২০২১ সালে দেশের ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছিল দলিলের অনলাইন নিবন্ধন বা ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম। সরকারের এই উদ্যোগটি ছিল ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, দ্রুততা এবং নাগরিক সেবায় প্রযুক্তিনির্ভরতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া এক বড় পদক্ষেপ। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির আর কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি চোখে পড়ে না। কার্যক্রমটি এখন কার্যত স্থবির।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো জানিয়েছে, প্রকল্পটি শুরুর পর পর্যাপ্ত লজিস্টিকস সাপোর্ট, প্রশিক্ষিত জনবল, মানসম্মত সার্ভার ও ওয়েবসাইট উন্নয়নের অভাবে কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ই-রেজিস্ট্রেশন ওয়েবসাইটটি তেমন ব্যবহারযোগ্য নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে ব্যবহারকারীদের।
এ বিষয়ে এক সাব-রেজিস্ট্রার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,
আমাদের অনেক অফিসেই প্রয়োজনীয় কম্পিউটার, স্ক্যানার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী নেই। ফলে ই-রেজিস্ট্রেশন চালু করেও চালাতে পারছি না। অথচ এটি পুরো ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারতো।
ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলিল নিবন্ধনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি প্রক্রিয়া যুক্ত করা গেলে ভূমি মালিকানা নিয়ে বিরোধ অনেকাংশে কমে যেত। একইসাথে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, কাগজপত্র জালিয়াতি এবং ফাইল আটকে থাকার অভিযোগও অনেকটাই হ্রাস পেত।
ই-রেজিস্ট্রেশন ও ই-নামজারি একসাথে চালু করা গেলে জমি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা অর্ধেকে নেমে আসবে। এতে নাগরিক হয়রানি যেমন কমবে, তেমনি সরকারি রাজস্বও বাড়বে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশ ইতোমধ্যে দলিল নিবন্ধন ও নামজারি একীভূতভাবে অনলাইনে সম্পন্ন করছে। ভারতের কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্র রাজ্যে দলিল নিবন্ধনের সঙ্গে সঙ্গে নামজারির আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভূমি অফিসে পাঠানো হয়, যা বাংলাদেশেও সম্ভব বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞ ও সচেতন নাগরিকদের মতে, এখনই প্রয়োজন— ই-রেজিস্ট্রেশন সাইটের কারিগরি উন্নয়ন
,রেজিস্ট্রার অফিসে উচ্চগতির ইন্টারনেট, হার্ডওয়্যার ও প্রশিক্ষণ এবং রেজিস্ট্রেশন ও নামজারি প্রক্রিয়া একীভূত করা।সচেতনতা বৃদ্ধিতে নাগরিক সেবা কেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক চালু করা।