ঢাকা ০৭:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পরনিন্দা ও অপরের সমালোচনা মানবজাতির এক নিকৃষ্ট অভ্যাস। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনাই হলো পরনিন্দা বা পরসমালোচনা।

 

ঢাকাভয়সে ডেক্স: শরিয়তের পরিভাষায় এ অনৈতিক চর্চাকে বলা হয় ‘গিবত’। যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, সেই দোষ যদি তার মধ্যে বাস্তবেই থাকে, তাহলে তা গিবত হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা হবে অপবাদ—যা গীবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত।

গিবত শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নয়; ইশারা-ইঙ্গিত কিংবা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও গিবত হতে পারে। এমনকি গিবত শ্রবণ করাও গিবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। উভয়ই সমান অপরাধ। জীবিত কিংবা মৃত, উভয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেই গিবত করা ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এটি শুধু একটি জঘন্য গুনাহ নয়, বরং মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাত—দুই জগতেরই ক্ষতি করে। কোরআন ও হাদিসে গীবতের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ’
—(বুখারি, হাদিস: ২২৮৭)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘ধ্বংস হোক প্রতিটি পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারী। ’
—(সুরা হুমাযাহ, আয়াত: ১)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের দোষ-ত্রুটি খোঁজ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ’
—(সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গিবত আজ একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট সর্বত্র পরনিন্দার ছড়াছড়ি। এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি এ অভ্যাসে লিপ্ত নন।

আল্লাহ তাআলা এমন গিবতকারী থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি আনুগত্য করো না এমন কাউকে, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছনাকারী, পরনিন্দাকারী, চোগলখোর, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী ও পাপিষ্ঠ। ’
—(সুরা ক্বালাম, আয়াত: ১০-১৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি কিংবা কোনো বিষয়ে জুলুম করে থাকে, সে যেন দুনিয়াতেই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়—সেই দিনের আগেই, যেদিন কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে, সেখান থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কর্তন করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে, তাহলে মজলুমের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। ’
—(বুখারি, হাদিস: ২২৮৭)

গীবতের মূল কারণ অহংকার, ক্রোধ, সম্মানপ্রিয়তা কিংবা হিংসা হতে পারে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, গিবত ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ঘৃণীত ও জঘন্য অপরাধ। ইসলামের শিক্ষা হলো—কারো দোষ চোখে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা না করে, গোপনে তাকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা। পরনিন্দা নয়, বরং সংশোধনের উদ্যোগই একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

গিবত থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। পরনিন্দার পরিবর্তে একজনকে শুধরে দেওয়াই হলো প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে গীবতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দিন।

 

ঢাকাভয়সে২৪/সাদিক

ট্যাগস :

ইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে বিশৃঙ্খলা: সেনবাগ ছাত্রদল সভাপতি বহিষ্কার

পরনিন্দা ও অপরের সমালোচনা মানবজাতির এক নিকৃষ্ট অভ্যাস। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ বর্ণনাই হলো পরনিন্দা বা পরসমালোচনা।

আপডেট সময় ১২:০৯:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

 

ঢাকাভয়সে ডেক্স: শরিয়তের পরিভাষায় এ অনৈতিক চর্চাকে বলা হয় ‘গিবত’। যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, সেই দোষ যদি তার মধ্যে বাস্তবেই থাকে, তাহলে তা গিবত হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে তা হবে অপবাদ—যা গীবতের চেয়েও নিকৃষ্ট ও ঘৃণীত।

গিবত শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নয়; ইশারা-ইঙ্গিত কিংবা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও গিবত হতে পারে। এমনকি গিবত শ্রবণ করাও গিবত করার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। উভয়ই সমান অপরাধ। জীবিত কিংবা মৃত, উভয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেই গিবত করা ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এটি শুধু একটি জঘন্য গুনাহ নয়, বরং মানুষের ঈমান ও আমল ধ্বংস করে দেয়। দুনিয়া ও আখিরাত—দুই জগতেরই ক্ষতি করে। কোরআন ও হাদিসে গীবতের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা অনুমান ও ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ’
—(বুখারি, হাদিস: ২২৮৭)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘ধ্বংস হোক প্রতিটি পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারী। ’
—(সুরা হুমাযাহ, আয়াত: ১)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা একে অপরের দোষ-ত্রুটি খোঁজ করো না এবং পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করো। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। ’
—(সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে গিবত আজ একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট সর্বত্র পরনিন্দার ছড়াছড়ি। এমন একজন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি এ অভ্যাসে লিপ্ত নন।

আল্লাহ তাআলা এমন গিবতকারী থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি আনুগত্য করো না এমন কাউকে, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছনাকারী, পরনিন্দাকারী, চোগলখোর, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী ও পাপিষ্ঠ। ’
—(সুরা ক্বালাম, আয়াত: ১০-১৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি কিংবা কোনো বিষয়ে জুলুম করে থাকে, সে যেন দুনিয়াতেই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়—সেই দিনের আগেই, যেদিন কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে, সেখান থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কর্তন করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে, তাহলে মজলুমের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। ’
—(বুখারি, হাদিস: ২২৮৭)

গীবতের মূল কারণ অহংকার, ক্রোধ, সম্মানপ্রিয়তা কিংবা হিংসা হতে পারে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, গিবত ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ঘৃণীত ও জঘন্য অপরাধ। ইসলামের শিক্ষা হলো—কারো দোষ চোখে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা না করে, গোপনে তাকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা। পরনিন্দা নয়, বরং সংশোধনের উদ্যোগই একজন প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

গিবত থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। পরনিন্দার পরিবর্তে একজনকে শুধরে দেওয়াই হলো প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে গীবতের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দিন।

 

ঢাকাভয়সে২৪/সাদিক