ঢাকা ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন আল্লামা সাঈদী : মাহমুদুর রহমান

যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদের বয়ান তৈরি করে শেখ হাসিনার মাধ্যমে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যাকাণ্ড) করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ওপর ভারতের হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ প্রত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের পেছনে ভূরাজনৈতিক পলিটিকস জড়িত। তিনি বলেন, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই হয়ত অনেকে বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে ওই বিচার প্রক্রিয়াকে জুডিশিয়াল কিলিং বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু আমার দেশ সর্বপ্রথম বিচার চলাকালীন সময়েই স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁস করার মাধ্যমে আইনিভাবে প্রমাণ করেছিল ওই বিচার প্রক্রিয়া ছিল একটি জুডিশিয়াল কিলিং। সে কেলেংকারিতে উঠে এসেছিল যে, বিচারের রায় দেশের বাইরে থেকে লিখিয়ে এনে ট্রাইব্যুনালে শুধু পাঠ করে শোনানো হয়েছে। স্কাইপের কথোপকথন ফাঁস একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এটি পরে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত তা করা হয়নি।

আমার দেশ সম্পাদক বলেছেন, আজ সময় এসেছে ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর উচিত হবে মামলাগুলো রিভিউ করা, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ে জড়িত বিচারপতিসহ সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা। স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁসের এ তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে ওই বিচারকে উড়িয়ে দিতে পারেন বলে মনে করি। কেননা পশ্চিমা বিশ্বে ১০০ বছর পরও বিচারিক মামলার রায় রিভিউ হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেছেন, যারা ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়ে জান্নাতে চলে গেছেন, তারা চলেই গেছেন। এরপরও তাদের নির্দোষ প্রমাণ করা জরুরি।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে কারাভোগের স্মৃতিচারণ করে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, তিনি শুধু একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনই ছিলেন না, বাবা হিসেবেও আদর্শ ছিলেন। তিনি জেলে থেকে পরিবারের সদস্যদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ভুক্তভোগী ভাবার কারণ নেই- মন্তব্য করে তিনি বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ও বিচারালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধলে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেককেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার প্রতি সহানুভূতি দেখায়।

কিন্তু তারা জানে না যে, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সিনহা। কেননা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও পরে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সব শেষ হয়ে গেছে মনে করার কোনো সুযোগ নেই। ভারত কখনো এ দেশকে ভালো চোখে দেখে না। তারা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ পেলেই হিন্দুত্ববাদী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাবে। তাই এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের ১১ নেতা এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে জড়িতদের কোনো ক্ষমা নেই। অবিলম্বে বিচারিক গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম বিন সাঈদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম গোলাম আজমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী, অধ্যাপক এবিএম খায়রুল ইসলাম, আবুল কালাম বাশার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মশিউল আলম, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা ফেরদৌস বিন ইসহাক, কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, শাহ ওয়ালি উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস আল-মাদানী, ড. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন আল্লামা সাঈদী : মাহমুদুর রহমান

আপডেট সময় ০৮:৩০:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদের বয়ান তৈরি করে শেখ হাসিনার মাধ্যমে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিং (বিচারিক হত্যাকাণ্ড) করে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ওপর ভারতের হিন্দুত্ববাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ প্রত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের পেছনে ভূরাজনৈতিক পলিটিকস জড়িত। তিনি বলেন, কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই হয়ত অনেকে বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে ওই বিচার প্রক্রিয়াকে জুডিশিয়াল কিলিং বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু আমার দেশ সর্বপ্রথম বিচার চলাকালীন সময়েই স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁস করার মাধ্যমে আইনিভাবে প্রমাণ করেছিল ওই বিচার প্রক্রিয়া ছিল একটি জুডিশিয়াল কিলিং। সে কেলেংকারিতে উঠে এসেছিল যে, বিচারের রায় দেশের বাইরে থেকে লিখিয়ে এনে ট্রাইব্যুনালে শুধু পাঠ করে শোনানো হয়েছে। স্কাইপের কথোপকথন ফাঁস একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল। এটি পরে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত তা করা হয়নি।

আমার দেশ সম্পাদক বলেছেন, আজ সময় এসেছে ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনার। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর উচিত হবে মামলাগুলো রিভিউ করা, ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ে জড়িত বিচারপতিসহ সব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করা। স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁসের এ তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে ওই বিচারকে উড়িয়ে দিতে পারেন বলে মনে করি। কেননা পশ্চিমা বিশ্বে ১০০ বছর পরও বিচারিক মামলার রায় রিভিউ হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেছেন, যারা ওই জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়ে জান্নাতে চলে গেছেন, তারা চলেই গেছেন। এরপরও তাদের নির্দোষ প্রমাণ করা জরুরি।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে কারাভোগের স্মৃতিচারণ করে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, তিনি শুধু একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনই ছিলেন না, বাবা হিসেবেও আদর্শ ছিলেন। তিনি জেলে থেকে পরিবারের সদস্যদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে ভুক্তভোগী ভাবার কারণ নেই- মন্তব্য করে তিনি বলেন, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ও বিচারালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধলে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেককেই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সিনহার প্রতি সহানুভূতি দেখায়।

কিন্তু তারা জানে না যে, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে যারাই সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সিনহা। কেননা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও পরে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা তা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সব শেষ হয়ে গেছে মনে করার কোনো সুযোগ নেই। ভারত কখনো এ দেশকে ভালো চোখে দেখে না। তারা এখনও ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ পেলেই হিন্দুত্ববাদী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাবে। তাই এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের ১১ নেতা এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ে হত্যা করা হয়েছে। এতে জড়িতদের কোনো ক্ষমা নেই। অবিলম্বে বিচারিক গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম বিন সাঈদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা কামাল উদ্দিন জাফরী, জামায়াতের সাবেক আমির মরহুম গোলাম আজমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী, অধ্যাপক এবিএম খায়রুল ইসলাম, আবুল কালাম বাশার, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মশিউল আলম, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা সাদিকুর রহমান, মাওলানা ফেরদৌস বিন ইসহাক, কারি হাবিবুল্লাহ বেলালী, শাহ ওয়ালি উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস আল-মাদানী, ড. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।