ঢাকা ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তুই উনারে চিনোস? – নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে হামলাকারী যুবদল নেতার কর্মীর হুংকার

যুবদল নেতার নেতৃত্বে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আরেক শিক্ষার্থী হামলায় বাঁধা দিতে গেলে যুবদল নেতার এক কর্মী তাকে ‘তুই উনারে চিনোস?’ বলে হুংকার দেয়। পরবর্তীতে দেখে নিবে বলেও হুমকি দেয়। জানা যায়, হামলাকারী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর চৌমুহনী বাজারের রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী ফেনীগামী নোবিপ্রবির একটি বাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায় স্টার লাইন পরিবহনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির পর এক পর্যায়ে এক বহিরাগত ব্যক্তি বাসে উঠে পড়েন এবং আগ্রাসী আচরণ শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী জাহেদুল হকসহ কয়েকজন ঘটনাটি জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে লাঠি দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে আঘাত করেন। পরে তিনি ফোন করে আরও ১৫–২০ জন সঙ্গী ডেকে আনেন এবং বাসে উঠে শিক্ষার্থীদের হুমকি ও গালাগাল করতে থাকেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী এম আর ফুয়াদ জানান, ক্যাম্পাস থেকে ফেনীগামী বাস যখন চৌমুহনী রেলক্রসিং এর এদিকে জ্যামে আটকে ছিলো তখন জাহেদুল হকের সাথে কথা কাটাকাটির পর মীর ফরহাদ টিপু তার ২০ জন লোক থেকে ১টি লাঠিসহ ৬/৭ জন লোক নিয়ে বাসে উঠে জাহেদকে খুঁজতে থাকে। তখন আমি বাসের মাঝখান থেকে বনেটের সামনে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করি। তখন আমি সামনে থাকায় তার এক ছেলা আমাকে জাহেদ মনে করে টেনে নামাতে চেষ্টা করে। তখন টিপু উক্ত ব্যক্তি আমি নই বলে পিছনে দেখাতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, একপর্যায়ে টিপু আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে লাঠি উদ্ধত করলে তা আমি ধরে ফেলি এবং তার ২ জন লোক আমাকে টানা-হেঁচড়ে করতে থাকে। তখন টিপু আমাকে ধাক্কা দেয়। এরপর এক লোক আমাকে জিজ্ঞেস করে যে তুই উনারে (টিপু) চিনোস? আমি বললাম আমার উনারে চেনার কি দরকার? উনি হাত তুলবে কেন? তারপরও আমি তাকে পিছনে যেতে দেইনি। তখন আবার ড্রাইভার কিছু বললে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্ধত হয়। এরপর এক স্থানীয় আমাকে সীটে যেতে বলে তাকে নিয়ে নামতে গেলে সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়। তারপর বাস সামনে আগাতে লাগলে সেনাবাহিনীকে তার ব্যাপারে সন্ত্রাসী হিসেবে ইশারা দেই। তখন সে আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী উক্ত বাসের চালক বলেন, চৌমুহনী বাজারের জ্যামে আমাদের গাড়ি আটকে ছিলো। পাশে স্টার লাইন আরেকটি গাড়িও ছিলো। তখন এক লোক রাস্তা পার হওয়ার সময় আমাকে এসে বলে গাড়ি এভাবে রাখছস? আমি তাকে সোজা রাস্তা পার হওয়ার জন্য ইশারা দিলেও সে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালাগালি করে ও মারার জন্য উদ্যত হয়। ঐ মুহূর্তে বাসের পেছন থেকে দুইজন শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে তাদের উপর ঐ লোকসহ ৬-৭ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে মারতে যায়। তখন অন্য একজন শিক্ষার্থী তাদের বাঁধা দেয়। হামলাকারীরা ঐ শিক্ষার্থীকে মারবার জন্য টেনে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেও সেনাবাহিনী উপস্থিত হওয়ায় করতে পারেনি। পরে সেখান থেকে আমরা ফেনী উদ্দেশ্যে চলে যায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহেদুল হক বলেন, “আমরা জানতে চাইলে সে আমাদের মারতে আসে, লাঠি দিয়ে আঘাতও করে, পরে দলবলে এসে বাসে উঠে ভয়ভীতি ও গালিগালাজ করে। আমাকে নামিয়ে মারার চেষ্টা করে।”

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত ১০:৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এমসয় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয় এবং হামলাকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নোবিপ্রবির প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, “বিষয়টি বেগমগঞ্জ থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। আমরা সময় দিয়েছি। আমরা জেলা পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। সবসময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার এবং বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখব।”

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বেগমগঞ্জ থানার ওসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র (স্মারকলিপি) জমা দেন। পরে ওসি ও সার্কেল এএসপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সার্বিক বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন।

ট্যাগস :

মিসাইল হামলার ভয়ে সংলাপ চাই যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করলো ইরান,সংলাপের কোন জায়গা নেই!

