ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৬২২ জন নিহত, আহত দেড় হাজারের বেশি Logo বন্যার ধকল সামলানোর আগেই ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান Logo তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল Logo থমথমে পরিবেশ চবি এলাকার, চলছে ১৪৪ ধারা Logo আজ ইশতেহার ঘোষণা করবে ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল Logo মনিরুল সিন্ডিকেটের হিসাবে হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণ! Logo হল ছাড়ার নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাকৃবি’তে শিক্ষার্থীদের ফের বিক্ষোভ Logo কিশোরগঞ্জে জামায়াতে যোগ দিলেন ৪ হিন্দু ধর্মাবলম্বী Logo অনির্দিষ্টকালের জন্য বাকৃবি বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ার নির্দেশ Logo চবিতে সংঘর্ষ নিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টার বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

চবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষ, শতাধিক শিক্ষার্থী আহত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নং গেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, পরে গুরুতর অবস্থায় প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষকও আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

চবির মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত সিনিয়র মেডিকেল অফিসার মো. টিপু সুলতান জানায়, একই দিনে এত শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি নিজেই প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি, গুরুতর আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠাতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়বকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এতে তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

দারোয়ান কর্তৃক মারধরের শিকার শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের ছাত্রী সাফিয়া খাতুন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানা যায়, সাফিয়া রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফিরলে গেট বন্ধ পান। একাধিকবার ধাক্কা দেয়া সত্ত্বেও গেট খোলা হয়নি। পরে তার সহপাঠীরা এসে দারোয়ানকে গেট খুলতে অনুরোধ করলে তিনি তাতেও রাজি হননি। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয়। তবে ভেতরে ঢোকার সময় দারোয়ান শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুই এত লেট করে কেন ঢুকলি?” এ সময় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কাও মারধর করেন।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরা দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিচিত সিনিয়রদের খবর দেন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, পরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষও তীব্র আকার ধারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ঘটনার সময় স্থানীয়দের রামদা, দেশীয় অস্ত্র হাতে ২ নং গেটে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ সময় দুই নং গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা থাকে প্রত্যেক বাসায় গিয়ে হুমকি দেয় স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বলেছেন, “আমাদের বাসার গেট রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে এসে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দু’বার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।”

সেনাবাহিনীর মেজর সাহরিয়ার জানায়, আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছি, আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভির হায়দার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এটা দুঃখজনক বিষয়। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশের সাথে কথা বলছি যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ৬২২ জন নিহত, আহত দেড় হাজারের বেশি

চবিতে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষ, শতাধিক শিক্ষার্থী আহত

আপডেট সময় ০৭:৪১:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে বাসার দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নং গেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, পরে গুরুতর অবস্থায় প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির দুই শিক্ষকও আহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ৩ টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

চবির মেডিকেল সেন্টারে কর্তব্যরত সিনিয়র মেডিকেল অফিসার মো. টিপু সুলতান জানায়, একই দিনে এত শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় আমি আগে কখনও দেখিনি। আমি নিজেই প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছি, গুরুতর আহত কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠাতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়বকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। এতে তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

দারোয়ান কর্তৃক মারধরের শিকার শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের ছাত্রী সাফিয়া খাতুন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানা যায়, সাফিয়া রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বাসায় ফিরলে গেট বন্ধ পান। একাধিকবার ধাক্কা দেয়া সত্ত্বেও গেট খোলা হয়নি। পরে তার সহপাঠীরা এসে দারোয়ানকে গেট খুলতে অনুরোধ করলে তিনি তাতেও রাজি হননি। দীর্ঘক্ষণ চিৎকার-চেঁচামেচির পর একপর্যায়ে গেট খোলা হয়। তবে ভেতরে ঢোকার সময় দারোয়ান শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুই এত লেট করে কেন ঢুকলি?” এ সময় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে ধাক্কাও মারধর করেন।

ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরা দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। পরে ওই শিক্ষার্থী তার পরিচিত সিনিয়রদের খবর দেন। তারা দারোয়ানকে আটকানোর চেষ্টা করলে সে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে আরও শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হন। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, পরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষও তীব্র আকার ধারণ করে এবং শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ঘটনার সময় স্থানীয়দের রামদা, দেশীয় অস্ত্র হাতে ২ নং গেটে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ সময় দুই নং গেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা থাকে প্রত্যেক বাসায় গিয়ে হুমকি দেয় স্থানীয়রা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বলেছেন, “আমাদের বাসার গেট রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। আজকে কাজে বাইরে গিয়েছিলাম, ১১টার দিকে ফিরে এসে দেখি গেট বন্ধ। আমি অনেকবার ধাক্কা দিয়েছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দু’বার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।”

সেনাবাহিনীর মেজর সাহরিয়ার জানায়, আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা শুধু স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছি, আর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভির হায়দার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এটা দুঃখজনক বিষয়। আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশের সাথে কথা বলছি যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।