ঢাকা ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ফুল কুুঁড়ি কোম্পানীগঞ্জ শাখার দোয়ার অনুষ্ঠান Logo নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের ২০২৫ সালের জন্য নতুন সভাপতি-আকরাম, সেক্রেটারি-সিফাত Logo ‘কাইন্দেন না’ বলতেই আরও বেশি কাঁদলেন পলক Logo পদত্যাগের ইচ্ছা নেই, সরকার বললে চলে যাবো: শিক্ষা উপদেষ্টা Logo আসামি ছাড়িয়ে নিতে থানায় বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের হাতাহাতি Logo নির্বাচনে কালো টাকার খেলা ও মাস্তানতন্ত্র বরদাশত করা হবে না: জামায়াত আমির Logo বিমান বিধ্বস্ত: ঢাকায় পৌঁছেছে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল Logo এনসিপির এজেন্ডা বিএনপির নামে বদনাম করা: ইশরাক Logo বিমান বিধ্বস্তে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: আইএসপিআর Logo চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শিবিরের বিক্ষোভ

নামজারি খারিজ করতে পাঁচ স্তরে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা (ভূমি) অফিসে চলছে নিরব ঘোষ বানিজ্য। প্রতিটি নামজারি খারিজ করতে ভূমি অফিসের ৫ স্তরে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নামজারি খারিজ এর জন্য মাত্র ১১শ’ ৭০ টাকা ফি নির্ধারিত থাকলেও, প্রকারভেদে প্রতিটি নামজারি খারিজের জন্য দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।
সূত্রে জানা যায়,  একটি সাধারণ নামজারি খারিজের জন্য ইউনিয়ন তহসিলদারকে নূন্যতম  দিতে হয় ১৫০০ টাকা।  যদি টাকা দেয় তাহলে সার্ভার সচল আর না দিলে  অচল।
এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে  নানান অজুহাতে পদে পদে হয়রানি করা হয় ভূমি সেবা প্রত্যাশীদের।

ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মুরাদনগর  উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর অনিয়ম রয়ে গেছে আগের মতোই। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না এখানে।
প্রত্যেকটি খারিজ ও নাম জারিতে শ্রেণিভেদে ৫ থেকে করে ১০  হাজার টাকা নেওয়া হয়। ঘুষ দিলে সহসাই কাজ সম্পন্ন হয়। আর না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। তবে বিশেষ  ব্যাক্তিদের রেফারেন্সে  কিছু খারিজ সরকারী মূল্যে করা হয় বলেও জানাগেছে।

২২ নং টনকী ইউনিয়নের বাইড়া গ্রামের সেবাগ্রহীতা  মোখলেসুর রহমান জানান,  রাসেল মুন্সি নামে এক দালালকে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সে খারিজ না করে  পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন।
পরে  নীজেই  ভূমি অফিসে গিয়ে  নামজারি খারিজের আবেদনের করেন।  প্রস্তাবনা পাঠাতে তাঁর কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করে টনকী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম।  অনেক রিকোয়েস্ট করে  তাঁকে ১৭০০ টাকা দিয়েছেন।

এবিষয়ে টনকী ভূমি অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,খরচের জন্য টাকা রেখেছেন। ৭০ টাকা সরকারি ফি এর বাইরে আবেদন  কিসে  খরচ?  প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান ওই ভূমি কর্মকর্তা।  তিনি আমতা আমতা করে  বলেন, আগামী দিন আসেন  টাকা ফেরত দিয়ে  দিবো।

সম্প্রতি মুরাদনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মানুষের ভোগান্তির তথ্য পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে আকবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, আন্দিকুট ইউনিয়ন ভূমি অফিস,  নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পূর্বধৈইর পূর্ব ও পূর্বধৈইর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিস ।

অফিস সমূহের আওতায় সেবাপ্রার্থীদের অনেকেই জানেন না সরকার নির্ধারিত ফি ও সিটিজেন চার্টারের খবর। এ কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের যোগাসাজসে দালালদের খপ্পরে   পড়েছেন।

এদিকে  আকবপুর,  আন্দিকুট, পূর্বধৈইর পূর্ব,  পূর্বধৈইর পশ্চিম  ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে  স্হানীয় দালালের মাধ্যম অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন অসাধু ভূমিকর্মকর্তারা।  দালালের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তাঁরা।
এই পন্হায় নীজকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে দেদারসে সেবাগ্রহীতাদের  কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল  অর্থ।
আন্দিকুট ভূমি অফিসে দালালী করেন বাচ্চু মিয়া (৫০) ও তাঁর মেয়ে মাহমুদা আক্তার (২০),   আকবপুর ভূমি অফিসে   সাগর (২২), পূর্বধৈইর পূর্ব ভূমি অফিসে রিয়াদ (২৮) ও পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ভূমি অফিসে রাকিব হোসেনের  (২৫)।  এই সকল লোকদের   মাধ্যমে বিভিন্ন অজুহাতে  অতিরিক্ত অর্থ  হাতিয়ে নিচ্ছেন   অফিসের কর্তা ব্যাক্তিরা এমন অভিযোগ  স্হানীয়দের।

এবিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খাঁন বলেন,  ” নামজারি খারিজ  প্রস্তাবনায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কেউ নিয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে। এছাড়াও খারিজ করতে সরকারী ফি এর বাহিরে আমার অফিসে কোনো টাকা লাগেনা”।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ফুল কুুঁড়ি কোম্পানীগঞ্জ শাখার দোয়ার অনুষ্ঠান

নামজারি খারিজ করতে পাঁচ স্তরে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা

আপডেট সময় ১১:৩৫:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা (ভূমি) অফিসে চলছে নিরব ঘোষ বানিজ্য। প্রতিটি নামজারি খারিজ করতে ভূমি অফিসের ৫ স্তরে দিতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নামজারি খারিজ এর জন্য মাত্র ১১শ’ ৭০ টাকা ফি নির্ধারিত থাকলেও, প্রকারভেদে প্রতিটি নামজারি খারিজের জন্য দিতে হয় ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।
সূত্রে জানা যায়,  একটি সাধারণ নামজারি খারিজের জন্য ইউনিয়ন তহসিলদারকে নূন্যতম  দিতে হয় ১৫০০ টাকা।  যদি টাকা দেয় তাহলে সার্ভার সচল আর না দিলে  অচল।
এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে  নানান অজুহাতে পদে পদে হয়রানি করা হয় ভূমি সেবা প্রত্যাশীদের।

ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মুরাদনগর  উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর অনিয়ম রয়ে গেছে আগের মতোই। টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না এখানে।
প্রত্যেকটি খারিজ ও নাম জারিতে শ্রেণিভেদে ৫ থেকে করে ১০  হাজার টাকা নেওয়া হয়। ঘুষ দিলে সহসাই কাজ সম্পন্ন হয়। আর না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। তবে বিশেষ  ব্যাক্তিদের রেফারেন্সে  কিছু খারিজ সরকারী মূল্যে করা হয় বলেও জানাগেছে।

২২ নং টনকী ইউনিয়নের বাইড়া গ্রামের সেবাগ্রহীতা  মোখলেসুর রহমান জানান,  রাসেল মুন্সি নামে এক দালালকে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সে খারিজ না করে  পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেন।
পরে  নীজেই  ভূমি অফিসে গিয়ে  নামজারি খারিজের আবেদনের করেন।  প্রস্তাবনা পাঠাতে তাঁর কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করে টনকী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সহকারী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম।  অনেক রিকোয়েস্ট করে  তাঁকে ১৭০০ টাকা দিয়েছেন।

এবিষয়ে টনকী ভূমি অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,খরচের জন্য টাকা রেখেছেন। ৭০ টাকা সরকারি ফি এর বাইরে আবেদন  কিসে  খরচ?  প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান ওই ভূমি কর্মকর্তা।  তিনি আমতা আমতা করে  বলেন, আগামী দিন আসেন  টাকা ফেরত দিয়ে  দিবো।

সম্প্রতি মুরাদনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মানুষের ভোগান্তির তথ্য পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে আকবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, আন্দিকুট ইউনিয়ন ভূমি অফিস,  নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পূর্বধৈইর পূর্ব ও পূর্বধৈইর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি অফিস ।

অফিস সমূহের আওতায় সেবাপ্রার্থীদের অনেকেই জানেন না সরকার নির্ধারিত ফি ও সিটিজেন চার্টারের খবর। এ কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের যোগাসাজসে দালালদের খপ্পরে   পড়েছেন।

এদিকে  আকবপুর,  আন্দিকুট, পূর্বধৈইর পূর্ব,  পূর্বধৈইর পশ্চিম  ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে  স্হানীয় দালালের মাধ্যম অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন অসাধু ভূমিকর্মকর্তারা।  দালালের মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন তাঁরা।
এই পন্হায় নীজকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে দেদারসে সেবাগ্রহীতাদের  কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল  অর্থ।
আন্দিকুট ভূমি অফিসে দালালী করেন বাচ্চু মিয়া (৫০) ও তাঁর মেয়ে মাহমুদা আক্তার (২০),   আকবপুর ভূমি অফিসে   সাগর (২২), পূর্বধৈইর পূর্ব ভূমি অফিসে রিয়াদ (২৮) ও পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ভূমি অফিসে রাকিব হোসেনের  (২৫)।  এই সকল লোকদের   মাধ্যমে বিভিন্ন অজুহাতে  অতিরিক্ত অর্থ  হাতিয়ে নিচ্ছেন   অফিসের কর্তা ব্যাক্তিরা এমন অভিযোগ  স্হানীয়দের।

এবিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খাঁন বলেন,  ” নামজারি খারিজ  প্রস্তাবনায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কেউ নিয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে। এছাড়াও খারিজ করতে সরকারী ফি এর বাহিরে আমার অফিসে কোনো টাকা লাগেনা”।