আকিদাগত বিরোধ থাকলেও দেশের ইসলামী দলগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচ সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। এই ঐক্যের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। একসময় জামায়াতের কট্টর সমালোচক হলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এবার মত পাল্টে ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। তারা মনে করছে, ইসলামী দলগুলোর ভোট একীভূত করা গেলে নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদে আসনসংখ্যা অনেক গুণ বাড়ানো সম্ভব।
ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলেছে , ঐক্যের বিষয়ে তাঁরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইসলামী দলগুলোর ঐক্য স্পষ্ট হবে। ঐক্য হওয়া না হওয়া তখনই পরিষ্কার হবে।
নেতারা আরও জানায়, এই ঐক্য বা সমঝোতা হবে সম্পূর্ণ নির্বাচনকেন্দ্রিক।একটি আসনে কেবল একটি ইসলামী দল প্রার্থী দেবে এবং অন্যান্য দল সেই প্রার্থী ও প্রতীকের প্রতি সমর্থন দেবে। যে আসনে যে ইসলামী দলের প্রভাব বেশি, সেখানে অন্য কোনো ইসলামী দল প্রার্থী দেবে না। সবাই মিলে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সভা-সমাবেশ করে তাঁকে জয়ী করার কাজ করবে। ঐক্য চূড়ান্ত হওয়ার পর দলগুলোর মধ্যে লিখিত চুক্তিও হবে।
জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করছে। ইসলামী আন্দোলনও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী বাছাই করে রেখেছে। ঐক্য হলে সমঝোতার আসনে জামায়াতের প্রার্থী থাকবে না।
বর্তমানে পাঁচটি ইসলামী দল নিয়ে একটি জোট রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে এই জোটে রয়েছে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম পার্টি। এই পাঁচটি দলেরই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন রয়েছে। গত কোরবানির ঈদের আগে এই জোটের তাদের সর্বশেষ সভা করে। সভায় নির্বাচনী ঐক্য জোরদারের পক্ষে মতামত দেওয়া হয়।
এই জোটে থাকা খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মাসখানেক আগে সভা করেছি। নীতিগতভাবে আমরা আগে থেকেই ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, জামায়াতের সঙ্গেও এই ঐক্য হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। আশা করছি, তখন আমরা এই নির্বাচনী ঐক্যকে একটি চূড়ান্ত রূপ দিতে পারব।’
একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল খেলাফত মজলিস। ২০২১ সালে তারা ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায়। চলতি বছর জানুয়ারিতে খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করে।
স্বৈরাচা সরকার হাসিনার পতনের পর জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টিসহ বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সাক্ষাৎ করা হয়েছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও ইসলামী দলগুলোকে একসঙ্গে নির্বাচনের আহবান জানানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার-মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনী ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, বেশির ভাগ ইসলামী দল এই ঐক্যে থাকবে। তবে এতে সময় লাগবে। ঐকমত্য তৈরির জন্য কমিশনের বৈঠক চলছে, সেখানেই আমাদের মনোযোগ। নির্বাচন যত কাছাকাছি আসবে, ধীরে ধীরে বিষয়টি স্পষ্ট হবে এবং আসনভিত্তিক সমঝোতা হবে।’তিনি জানান, ইসলামী দলগুলো একটি প্রতীকে থাকবে, নাকি যার যার নিজস্ব প্রতীকে থাকবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ গতকাল বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর সাধারণ মানুষ ইসলামী দলগুলোকে একসঙ্গে দেখতে চাইছে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’তিনি বলেন, “ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আকিদাগত মতপার্থক্য থাকায় তারা এটিকে ‘ঐক্য’ না বলে ‘সমঝোতা’ বলছেন। এই সমঝোতা শুধু নির্বাচনের জন্য, যেখানে প্রতিটি আসনে একটি করে ইসলামী দলের প্রার্থী থাকবেন।”
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে শুরু হয় ঐক্যের আলোচনা। তাদের মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়, ইসলামী দলগুলোর সব ভোট যেন একটি বাক্সে পড়ে।এই লক্ষ্যে দলগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বা একাধিক দলের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।