ঢাকা ০৯:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সময় ভবনে ছিল ৫৯০ শিক্ষার্থী: অধ্যক্ষ Logo যান্ত্রিক ত্রুটিতে মাঝ আকাশ থেকে দাম্মামগামী বিমান ফিরলো ঢাকায় Logo খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি: ডা. জাহিদ Logo বৈষম্যবিরোধী নেতার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে কোনো বাধা নেই: দুদক Logo জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আগস্ট থেকে পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo বিএমডিএ রাজশাহীর কার্যালয়ে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ; তিন দফা দাবি উত্থাপন Logo জামায়াতের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি অভিযোগ তুলে মিছিল, রাতেই ডাকাতি করে আটক যুবদল নেতা Logo সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করবো: প্রধান উপদেষ্টা Logo পুলিশের ৪ ডিআইজিকে বাধ্যতামূলক অবসর Logo কোনো চাঁদাবাজকেই ছাড় দেওয়া হবে না ব‌লে হুঁশিয়ারি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

ড্রোন দিয়ে ভোটের পরিস্থিতি নজরদারি করার চিন্তা- ইসি

 

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন দিয়ে ভোটকেন্দ্র নজরদারির চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিহাসের সেরা নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে এবার সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

এ লক্ষ্যে আরপিওতে সশস্ত্র বাহিনী তথা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম কেমন হবে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগেই পর্যালোচনা সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। ওই পর্যালোচনা সভার জন্য ইতোমধ্যে কার্যপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হজার ৭৫২ জন। এবার তিন হাজার ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে। ফলে নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫ হাজার ৯৮টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে তফসিল এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরে এ খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তফসিল ঘোষণার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যসব বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন ভবনে প্রস্তুতিমূলক নিরাপত্তা সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে সংলাপে বসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা অথবা ড্রোনের সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ইসি মনোনীত কর্তৃপক্ষের বাইরে ওই দিন বহিরাগত কিংবা অননুমোদিত ব্যক্তি যেন ড্রোন ওড়াতে বা এর অপব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধানটি সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা বর্তমানে কমিশনপর্যায়ে পর্যালোচনা চলছে।

এছাড়া নির্বাচনি বিধি ভেঙে কোনো প্রার্থী বা তার কর্মী-সমর্থকরা যদি প্রচার চালায়, এর প্রমাণস্বরূপ গোপনে ছবি তোলা ও ভিডিওধারণ করে তা সংরক্ষণে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অপরাধে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি ইসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, ওই সিদ্ধান্তকে কেউ যেন চ্যালেঞ্জ না করতে পারে। আর নির্বাচনের যে কোনো (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) বার্তা মাঠপর্যায়ে দ্রুততার সঙ্গে প্রচার করা। এর আলোকে ভোটে নিয়োজিত সব কর্তৃপক্ষ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি এ-সংক্রান্ত কোনো খসড়া কার্যপত্র তৈরি হয়নি বলে দাবি তাদের। এ-সংক্রান্ত কপি আমার দেশ-এর কাছে সংরক্ষিত আছে।

প্রস্তাবনার কাঠামোয় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার আগে-পরে, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনপরবর্তী সময়ে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা। আর তফসিল ঘোষণার আগে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং নির্বাচন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া ভোটের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে যেন হয়রানি বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, সেটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে তদারকের সুপারিশ করা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর বিধিসম্মতভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম ও প্রচার চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। একই সঙ্গে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে এতে। বহিরাগত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ভোট এলাকায় অনুপ্রবেশ বন্ধে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা রোধে ভোটের পরদিন থেকে তিনদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে নিয়োজিত রাখার কথা বলা হয়েছে এ প্রস্তাবনায়। এতে আরো বলা হয়, সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ভোটের পর দুদিন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে রাখা এবং নির্বাচনি এলাকার সামগ্রিক নিরাপত্তা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগের সার্বিক দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের ওপর।

প্রস্তাবনায় ভিজিল্যান্স ও অবজারভার টিমের কাজের পরিধির মধ্যে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নির্বাচনে আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন বা লঙ্ঘন বা ভঙ্গ করছেন কি না তা সরেজমিন ঘুরে ঘুরে দেখার সুপারিশ করা হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের দৃশ্য দেখামাত্রই সংশ্লিষ্টদের (ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি, নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট) অবহিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আচরণবিধি গুরুতর লঙ্ঘিত হলে রিটার্নিং অফিসার তাৎক্ষণিক সভা ডেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের আগের দিন নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু করার পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ তদারক কার্যক্রম স্থায়ী হবে ৭২ ঘণ্টা। ভোটের পরিস্থিতি অনুকূল মনে না হলে কিংবা অনভিপ্রেত ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে তা মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা, প্রয়োজনে কমিশনকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে ঘটনা উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আলোকে যাতে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় সাধন করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।

এছাড়া বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও গ্রামপুলিশসহ ১৬ জন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৭ জন। আগামী সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্য বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে।

তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে জননিরাপত্তা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবির সঙ্গে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ খসড়া প্রস্তাবনায় বেশকিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, দুর্বল নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তার কারণে অনেক সময় নির্বাচনি এলাকার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা সম্ভব না হওয়া, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ ব্যাহত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব সৃষ্টি করে প্রাণহানিসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসব বিষয়ে কমিশনকে অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রস্তাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইসির নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা শাখার তৈরি এ প্রস্তাবনার আলোকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে কমিশনে প্রস্তাবনাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তীতে যখনই আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভাটি অনুষ্ঠিত হোক, সেখানে প্রণীত নিরাপত্তা ছক বা কৌশলগুলো কাজে লাগানো হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সময় ভবনে ছিল ৫৯০ শিক্ষার্থী: অধ্যক্ষ

