়।যেখানে সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী হিসেবে আছেন ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার একাংশের সংগঠক মো. সজিব আহম্মদ জেনিচ। এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে মো. সুমন হোসেন রয়েছেন।

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’

ক্রিয়াশীল সংগঠন ছাড়া এবারের জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে আরো দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত স্বতন্ত্রদের নিয়ে এই প্যানেলের ভিপি পদে লড়ছেন গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৌহিদুল ইসলাম নিবিড় ভূঁঞা। এই প্যানেলে নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়নি কোনো প্রার্থীকে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে স্বতন্ত্রদের আরো একটি আংশিক প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের মুখপাত্র মো. মাহফুজুল ইসলাম মেঘ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাগছাস থেকে বিদ্রোহ করা মো. নাজমুল ইসলাম। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পুরুষ ও নারী পদে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি এই প্যানেলে।

৫৩ বছরে নির্বাচন মাত্র ৯ বার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি।

১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেই নির্বাচনে ঢাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে নেন। ভোটের হার হয়ে যায় ৯০ শতাংশের বেশি।

১৯৭৩ সালের জাকসুর জিএস মোজাম্মেল হককে আল-বেরুনী হলের নিজ কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এর আগে জাকসুর প্রথম জিএস জাসদ ছাত্রলীগের শাহ বোরহানউদ্দিন ১৯৭২ সালে নারায়ণগঞ্জে খুন হন। তাঁরা দুজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মূলত স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কোন্দলে।

১৯৭৩ সালে জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে জিএস প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোজাম্মেলকে গুলি করে হত্যার পর খুনিরা চলে যাওয়ার সময় সর্বহারা পার্টির নামে স্লোগান দিয়েছিল বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন।

১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

অবশেষে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় জামাল ভূঁইয়ারা

দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাকসুতে ভোট আজ

আপডেট সময় ০৭:১৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩৩ বছর পর। আজ বৃহস্পতিবার এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

ভোট গ্রহণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। শিক্ষার্থীরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ আসায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোসাদ্দেকুর মমিন বলেন, বহু বছর পর জাকসুতে নির্বাচন হচ্ছে। শুরুতে কিছুটা কম থাকলেও ভোট নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এখন বেড়েছে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী ভোট দেবেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশন গত ২৮ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারণার সময় নির্ধারণ করেছিল। এ সময় প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে ও প্যানেলভিত্তিক প্রচারণা চালান।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে—গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, ছাত্রশিবিরের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, ছাত্রদলের নিজস্ব প্যানেল, বামপন্থীদের তিনটি প্যানেল, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দুটি প্যানেল।

এবারের জাকসু নির্বাচনে সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছিল ইসলামী ছাত্রশিবির।

নির্বাচনে শিবিরের সমর্থিত প্যানেলের নাম ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’। তাদের প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাবি শাখা শিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে মনোনয়ন পেয়েছে জাবি শাখা শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও নারী এজিএস পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। এই প্যানেলে স্থান পেয়েছেন ছয়জন নারী শিক্ষার্থী। রয়েছেন জাবিতে অধ্যয়নরত এক দম্পতি ও জুলাই আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীও। বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’

নির্বাচনে অংশ নিতে ২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জাবি শাখা। ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ নামে গঠিত প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল। জিএস পদে লড়বেন সংগঠনটির জাবি শাখার সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল

জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে একজন নারী রেখে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রদল। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি মো. শেখ সাদী হাসান। জিএস পদে এবারের নির্বাচনের একমাত্র নারী প্রার্থী ও ১৩ নং ছাত্রী হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ ছাড়া এজিএস (পুরুষ) পদে মো. সাজ্জাদুল ইসলাম এবং এজিএস (নারী) পদে আঞ্জুমান আরা ইকরাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

‘সম্প্রীতির ঐক্য’

নির্বাচনে বামপন্থীদের হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও দুটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বিভাজন এর পেছনে মূখ্য কারণ বলে জানা গেছে।

