ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

থানায় অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাথমিক তদন্ত বিধান করতে যাচ্ছে সরকার

থানায় কোনো অভিযোগ দায়েরের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। এই তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পেলে পুলিশ তা এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবে না।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সরকার দেশে প্রচলিত ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসির) ১৫৪ ধারার সংশোধন করে এমন বিধান করতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া কোনো মামলার তদন্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআরপিসির ১৭৩ ধারার সংশোধন করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। আপাতত সিআরপিসির ১৫৪ ও ১৭৩ ধারা সংশোধনে একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে তা কেবিনেটে (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে) পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কিছু বিধান আনছি। এখনই সব খুলে বলছি না, তবে এতটুকু বলতে পারি, মিথ্যা মামলা ও অযাচিত গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। অন্তত কিছুটা হলেও এটি কমবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা-ই করি না কেন, কিছু লোক বলে আমরা পুলিশকে আরও ক্ষমতা দিচ্ছি। আর যদি আমরা না করি, তাহলে লোকে বলে, আমরা কিছুই করছি না। তাই আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি।’ রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাক্সেসিবল অ্যান্ড ইফেক্টিভ ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমস’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জানা গেছে, দেশে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এসব মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর অনেক নিরীহ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতেও অনেককে এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলায় ‘ইচ্ছামতো’ আসামি করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ঢালাওভাবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এই পটভূমিতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানির বিষয়টি নতুনভাবে সামনে এসেছে। সমালোচনার মুখে আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিথ্যা মামলা নিয়ে বিব্রত উল্লেখ করে একাধিকবার বক্তব্য রেখেছেন। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে দফায় দফায় নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা উপেক্ষিত হয়েছে। সে কারণে সরকার দ্রুত সিআরপিসির দুটি ধারা (১৫৪ ও ১৭৩) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

ট্যাগস :

বড় বড় সমাবেশ করে জাতির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবেন না

থানায় অভিযোগ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাথমিক তদন্ত বিধান করতে যাচ্ছে সরকার

আপডেট সময় ০৯:২১:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

থানায় কোনো অভিযোগ দায়েরের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। এই তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পেলে পুলিশ তা এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবে না।

মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে সরকার দেশে প্রচলিত ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসির) ১৫৪ ধারার সংশোধন করে এমন বিধান করতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া কোনো মামলার তদন্ত চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআরপিসির ১৭৩ ধারার সংশোধন করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া গেলে ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনালের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। আপাতত সিআরপিসির ১৫৪ ও ১৭৩ ধারা সংশোধনে একটি খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করে তা কেবিনেটে (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে) পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় উপদেষ্টা পরিষদের মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করে অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কিছু বিধান আনছি। এখনই সব খুলে বলছি না, তবে এতটুকু বলতে পারি, মিথ্যা মামলা ও অযাচিত গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। অন্তত কিছুটা হলেও এটি কমবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা-ই করি না কেন, কিছু লোক বলে আমরা পুলিশকে আরও ক্ষমতা দিচ্ছি। আর যদি আমরা না করি, তাহলে লোকে বলে, আমরা কিছুই করছি না। তাই আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি।’ রাজধানীর একটি হোটেলে ‘অ্যাক্সেসিবল অ্যান্ড ইফেক্টিভ ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমস’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জানা গেছে, দেশে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এসব মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর অনেক নিরীহ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। অভিযোগ উঠেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতেও অনেককে এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলায় ‘ইচ্ছামতো’ আসামি করা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেড় হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ঢালাওভাবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এই পটভূমিতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানির বিষয়টি নতুনভাবে সামনে এসেছে। সমালোচনার মুখে আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিথ্যা মামলা নিয়ে বিব্রত উল্লেখ করে একাধিকবার বক্তব্য রেখেছেন। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে দফায় দফায় নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা উপেক্ষিত হয়েছে। সে কারণে সরকার দ্রুত সিআরপিসির দুটি ধারা (১৫৪ ও ১৭৩) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।