গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সাতাইশ মধ্য পাড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছাত্রদল নেতার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ৫১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মিরাজ খানের বাবা মো. সাত্তার খান (৫০) এ ঘটনায় গত ১১ জুলাই রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, সাত্তার খান সাতাইশ মৌজায় ক্রয়কৃত চার শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু ১১ জুলাই সকালে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তার জমিতে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন—আব্দুর রশিদ (৫০), সাজিদ (২২), সাগর (২০), সাত্তার মিয়া (৪৬), মোজাম্মেল লস্কর (৪৫), শান্ত (২০), বজলুর রহমান (৫০), দিন আমীন (২৫), জোবায়ের (২৭), রিয়াদ (২২), জোনায়েদ (২৩) ও মোবারেক (৫৫)। সবাই সাতাইশ মধ্য পাড়ার বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী সাত্তার খান বলেন, “অভিযুক্তরা জোরপূর্বক আমার জমির বাউন্ডারির গেটের তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এখন ওই জমিতে ঢুকলে তারা খুনের হুমকি দিচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছি।”
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আব্দুর রশিদ দাবি করেন, “এই জমি আমি ২০০৭ সালে ক্রয় করেছি। বর্তমানে এ নিয়ে পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে।”
তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে আরও একাধিক জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে নাম থাকা সাত্তার মিয়া তিনি ৫১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবং মোজাম্মেল লস্কর স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাত্তার মিয়া বলেন, “আপনারা সরজমিনে গিয়ে দেখে আসুন, তারপর তদন্ত করুন।”
পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভুক্তভোগীর জমির মূল গেটের পুরনো তালা ভেঙে নতুন তালা লাগানো হয়েছে। বিষয়টি আশপাশের অবস্থানরন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাও নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগের পর পর বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মিরাজের বাড়ীর তালা ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির প্রতিবাদে মিরাজের সহযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিরন মুঠোফোনে জানান, বলেন, “ছাত্রদল নেতা মিরাজ খাঁন আওয়ামী স্বৈরাচারের শাসন আমলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ৬৪ দিন কারাবরণ করেন। তিনি জেলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা লিটন মাহাজনের নেতৃত্বে অস্ত্রের মুখে তার বাবা ও চাচাকে মারধর করে জমি দখলের চেষ্টা চালানো হয়। এমনকি তাদের ২ দিন জেলেও পাঠানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই জমি নিয়ে বিরোধের জেরে মিরাজের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অপবাদ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করা হয়। এখন ফেরার অবস্থায় দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নিয়ে ফের দখলের চেষ্টা করছে। আমরা চাই, পুলিশ সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনুক। দখলবাজ যেই হোক, সে দলের কেউ নয়।”
এবিষয়ে একাধিকবার টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক প্রভাষক বশির উদ্দিনকে মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, “অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”