ভিপি প্রার্থিহীন হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের (অদ্রি-অর্ক) একাংশের সমর্থনে গঠিত আংশিক পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। ২৫ সদস্যের হয়ে গঠিত হলেও পর্বরতীতে ছাত্রত্ব না থাকায় বাতিল করা হয়েছে প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে। ভিপিহীন এই প্যানেলের নাম ‘সম্প্রীতির ঐক্য’। যেখানে রয়েছে সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, সাতজন আদিবাসী, ছয়জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, তিনজন বৌদ্ধ ও দুজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রার্থী। এই প্যানেলে জিএস পদে রয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শরন এহসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি।

‘সংশপ্তক পর্ষদ’

ছাত্র ইউনিয়ন (ইমন-তানজিম) ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) নিয়ে গঠিত বামপন্থীদের আরেক অংশ শুধুমাত্র পাঁচ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা করেছে। ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ নামে গঠিত এই প্যানেল ভিপি প্রার্থী ছাড়াই ঘোষণা করা হয়। এতে জিএস পদে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) জাহিদুল ইসলাম ইমন। এই প্যানেলের বাকি সদস্যরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জন্নাতুল ফেরদৌস, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে সৈয়দ তানজিম আহমেদ, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে তানজিল আহমেদ এবং সহ-সমাজসেবা ও মানব উন্নয়ন সম্পাদক (নারী) পদে সাদিয়া ইমরোজ ইলা।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) আংশিক প্যানেল

জাকসু নির্বাচনে জাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (একাংশ) কৃর্তক ৩ সদস্যের আরো একটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করা হয়।যেখানে সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী হিসেবে আছেন ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার একাংশের সংগঠক মো. সজিব আহম্মদ জেনিচ। এ ছাড়া কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে রোকেয়া আমিন অনুসূয়া এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে মো. সুমন হোসেন রয়েছেন।

‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’

ক্রিয়াশীল সংগঠন ছাড়া এবারের জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে আরো দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ নামে গঠিত স্বতন্ত্রদের নিয়ে এই প্যানেলের ভিপি পদে লড়ছেন গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৌহিদুল ইসলাম নিবিড় ভূঁঞা। এই প্যানেলে নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়নি কোনো প্রার্থীকে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ নামে স্বতন্ত্রদের আরো একটি আংশিক প্যানেল গঠন করা হয়েছে। এই প্যানেলে ভিপি পদে রয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের মুখপাত্র মো. মাহফুজুল ইসলাম মেঘ, সহ-সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বাগছাস থেকে বিদ্রোহ করা মো. নাজমুল ইসলাম। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পুরুষ ও নারী পদে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি এই প্যানেলে।

৫৩ বছরে নির্বাচন মাত্র ৯ বার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। তখন চারটি বিভাগে ২১ জন শিক্ষক ও ১৫০ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বছরই জাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের প্রভাব বেশি ছিল। প্রথম নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা শাহ বোরহানউদ্দিন রোকন। তখনকার দুজন শিক্ষার্থী জানান, গোলাম মোর্শেদ সরাসরি রাজনীতি না করলেও জাসদ ছাত্রলীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পরপর তিন বছর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আর ধারাবাহিকতা থাকেনি। সব মিলিয়ে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে নির্বাচন হয়েছে ৯ বার। তারপর আর হয়নি।

১৯৭৩ সালের জাকসু নির্বাচনটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেই নির্বাচনে ঢাকা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে গিয়ে ব্যালট পেপার নিয়ে নেন। ভোটের হার হয়ে যায় ৯০ শতাংশের বেশি।

১৯৭৩ সালের জাকসুর জিএস মোজাম্মেল হককে আল-বেরুনী হলের নিজ কক্ষে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এর আগে জাকসুর প্রথম জিএস জাসদ ছাত্রলীগের শাহ বোরহানউদ্দিন ১৯৭২ সালে নারায়ণগঞ্জে খুন হন। তাঁরা দুজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মূলত স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কোন্দলে।

১৯৭৩ সালে জাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে জিএস প্রার্থী ছিলেন নুরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মোজাম্মেলকে গুলি করে হত্যার পর খুনিরা চলে যাওয়ার সময় সর্বহারা পার্টির নামে স্লোগান দিয়েছিল বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন।

১৯৮০, ১৯৮১, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১ ও ১৯৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। ১৯৯২ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রদল একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করেছিল। তারা জাকসু ও হল সংসদের ১০৭টি পদের মধ্যে ১০৫টি পেয়েছিল।