ঢাকা ০৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হাতিয়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও কোরআন তুলে দিল ছাত্রশিবির Logo বিএনপি জনগণকে ভয় পায় না: ডা. এজেডএম জাহিদ Logo বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না: ওয়াকার-উজ-জামান Logo প্রকল্পগুলোতে এক বছরে সাশ্রয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা Logo কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দুই সহস্রাধিক মানুষ পেলেন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ Logo পদ্মার ভয়াল স্রোতে মুন্সিগঞ্জে নদীভাঙন, বিলীন ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান Logo চরফ্যাশনে শতাধিক এসএসসি শিক্ষার্থীদের এ-প্লাস সংবর্ধনা ছাত্রশিবির Logo প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo যারা নির্বাচন বিলম্ব করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শক্তি নয়: সালাহউদ্দিন Logo বেলকুচিতে মেয়ের জামাইয়ের হাতে শশুর খুন

বিএনপি জনগণকে ভয় পায় না: ডা. এজেডএম জাহিদ

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপি দল পুর্নগঠনের সিলেট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত টিম লিডার প্রফেসর ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন-বিএনপি জনগণ কে ভয় পায় না। জনগণ কে নিয়ে চলার দল বিএনপি। বিএনপি পেছন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ায় বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন,”সবাই নয় দুই চারজন যারা সবসময় ধর্মের কথা বলে। কিন্তু কথা বলেন সময় ধর্ম এবং কথার মাঝে বেমিল পাওয়া যায়। অমিল থাকে। এটি আমাদেরকে কষ্ট দেয়। কিন্তু আমারতো বুঝতে পারি আপনার কথা এবং কথায় আর কাজের মধ্যে মিল থাকতে হবে। কেউ কেউ বলছেন বিএনপি এতো খারাপ, আরে ভাই, আপনি কি আয়নায় আগে নিজের চেহেরাটা দেখেছেন। আপনার সাইজটা কতো, আপনার অবস্থান টা কি? জনগণের মধ্যে আপনার অবস্থান কি? আপনি কি কোনদিন বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব পাওয়ার মতো তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন? বাংলাদেশের মানুষ কি কখনো তাদের দায়িত্ব আপনাদেরকে কখনো দিয়েছিল। আপনারা বিএনপির সমালোচনা করেন? আরে ভাই, বিএনপি তো সেই দল যেই দল স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পালিয়ে যায় নাই। বিএনপি তো দেশের স্বাধীনতার সময় যুদ্ধ করেছে এবং দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। বিএনপি তো সেই দল যেই দল বাকশালের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

আপনারা যখন বলেন, বিএনপি অমুক করেছে- কোথায় ছিলেন? তখন জাহাঙ্গীর নগরে কোনো ছাত্র নেতা একশবার মেয়েদেরকে অপমান করে সেঞ্চুরি করেছিল তখন মুখে আঙুল দিয়ে বসেছিলেন একটা কথাও বলেন নাই। আজকে গাজায় হাজার হাজার ৬২ হাজার মানুষ ইসরায়েলি মেরেছে। কোথায় আপনাদের ইসলাম আপনারা ইসলামের কথা বলেন। রাস্তায় নামেন না। একটা প্রতিবাদ কর্মসুচী গ্রহণ করেন না। আপনারা ইসলামের কথা বলেন। নিজেরা মানুষের পাশে দাঁড়াবেন না। নিজেরা হালুয়া রুটি কোক খাবেন নাচানাচি করবেন এবং আপনাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ভিডিও দেখলে তাজ্জব হতে হয়।

শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি বলেন, ১৫ আগষ্ট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন ছিল। তার সুস্থতার জন্য যারা দোয়া, রোজা, সাদকা, ওমরাহ ও তাওয়াফ করেছেন তাদের প্রতি আমরা দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ডা. জাহিদ হোসেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, আমরা ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদসহ হাজার হাজার ভাইকে হারিয়েছি। অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকাল অনেকেই এমন ভাষায় কথা বলেন, যা গণতন্ত্রের ভাষা নয়; বরং কর্তৃত্ববাদী শাসকের ভাষা। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। ছাত্র-যুবসমাজের ভবিষ্যৎ, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তোলে। বড়লেখায় সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা হবে। মনে রাখবেন, এটা বিএনপির কাউন্সিল। ভোটাভুটি শেষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জিকে গউছ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌরমেয়র মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য ও মৌলভীবাজার-১ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু, একই আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু, বিনা-প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ।

