ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাবি ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পাশাপাশি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী।

রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এর শিক্ষার্থী জসিমউদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডী এলাকার জিয়া স্কুল রোডে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব, বহিষ্কৃত কর্মী হাসিবুর ইসলাম হাসিব, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী বিশালসহ আরও ১০-১২ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী।

লিখিত অভিযোগে জসিমউদ্দীন বলেন, “মাগরিবের নামাজ শেষে এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁটার সময় ৩-৪ টি মোটরসাইকেল এসে আমার পথরোধ করে। এরপর আমাকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করে এবং একটি ছবি দেখিয়ে আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, “তারা আমার কাছে ২০০০ টাকা দাবি করে। আমি তাদের জানাই, হলে থাকার জন্য অতীতে ছাত্রলীগের কয়েকটি প্রোগ্রামে বাধ্য হয়ে অংশ নিয়েছিলাম, তবে কখনো কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। আমি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের প্রমাণ হিসেবে আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট এবং ছবি দেখাই। এছাড়াও এলাকার সংস্কারমূলক কাজে যুক্ত ছিলাম বলেও তাদের জানাই।”

জসিমউদ্দীনের ভাষ্য অনুযায়ী, তার অবস্থান আমলে না নিয়ে অভিযুক্তরা তাকে মারধর করে এবং ১৫০০ টাকা দিতে বাধ্য করে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং সংগঠনের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার শর্ত দেয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন আহসান হাবীব বলেন, “আমি গতকাল একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় ওই ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আমার সঙ্গে থাকা এক ছোটভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, এই ছেলে আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে। বিষয়টি জানার পর আমি তার সঙ্গে কথা বলি এবং তার ফোন দেখতে চাই। পরে কিছু না পেয়ে তাকে চলে যেতে বলি। কোনো ধরনের টাকা-পয়সার লেনদেন এখানে হয়নি। নাহলে সন্ধ্যার ঘটনা সে রাত ২টা ৩০ মিনিটে পোস্ট করত কেন?”

রাতের ইবলিশ চত্বরের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “ওটা এক বহিরাগত ছেলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ের বিষয় ছিল। প্রক্টোরিয়াল টিম এসে ঘটনাটি সমাধান করে দেয়। এখানে চাঁদাবাজির কোনো প্রশ্নই আসে না।”

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ” যেহেতু তারা দুইজন বহিষ্কৃত, রাবি ছাত্রদলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের কোন অপরাধের দায় শাখা ছাত্রদল নিবে না। একটা চক্র সবসময়ই মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। আমি জানিনা এ ঘটনা সত্য কিনা। তবে যদি সত্য প্রমানিত হয় তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহবান করবো তারা যেন এবিষয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আর এতে রাবি শাখা ছাত্রদল সর্বাত্মক সহায়তা করবে।”

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, “আমরা লিখিত অভিযোগে একটি কপি পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমানিত হলে দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

প্রক্টর মাহবুবর রহমান আরো জানান, “একই দিনে এই চক্রের বিরুদ্ধে আরো একটি চাঁদাবাজি চেষ্টার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয় এবং ঘটনার মীমাংসা করে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।”

উল্লেখ্য, এর আগেও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এক সদস্যের সঙ্গে চাঁদাবাজির ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আহসান হাবীব ও হাসিবুর ইসলাম হাসিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

ট্যাগস :

২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন হয়েছে: আদালতে স্বীকারোক্তি হাবিবুল আউয়ালের

রাবি ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ

আপডেট সময় ১০:১৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পাশাপাশি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী।

রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) এর শিক্ষার্থী জসিমউদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডী এলাকার জিয়া স্কুল রোডে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব, বহিষ্কৃত কর্মী হাসিবুর ইসলাম হাসিব, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী বিশালসহ আরও ১০-১২ জন ছাত্রদল নেতাকর্মী।

লিখিত অভিযোগে জসিমউদ্দীন বলেন, “মাগরিবের নামাজ শেষে এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁটার সময় ৩-৪ টি মোটরসাইকেল এসে আমার পথরোধ করে। এরপর আমাকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করে এবং একটি ছবি দেখিয়ে আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, “তারা আমার কাছে ২০০০ টাকা দাবি করে। আমি তাদের জানাই, হলে থাকার জন্য অতীতে ছাত্রলীগের কয়েকটি প্রোগ্রামে বাধ্য হয়ে অংশ নিয়েছিলাম, তবে কখনো কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। আমি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের প্রমাণ হিসেবে আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট এবং ছবি দেখাই। এছাড়াও এলাকার সংস্কারমূলক কাজে যুক্ত ছিলাম বলেও তাদের জানাই।”

জসিমউদ্দীনের ভাষ্য অনুযায়ী, তার অবস্থান আমলে না নিয়ে অভিযুক্তরা তাকে মারধর করে এবং ১৫০০ টাকা দিতে বাধ্য করে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং সংগঠনের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার শর্ত দেয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন আহসান হাবীব বলেন, “আমি গতকাল একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় ওই ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আমার সঙ্গে থাকা এক ছোটভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, এই ছেলে আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে। বিষয়টি জানার পর আমি তার সঙ্গে কথা বলি এবং তার ফোন দেখতে চাই। পরে কিছু না পেয়ে তাকে চলে যেতে বলি। কোনো ধরনের টাকা-পয়সার লেনদেন এখানে হয়নি। নাহলে সন্ধ্যার ঘটনা সে রাত ২টা ৩০ মিনিটে পোস্ট করত কেন?”

রাতের ইবলিশ চত্বরের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, “ওটা এক বহিরাগত ছেলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মেয়ের বিষয় ছিল। প্রক্টোরিয়াল টিম এসে ঘটনাটি সমাধান করে দেয়। এখানে চাঁদাবাজির কোনো প্রশ্নই আসে না।”

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ” যেহেতু তারা দুইজন বহিষ্কৃত, রাবি ছাত্রদলের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের কোন অপরাধের দায় শাখা ছাত্রদল নিবে না। একটা চক্র সবসময়ই মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। আমি জানিনা এ ঘটনা সত্য কিনা। তবে যদি সত্য প্রমানিত হয় তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহবান করবো তারা যেন এবিষয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আর এতে রাবি শাখা ছাত্রদল সর্বাত্মক সহায়তা করবে।”

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, “আমরা লিখিত অভিযোগে একটি কপি পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমানিত হলে দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”

প্রক্টর মাহবুবর রহমান আরো জানান, “একই দিনে এই চক্রের বিরুদ্ধে আরো একটি চাঁদাবাজি চেষ্টার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয় এবং ঘটনার মীমাংসা করে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।”

উল্লেখ্য, এর আগেও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এক সদস্যের সঙ্গে চাঁদাবাজির ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আহসান হাবীব ও হাসিবুর ইসলাম হাসিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।