আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ । দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য ঘিরে নির্বাচনী জোট নিয়ে নতুন করে আলোচনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তার ওই বক্তব্যের পর বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সম্ভাব্য জোট গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। যদিও আপাতত এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন এনসিপি নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে জোটে যাওয়ার চিন্তা নেই তাদের। বরং বিএনপিবিরোধী রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে চান তারা।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার বলছে , নির্বাচনী জোট নিয়ে এখনই কিছু ভাবছেন না তারা। জোটের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত থাকলেও তাতে পা না বাড়ানোর পক্ষেই নীতিনির্ধারকরা। এ ছাড়া আরেক বড় দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও নাগরিক পার্টির ভোটের মাঠে জোট বাঁধার সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ কারও জোটের সঙ্গী হওয়ার চিন্তা আপাতত নেই তাদের। তবে ছোট দলগুলোর সুযোগ থাকবে এনসিপির সঙ্গে জোট গঠনে আলোচনার। তাদের কোনো কোনো নেতা এককভাবে নির্বাচন করা এবং সরকার গঠন করার সক্ষমতার কথাও জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়, এনসিপির জন্য দরজা খোলা’—সালাহউদ্দিন আহমেদের এমন বক্তব্য ঘিরে নতুন করে আলোচনায় আসে বিএনপি-এনসিপি জোটের বিষয়টি। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এনসিপির সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন বিএনপির এই নেতা।
এদিকে এক দিন আগেই জুলাই পদযাত্রার কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনায় এক পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে বিএনপির সঙ্গে জোটের আলোচনা নাকচের ইঙ্গিত দেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) ভেবেছিল দুই থেকে তিনটি আসন দেখিয়ে, ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে কিনে নেবে। কিন্তু যারা বিপ্লবের শক্তি, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে, তাদের কেনার সাধ্য বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়নি।’ দৃশ্যত তিনি বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের জোট নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের পাল্টায় এসব কথা বলেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির এমন ঘোষণা কোনো কৌশল হতে পারে। তবে আমাদের এ ধরনের কোনো ভাবনা নেই। বিএনপির সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে কোনো আলোচনা নেই। কয়েকটা আসনের জন্য বিএনপির পেছনে গিয়ে নিজস্ব রাজনীতি নষ্ট করা এবং দেশ পুনর্গঠনের লড়াই থেকে সরে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই আমাদের। এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গেও জোট করার সম্ভাবনা নেই।’
একই ধরনের তথ্য জানান দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি মূলত এনসিপিকে নিয়ে গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) দিয়ে তার নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেছে। তাতে জনমনেও এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সম্ভাবনা আছে এবং বড় ধরনের বিরোধিতা এড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এরই মধ্যে এমন কিছু যে হচ্ছে না, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।’
এর আগে গত ২২ জুন নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন আবেদন জমার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘পার্লামেন্ট (জাতীয় সংসদ) এখন খালি রয়েছে। এই পার্লামেন্টে সংস্কার কমিশন বা ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৪০০ আসন হবে। এসব আসনের মধ্যে ৩০০ আসন এনসিপির ঘরে থাকবে। এনসিপি পার্লামেন্টে জাতীয় সরকার গঠন করবে।’