ডা: জাহিদ হোসেন, মুরাদনগর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মুরাদনগরে যখন তিনজন মারা গেল। তখন পত্রিকায় কেউ কেউ লিখে দিলেন, সরকারের পক্ষের এবং বিপক্ষের। ওই তথাকথিত ইসলামিক দলের নেতৃবৃন্দ বলার চেষ্টা করলেন বিএনপি জড়িত। তদন্তে দেখা গেল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জড়িত। চাঁদপুরে ইমামকে সাহেবকে কুপানো হল। সেটা চাপিয়ে দেওয়া হল বিএনপির ওপর। তদন্তে দেখা গেল এটা বিএনপির আশেপাশের কেউ না। কাজেই আপনাদের বলব, দয়া করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আপনারা যখন দেখেছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তির নেতাকর্মীরাও ৩১ দফার ভিত্তিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এ কারণেই আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, কারণ আপনারা জানেন আগামী দিনে জনগণের রায় কোনদিকে যাবে।

জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বায়ক জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন আরো বলেন, আপনারা তো সেই দল যারা স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। আজ আবার জনগণের পক্ষে কথা বলেন। ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমরা চাই, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ছিলাম, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আগামী ফ্রেবুয়ারির মধ্যে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আসবে, ইনশাআল্লাহ আমরা তা অর্জন করব। অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে সে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু এখানেও তারা জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন পেছানোর কথা বলে। আগামী নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এটা বিশ্বাস করেন, কোনও অজুহাতেই নির্বাচন পেঁছানো যাবেনা। তাই বিভেদ নয়, কাদা ছোড়াছুড়ি নয়- জনগণের মনের ভাষা বুঝুন, জনগণের কাছে যান। আমরাও ৩১ দফা নিয়ে গিয়েছি, আপনারাও যান। জনগণ যাকে ভালবাসবে, তাকেই গ্রহণ করবে।

প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশন দুপুর দুইটা থেকে সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণ বিকেলে চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব মুখর পরিবেশে মোট ৭১৫ জন কাউন্সিলর ভোট প্রয়োগ করেন৷ ভোট গননা শেষে সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশন৷ সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান খসরু, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আব্দুল কাদির পলাশ পান ৩৩৫ ভোট। বাতিল ভোট ১৫ টি৷ সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নছিব আলী ৪৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন এস এম শরিফুল ইসলাম বাবলু। তার প্রাপ্ত ভোট ২৫৬। বাতিল ভোট ১৩ টি ও সাংগঠনিক সস্পাদক পদে অধ্যাপক শহীদ খান ৫৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জালাল আহমেদ তালাল ভোট পান ১৪৪ ভোট৷ বাতিল ভোট ১৩ টি৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন – বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ,জেলা বিএনপি আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন ৷

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

হাতিয়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও কোরআন তুলে দিল ছাত্রশিবির

বিএনপি জনগণকে ভয় পায় না: ডা. এজেডএম জাহিদ

আপডেট সময় ০৮:২৭:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপি দল পুর্নগঠনের সিলেট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত টিম লিডার প্রফেসর ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন-বিএনপি জনগণ কে ভয় পায় না। জনগণ কে নিয়ে চলার দল বিএনপি। বিএনপি পেছন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ায় বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন,”সবাই নয় দুই চারজন যারা সবসময় ধর্মের কথা বলে। কিন্তু কথা বলেন সময় ধর্ম এবং কথার মাঝে বেমিল পাওয়া যায়। অমিল থাকে। এটি আমাদেরকে কষ্ট দেয়। কিন্তু আমারতো বুঝতে পারি আপনার কথা এবং কথায় আর কাজের মধ্যে মিল থাকতে হবে। কেউ কেউ বলছেন বিএনপি এতো খারাপ, আরে ভাই, আপনি কি আয়নায় আগে নিজের চেহেরাটা দেখেছেন। আপনার সাইজটা কতো, আপনার অবস্থান টা কি? জনগণের মধ্যে আপনার অবস্থান কি? আপনি কি কোনদিন বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব পাওয়ার মতো তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন? বাংলাদেশের মানুষ কি কখনো তাদের দায়িত্ব আপনাদেরকে কখনো দিয়েছিল। আপনারা বিএনপির সমালোচনা করেন? আরে ভাই, বিএনপি তো সেই দল যেই দল স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পালিয়ে যায় নাই। বিএনপি তো দেশের স্বাধীনতার সময় যুদ্ধ করেছে এবং দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। বিএনপি তো সেই দল যেই দল বাকশালের কবরের ওপর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