তুই উনারে চিনোস? – নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে হামলাকারী যুবদল নেতার কর্মীর হুংকার

আপডেট সময় ০৭:৪৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

যুবদল নেতার নেতৃত্বে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আরেক শিক্ষার্থী হামলায় বাঁধা দিতে গেলে যুবদল নেতার এক কর্মী তাকে ‘তুই উনারে চিনোস?’ বলে হুংকার দেয়। পরবর্তীতে দেখে নিবে বলেও হুমকি দেয়। জানা যায়, হামলাকারী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর চৌমুহনী বাজারের রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী ফেনীগামী নোবিপ্রবির একটি বাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায় স্টার লাইন পরিবহনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির পর এক পর্যায়ে এক বহিরাগত ব্যক্তি বাসে উঠে পড়েন এবং আগ্রাসী আচরণ শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী জাহেদুল হকসহ কয়েকজন ঘটনাটি জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে লাঠি দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে আঘাত করেন। পরে তিনি ফোন করে আরও ১৫–২০ জন সঙ্গী ডেকে আনেন এবং বাসে উঠে শিক্ষার্থীদের হুমকি ও গালাগাল করতে থাকেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী এম আর ফুয়াদ জানান, ক্যাম্পাস থেকে ফেনীগামী বাস যখন চৌমুহনী রেলক্রসিং এর এদিকে জ্যামে আটকে ছিলো তখন জাহেদুল হকের সাথে কথা কাটাকাটির পর মীর ফরহাদ টিপু তার ২০ জন লোক থেকে ১টি লাঠিসহ ৬/৭ জন লোক নিয়ে বাসে উঠে জাহেদকে খুঁজতে থাকে। তখন আমি বাসের মাঝখান থেকে বনেটের সামনে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করি। তখন আমি সামনে থাকায় তার এক ছেলা আমাকে জাহেদ মনে করে টেনে নামাতে চেষ্টা করে। তখন টিপু উক্ত ব্যক্তি আমি নই বলে পিছনে দেখাতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, একপর্যায়ে টিপু আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে লাঠি উদ্ধত করলে তা আমি ধরে ফেলি এবং তার ২ জন লোক আমাকে টানা-হেঁচড়ে করতে থাকে। তখন টিপু আমাকে ধাক্কা দেয়। এরপর এক লোক আমাকে জিজ্ঞেস করে যে তুই উনারে (টিপু) চিনোস? আমি বললাম আমার উনারে চেনার কি দরকার? উনি হাত তুলবে কেন? তারপরও আমি তাকে পিছনে যেতে দেইনি। তখন আবার ড্রাইভার কিছু বললে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্ধত হয়। এরপর এক স্থানীয় আমাকে সীটে যেতে বলে তাকে নিয়ে নামতে গেলে সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়। তারপর বাস সামনে আগাতে লাগলে সেনাবাহিনীকে তার ব্যাপারে সন্ত্রাসী হিসেবে ইশারা দেই। তখন সে আমাকে দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী উক্ত বাসের চালক বলেন, চৌমুহনী বাজারের জ্যামে আমাদের গাড়ি আটকে ছিলো। পাশে স্টার লাইন আরেকটি গাড়িও ছিলো। তখন এক লোক রাস্তা পার হওয়ার সময় আমাকে এসে বলে গাড়ি এভাবে রাখছস? আমি তাকে সোজা রাস্তা পার হওয়ার জন্য ইশারা দিলেও সে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আমাকে গালাগালি করে ও মারার জন্য উদ্যত হয়। ঐ মুহূর্তে বাসের পেছন থেকে দুইজন শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করলে তাদের উপর ঐ লোকসহ ৬-৭ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে মারতে যায়। তখন অন্য একজন শিক্ষার্থী তাদের বাঁধা দেয়। হামলাকারীরা ঐ শিক্ষার্থীকে মারবার জন্য টেনে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেও সেনাবাহিনী উপস্থিত হওয়ায় করতে পারেনি। পরে সেখান থেকে আমরা ফেনী উদ্দেশ্যে চলে যায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহেদুল হক বলেন, “আমরা জানতে চাইলে সে আমাদের মারতে আসে, লাঠি দিয়ে আঘাতও করে, পরে দলবলে এসে বাসে উঠে ভয়ভীতি ও গালিগালাজ করে। আমাকে নামিয়ে মারার চেষ্টা করে।”

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত ১০:৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এমসয় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয় এবং হামলাকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নোবিপ্রবির প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান বলেন, “বিষয়টি বেগমগঞ্জ থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। আমরা সময় দিয়েছি। আমরা জেলা পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। সবসময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার এবং বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখব।”

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বেগমগঞ্জ থানার ওসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র (স্মারকলিপি) জমা দেন। পরে ওসি ও সার্কেল এএসপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সার্বিক বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করেন।