হাতকড়া পরিয়ে ফাইয়াজকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে (১৭) অব্যাহতি পেয়েছে। সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় দাখিল করা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১৫ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক অব্যাহতির এই আদেশ দেন।
আজ রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাঈন উদ্দিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বছর ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন নিহত হন। এ সময় পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাঁকে পিটিয়ে হত্যার পর ফুটওভার ব্রিজে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। মোটরসাইকেলটি চুরি হয়।
এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬ নং আসামি হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে মাতুয়াইলের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এই কিশোরকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা এবং রিমান্ড মঞ্জুর তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সমালোচনার মুখে আদালত তাঁকে জামিন দেন।
গত ১৩ জুলাই সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় দাখিল করা অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ কিশোর ফাইয়াজের অব্যাহতি চায়। ১৫ জুলাই অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত তাকে অব্যাহতি দেন।
এর মাধ্যমে নতুন আইনে দেশে প্রথম কাউকে তদন্তাধীন মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোল্লা মো. খালিদ হোসেন জানান, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সঙ্গে ফাইয়াজের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যেহেতু মামলাটির তদন্ত শেষ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, এ কারণে নতুন আইনে ফাইয়াজের অব্যাহতি চেয়ে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলবে।
গত ১০ জুলাই জারি করা অধ্যাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ (এ) ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, এসপি বা কোনো জেলার এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে তিনি যৌক্তিক মনে করলে তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর সেই মামলার তদন্তের ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিতে পারবেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর বিবেচনাবলে নিরপরাধ ও যার বিরুদ্ধে ওই অপরাধের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই, তাঁদের বিচার পূর্ববর্তী ধাপেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন।
অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ, ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ, ফরেনসিক পরীক্ষা ও বিচার্য বিষয় প্রমাণের জন্য অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় যাচাই করা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু আদালত ইতিমধ্যে এ মামলার আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার পর তাকে এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিলে সে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে সেই কিশোর পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছে মর্মে তদন্তে জানা যায়। এ ক্ষেত্রে তার চাপমুক্তভাবে বেড়ে ওঠা, স্বাভাবিক পরিবেশে পড়াশোনা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।