ড্রোন দিয়ে ভোটের পরিস্থিতি নজরদারি করার চিন্তা- ইসি

আপডেট সময় ০৯:৩৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

 

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোন দিয়ে ভোটকেন্দ্র নজরদারির চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতিহাসের সেরা নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে এবার সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

এ লক্ষ্যে আরপিওতে সশস্ত্র বাহিনী তথা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম কেমন হবে, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার আগেই পর্যালোচনা সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। ওই পর্যালোচনা সভার জন্য ইতোমধ্যে কার্যপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হজার ৭৫২ জন। এবার তিন হাজার ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে। ফলে নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫ হাজার ৯৮টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে তফসিল এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সম্ভাব্য সময় ধরে এ খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তফসিল ঘোষণার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যসব বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নির্বাচন ভবনে প্রস্তুতিমূলক নিরাপত্তা সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে সংলাপে বসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা অথবা ড্রোনের সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ইসি মনোনীত কর্তৃপক্ষের বাইরে ওই দিন বহিরাগত কিংবা অননুমোদিত ব্যক্তি যেন ড্রোন ওড়াতে বা এর অপব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধানটি সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা বর্তমানে কমিশনপর্যায়ে পর্যালোচনা চলছে।

এছাড়া নির্বাচনি বিধি ভেঙে কোনো প্রার্থী বা তার কর্মী-সমর্থকরা যদি প্রচার চালায়, এর প্রমাণস্বরূপ গোপনে ছবি তোলা ও ভিডিওধারণ করে তা সংরক্ষণে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অপরাধে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি ইসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, ওই সিদ্ধান্তকে কেউ যেন চ্যালেঞ্জ না করতে পারে। আর নির্বাচনের যে কোনো (ইতিবাচক ও নেতিবাচক) বার্তা মাঠপর্যায়ে দ্রুততার সঙ্গে প্রচার করা। এর আলোকে ভোটে নিয়োজিত সব কর্তৃপক্ষ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে কমিশনের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি এ-সংক্রান্ত কোনো খসড়া কার্যপত্র তৈরি হয়নি বলে দাবি তাদের। এ-সংক্রান্ত কপি আমার দেশ-এর কাছে সংরক্ষিত আছে।

প্রস্তাবনার কাঠামোয় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার আগে-পরে, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনপরবর্তী সময়ে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা। আর তফসিল ঘোষণার আগে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিহ্নিত অপরাধী, সন্ত্রাসী এবং নির্বাচন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া ভোটের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কারো বিরুদ্ধে যেন হয়রানি বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, সেটি খুবই সতর্কতার সঙ্গে তদারকের সুপারিশ করা হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার পর বিধিসম্মতভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম ও প্রচার চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। একই সঙ্গে নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে এতে। বহিরাগত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ভোট এলাকায় অনুপ্রবেশ বন্ধে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা রোধে ভোটের পরদিন থেকে তিনদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে নিয়োজিত রাখার কথা বলা হয়েছে এ প্রস্তাবনায়। এতে আরো বলা হয়, সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ভোটের পর দুদিন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের মাঠে রাখা এবং নির্বাচনি এলাকার সামগ্রিক নিরাপত্তা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিধানে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগের সার্বিক দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে রিটার্নিং অফিসারের ওপর।

প্রস্তাবনায় ভিজিল্যান্স ও অবজারভার টিমের কাজের পরিধির মধ্যে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নির্বাচনে আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন বা লঙ্ঘন বা ভঙ্গ করছেন কি না তা সরেজমিন ঘুরে ঘুরে দেখার সুপারিশ করা হয়েছে। আচরণবিধি ভঙ্গের দৃশ্য দেখামাত্রই সংশ্লিষ্টদের (ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি, নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট) অবহিত করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আচরণবিধি গুরুতর লঙ্ঘিত হলে রিটার্নিং অফিসার তাৎক্ষণিক সভা ডেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটগ্রহণের আগের দিন নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেলের কার্যক্রম শুরু করার পক্ষে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ তদারক কার্যক্রম স্থায়ী হবে ৭২ ঘণ্টা। ভোটের পরিস্থিতি অনুকূল মনে না হলে কিংবা অনভিপ্রেত ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে তা মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা, প্রয়োজনে কমিশনকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে ঘটনা উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আলোকে যাতে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। ভোটকেন্দ্র বা নির্বাচনি এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় সাধন করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।

এছাড়া বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও গ্রামপুলিশসহ ১৬ জন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৭ জন। আগামী সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্য বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে।

তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে জননিরাপত্তা বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, ডিজিএফআই, এনএসআই ও এসবির সঙ্গে নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য সভা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ খসড়া প্রস্তাবনায় বেশকিছু অসুবিধার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, দুর্বল নেটওয়ার্ক, সাইবার নিরাপত্তার কারণে অনেক সময় নির্বাচনি এলাকার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা সম্ভব না হওয়া, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ ব্যাহত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব সৃষ্টি করে প্রাণহানিসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসব বিষয়ে কমিশনকে অগ্রিম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রস্তাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইসির নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা শাখার তৈরি এ প্রস্তাবনার আলোকে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাবে তফসিল ঘোষণার আগে-পরে নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে কমিশনে প্রস্তাবনাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তীতে যখনই আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সভাটি অনুষ্ঠিত হোক, সেখানে প্রণীত নিরাপত্তা ছক বা কৌশলগুলো কাজে লাগানো হবে।