আপনারা যখন বলেন, বিএনপি অমুক করেছে- কোথায় ছিলেন? তখন জাহাঙ্গীর নগরে কোনো ছাত্র নেতা একশবার মেয়েদেরকে অপমান করে সেঞ্চুরি করেছিল তখন মুখে আঙুল দিয়ে বসেছিলেন একটা কথাও বলেন নাই। আজকে গাজায় হাজার হাজার ৬২ হাজার মানুষ ইসরায়েলি মেরেছে। কোথায় আপনাদের ইসলাম আপনারা ইসলামের কথা বলেন। রাস্তায় নামেন না। একটা প্রতিবাদ কর্মসুচী গ্রহণ করেন না। আপনারা ইসলামের কথা বলেন। নিজেরা মানুষের পাশে দাঁড়াবেন না। নিজেরা হালুয়া রুটি কোক খাবেন নাচানাচি করবেন এবং আপনাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ভিডিও দেখলে তাজ্জব হতে হয়।

শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি বলেন, ১৫ আগষ্ট দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন ছিল। তার সুস্থতার জন্য যারা দোয়া, রোজা, সাদকা, ওমরাহ ও তাওয়াফ করেছেন তাদের প্রতি আমরা দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

ডা. জাহিদ হোসেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, আমরা ইলিয়াস আলী, দিনার, জুনেদসহ হাজার হাজার ভাইকে হারিয়েছি। অনেকেই গুম হয়েছেন, অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকাল অনেকেই এমন ভাষায় কথা বলেন, যা গণতন্ত্রের ভাষা নয়; বরং কর্তৃত্ববাদী শাসকের ভাষা। কিন্তু বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করে। ছাত্র-যুবসমাজের ভবিষ্যৎ, দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তোলে। বড়লেখায় সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা হবে। মনে রাখবেন, এটা বিএনপির কাউন্সিল। ভোটাভুটি শেষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হব।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জিকে গউছ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌরমেয়র মো. ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য ও মৌলভীবাজার-১ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু, একই আসন থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু, বিনা-প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ।

ডা: জাহিদ হোসেন, মুরাদনগর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মুরাদনগরে যখন তিনজন মারা গেল। তখন পত্রিকায় কেউ কেউ লিখে দিলেন, সরকারের পক্ষের এবং বিপক্ষের। ওই তথাকথিত ইসলামিক দলের নেতৃবৃন্দ বলার চেষ্টা করলেন বিএনপি জড়িত। তদন্তে দেখা গেল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জড়িত। চাঁদপুরে ইমামকে সাহেবকে কুপানো হল। সেটা চাপিয়ে দেওয়া হল বিএনপির ওপর। তদন্তে দেখা গেল এটা বিএনপির আশেপাশের কেউ না। কাজেই আপনাদের বলব, দয়া করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আপনারা যখন দেখেছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। শুধু বিএনপি নয়, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক শক্তির নেতাকর্মীরাও ৩১ দফার ভিত্তিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। এ কারণেই আপনাদের কষ্ট হচ্ছে, কারণ আপনারা জানেন আগামী দিনে জনগণের রায় কোনদিকে যাবে।

জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বায়ক জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ হোসেন আরো বলেন, আপনারা তো সেই দল যারা স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। আজ আবার জনগণের পক্ষে কথা বলেন। ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমরা চাই, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ছিলাম, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আগামী ফ্রেবুয়ারির মধ্যে জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আসবে, ইনশাআল্লাহ আমরা তা অর্জন করব। অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে সে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু এখানেও তারা জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন পেছানোর কথা বলে। আগামী নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এটা বিশ্বাস করেন, কোনও অজুহাতেই নির্বাচন পেঁছানো যাবেনা। তাই বিভেদ নয়, কাদা ছোড়াছুড়ি নয়- জনগণের মনের ভাষা বুঝুন, জনগণের কাছে যান। আমরাও ৩১ দফা নিয়ে গিয়েছি, আপনারাও যান। জনগণ যাকে ভালবাসবে, তাকেই গ্রহণ করবে।

প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশন দুপুর দুইটা থেকে সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোট গ্রহণ বিকেলে চারটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। উৎসব মুখর পরিবেশে মোট ৭১৫ জন কাউন্সিলর ভোট প্রয়োগ করেন৷ ভোট গননা শেষে সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশন৷ সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান খসরু, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আব্দুল কাদির পলাশ পান ৩৩৫ ভোট। বাতিল ভোট ১৫ টি৷ সিনিয়র সহ সভাপতি পদে নছিব আলী ৪৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন এস এম শরিফুল ইসলাম বাবলু। তার প্রাপ্ত ভোট ২৫৬। বাতিল ভোট ১৩ টি ও সাংগঠনিক সস্পাদক পদে অধ্যাপক শহীদ খান ৫৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জালাল আহমেদ তালাল ভোট পান ১৪৪ ভোট৷ বাতিল ভোট ১৩ টি৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন – বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জিকে গউছ,জেলা বিএনপি আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন ৷