সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত বছর(৩ জুলাই ২০২৪) আজকের দিনটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
এদিন বিক্ষোভ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। এই দিনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন শুরু করেন। ঢাকার বাইরে সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করা হয়।
৩ জুলাই দুপুরে শাহবাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একত্রিত হন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ঢাবিসহ রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে অংশ নেন। তারা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড় এবং মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ আসে। তারা এ সময় ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটা নিপাত যাক, মেধাবীরা নিয়োগ পাক’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৫টায় শাহবাগ থেকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা সেখানে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এদিকে রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন আটকে রেললাইন অবরোধ করে রাখেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রেললাইন অবরোধ করা হয়। পাশাপাশি সড়কও অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি স্থানে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন।
এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি উল্লেখ করেন।
তাদের দাবি ছিলো ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
অবরোধস্থলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রুমন জানান, মুক্তিযোদ্ধারা কোনো বৈষম্য চাননি। সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখনোই সবার অধিকার নিশ্চিত করে না। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনারা ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়ান।
এই দিনে বাকৃবির তিন শতাধিক শিক্ষার্থী দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সেখান থেকে আব্দুল জব্বার মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি আব্দুল জব্বার মোড়ে পৌঁছলে ওই সময় ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে রেললাইন অবরোধ করে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর আবার ট্রেন চলাচল সচল হয়।
এ ছাড়াও জুলাই বিপ্লবের অন্যতম শহীদ আবু সাঈদের স্মতিবিজড়িত ক্যাম্পাস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পূর্বের পরিপত্র বহাল রেখে কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা ও সমাবেশ করেন। সকালে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিলটি বের হয়ে ঢাকা-কুড়িগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন মডার্ন মোড় প্রদক্ষিণ করে ২ নম্বর গেটে গিয়ে সমাবেশ করে।
এ ছাড়াও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
৩ জুলাই কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২০১৮ সালে সরকার ঘোষিত পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা। সকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে ১ নম্বর গেট পর্যন্ত শোডাউন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
এ ছাড়াও জুলাইয়ের এই দিন সকালে কাফনের কাপড় পরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা ঢাকা-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন। ববির গেটসংলগ্ন মহাসড়ক সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া শত শত যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন আটকা পড়ে।
কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে এই দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, এক্স, ইনস্টাগ্রাম ও বিভিন্ন ব্লগে ব্যাপক লেখালেখি শুরু হয়। অনেকেই কোটা প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। পাশাপাশি স্ট্যাটাসে বিভিন্ন ছবি অ্যাড করতে দেখা যায়।