বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রশিবির সম্পর্কে অনেক প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে ছাত্রশিবিরকে ট্যাগিং করা হচ্ছে। আমরা এসব ট্যাগিংয়ের জবাব দেবনা, অংশ নিবো না। আমাদের হাতে অনেক কাজ। আমরা আমাদের কাজের দিকে মনোযোগী হবো।
তিনি বলেন, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তাদের ১০ মিনিট বক্তব্যের ৯ মিনিটই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ব্যবহার করে। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল এসব দায় চাপানো, আর ঘায়েল করার রাজনীতির কবর রচনা করার জন্য। আবু সাঈদ, মুগ্ধরা জীবন দিয়েছে এসব বৈষম্য, বিভক্তির রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য। নতুন বাংলাদেশে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ থেকে এদেশকে নিয়ে যাওয়া।
সোমবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এসএসসি, দাখিল ও সমমান পরিক্ষায় এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
শাখা সেক্রেটারির মাইমুনুল হক মামুনের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন শাখা সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ও পরিবেশ বিজ্ঞানী নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা সম্পাদক আলাউদ্দীন আবির, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালি, ছাত্রশিবিরে সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মোহাম্মদ আলি, আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শফিউল আলম প্রমুখ।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশিবির শতকরা ৯০ ভাগ কর্মসূচি ছাত্রদের কল্যাণে গ্রহণ করে থাকে। আজকের এই সংবর্ধনার আয়োজন তারই অংশ বিশেষ। আমরা স্বপ্ন দেখি, এখান থেকেই তৈরী হবে খালিদ বিন ওয়ালিদ, সালাউদ্দিন আয়ুবীরা। যারা শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের গন্ডিকে পেরিয়ে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিবে। আমরা এখন আর শুধু দেশ নিয়ে ভাবি না। আমরা এখন বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখি। আমাদের সীমাবদ্ধতা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। এসব সীমাবদ্ধতাকে আমাদের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৬ জুলাই যখন সারা দেশে ৬জন শহীদ হয়েছে, তখন এককভাবে চট্টগ্রামে শহীদ সংখ্যা ৩জন। আর এই অভ্যুত্থানে সবার আগে স্বাধীন হয়েছিল চট্টগ্রাম। ৪ আগস্টে নিউমার্কেট মোড়ের জাতীয় পতাকা সম্বলিত সেই দৃশ্য সবার মনে আশা জুগিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে মানুষকে পাঠানো হয়েছে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। আর আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের জন্য প্রয়োজন নৈতিকতা। আমাদের দেশে আজ নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষের অনেক অভাব। আমরা বিশ্বাস করি আজকে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন, তারা নৈতিকতা সম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে এবং আগামীদিনে এই দেশের নেতৃত্ব দিবে।
তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আমাদের দেশে সম্পদ এবং সম্ভাবনার কোন অভাব নেই। আমাদের অভাব হলো যোগ্য ও দক্ষ্য লোক। যারা এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিবে। তিনি বলেন, তোমরা সিদ্ধান্ত নাও আগামী ১০ বছর পরে কোথায় পৌছাতে চাও। তোমরা স্বপ্নকে বড় কর, সেভাবে পরিশ্রম কর, দেখবে তোমরাই সফল হবে। তিনি আরো বলেন, তোমাদের আরেকটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তোমরা জালিম হবে, না কি মজলুমের পাশে থাকবে? তোমাদেরকে শহীদ আবরার ফাহাদের পথ অনুসরণ করতে হবে, তার খুনিদের পথ নয়। দেশপ্রেম, নৈতিকতার মানদণ্ডে কোন আপোশ করা যাবে না।
মুহাম্মাদ আলি বলেন, আমাদের সফলতা শুধু মেধার উপর নির্ভরশীল নয়। আমাদের সফলতার জন্য মহান স্রষ্টার রহমত অত্যন্ত জরুরী। আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক মেধাবীদের দেখেছি যারা আমাদের থেকেও মেধাবী হয়ে, ভালো রেজাল্ট করেও পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পায়নি। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ পেয়েছি। একজন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর সবসময়ে আস্থা রাখতে হবে। এসময় তিনি জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমাদের জার্নি এত সহজ ছিল না। মুহুর্মুহু গুলি আর সশস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। এ আন্দোলনে আমরা হারিয়েছি আমাদের অসংখ্য ভাইকে। তবে আল্লাহ তাদের এই ত্যাগকে কবুল করেছেন। আমাদের দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছেন। এই স্বৈরাচার মুক্ত নতুন বাংলাদেশ ধরে রাখতে সকলকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, এসএসসি পরিক্ষার পর কিছু কিছু শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে একধরণের স্থবিরতা দেখা যায়, যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত খারাপ দিক। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে আমাদের চূড়ান্ত সরলতর আগে যেন আমাদের শিক্ষা জীবনে কোন ধরণের স্থবিরতার স্থান না পায়। এসএসসি রেজাল্ট পরবর্তী সময়ে যখন আমরা আমাদের মা-বাবার
ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, আমাদের আজকের আয়োজন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। আমাদের আজকের আয়োজন মেধাবীদের অভিনন্দন জানানোর জন্য। আমরা প্রত্যাশা করি আগামীর প্রজন্ম সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে। এসময় প্রোগ্রাম সফল করার জন্য তিনি সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ শাখার অর্থ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, সাহিত্য সম্পাদক বাহাউদ্দীন, অফিস সম্পাদক শাহেদুল মুরসালিন, প্রচার সম্পাদক জাহিদুল আলম জয় সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।