নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মাসুদ শরীফের বাড়ির পুকুরে ‘কুমির’ দেখার গুজবে বুধবার বিকেল থেকে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দেয়, শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে বনবিভাগ ও প্রশাসনের তদন্তে জানা গেছে—গুজবের ‘কুমির’ আদতে ছিল একটি সাধারণ গুইসাপ (মনিটর লিজার্ড)।
ঘটনার সূত্রপাত ৩ দিন আগে, স্থানীয় এক দোকানদার রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ‘একটি বড় কুমির’ যাওয়ার দৃশ্য দেখতে পান বলে দাবি করেন। এরপর বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে। বুধবার (২৫ জুন) বিকেলে মাসুদ শরীফের বাড়ির পুকুরে জনসাধারণের ভিড় লেগে যায়। কেউ কেউ ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তবে উদ্ধার প্রক্রিয়া তখনো স্থগিত রাখা হয়।
এদিকে, উপকূলীয় বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পুকুরে যে প্রাণীটি দেখা গেছে তা একটি গুইসাপ।
ওই বাড়ির বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, কেউ গুজবে বিশ্বাস করবেন না। আমাদের বাড়িতে যে ঘটনাটি ঘটেছিল, গতকাল সারা হাতিয়াতে কুমির বলে যে প্রাণীটি ভাইরাল হয়েছে আসলে প্রাণীটি হলো বড় ধরনের গুই-সাপ। আজ আমাদের বাড়ির পুকুরে থাকা প্রাণীটি দেখতে গেলেন বন বিভাগের লোক জন, দেখে সেটা নিশ্চিত করে ,এটা একটি বড় ধরনের গুই- সাপ ।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ ঢাকা ভয়েস২৪ কে জানান, “আমাদের বিশেষজ্ঞ দল গিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছে এটি একটি বড় আকৃতির গুইসাপ। জনসাধারণের মাঝে অহেতুক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গুইসাপ নিরীহ এবং সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না।”
হাতিয়ার ইউএনও মো. আলাউদ্দিন বলেন, “প্রথমে নানা ধরনের তথ্য আসছিল—কেউ বলছিল কুমির, কেউ বলছিল কুমির-সদৃশ্য প্রাণী। পরে দেখা যায় এটি একটি গুইসাপ। আমরা বিষয়টি যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। সবাইকে অনুরোধ করছি—গুজবে কান না দিতে এবং পরিবেশের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এখন কিছুটা স্বস্তিতে ফিরলেও, তাঁরা বলছেন—”আসলে আমরা ভয়ে ছিলাম কারণ কুমির হলে বড় বিপদ হতো। এখন বুঝতে পারছি গুজবেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট ও নিরাপদ আবাসস্থল সংকটের কারণে কিছু বন্যপ্রাণী বসত এলাকা বা জলাশয়ে প্রবেশ করছে। ফলে এমন বিভ্রান্তিকর ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে।