ঢাকা ০১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র গরমে বাগেরহাটের মাঠে হাহাকার’পান-সবজি-মাছ চাষে বিপর্যয়

বাগেরহাটে টানা তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। পানির অভাবে মরে যাচ্ছে সবজি, পানের বরজ শুকিয়ে যাচ্ছে, মাছ ভেসে উঠছে ঘেরে। মাথায় হাত কৃষকের, ক্ষতির হিসাব মেলাতে পারছেন না কেউ।
আজ সোমবার (১২ মে) বাগেরহাটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো বৃষ্টি নেই। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন চলবে।

চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াকুড়া গ্রামের পানচাষি বাবুল হাওলাদার বললেন, বরজে এখন পানি নেই। পাতায় আগুন ধরে যায় মনে হয়। নিচের দিককার সব পাতা ঝরে পড়েছে। এত গরম কোনোদিন দেখিনি।
বাগেরহাটে পানের আবাদ বেশ জনপ্রিয়। বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, কচুয়া ও মোরেলগঞ্জে শত শত একর জমিতে পানের চাষ হয়। কিন্তু চলমান গরমে সেই চাষ এখন ঝুঁকির মুখে।

মোংলা উপজেলার চিংড়ি চাষি জামাল শেখ জানান, প্রতিদিন সকালে ঘেরে গিয়ে মরা মাছ দেখছেন। ঘেরের পানি শুকিয়ে নিচে কাদা উঠে এসেছে। অক্সিজেন কমে যাওয়ায় চিংড়ি, পাঙাশ, রুই সব মরছে। এক মাসেই লাখ টাকার মাছ মারা গেছে, বলেন তিনি।
সুন্দরবনের পাশে উপকূলীয় এই জেলায় চিংড়ি রপ্তানি অন্যতম আয়ের উৎস। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেই খাতেও দেখা দিয়েছে বড় ধাক্কা।

ফকিরহাট ও কচুয়া উপজেলায় বেগুন, শসা, লাউসহ নানান মৌসুমি সবজির চাষ হয়। কিন্তু টানা রোদে জমির মাটি ফেটে গেছে, গাছ গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে।

কচুয়ার গজালিয়া গ্রামের কৃষক সফিকুল শেখ বলেন, গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুল ধরলেও ফল হচ্ছে না। দিনে দিনে ক্ষতি বাড়ছে।

কৃষক, মৎস্যজীবী, দিনমজুর—সবাই এখন চেয়ে আছেন আকাশের দিকে। বৃষ্টির আশায়। কিন্তু আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই সপ্তাহেও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

এই গরম আর কতদিন চলবে কেউ জানে না। কিন্তু বাগেরহাটের কৃষকেরা আজ শুধু একটাই কথা বলছেন
—জীবন বাঁচাতে এবার বৃষ্টি চাই।

ট্যাগস :

তীব্র গরমে বাগেরহাটের মাঠে হাহাকার’পান-সবজি-মাছ চাষে বিপর্যয়

আপডেট সময় ০১:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

বাগেরহাটে টানা তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন কৃষক ও মৎস্যচাষিরা। পানির অভাবে মরে যাচ্ছে সবজি, পানের বরজ শুকিয়ে যাচ্ছে, মাছ ভেসে উঠছে ঘেরে। মাথায় হাত কৃষকের, ক্ষতির হিসাব মেলাতে পারছেন না কেউ।
আজ সোমবার (১২ মে) বাগেরহাটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই সপ্তাহ ধরে কোনো বৃষ্টি নেই। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কম। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন চলবে।

চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াকুড়া গ্রামের পানচাষি বাবুল হাওলাদার বললেন, বরজে এখন পানি নেই। পাতায় আগুন ধরে যায় মনে হয়। নিচের দিককার সব পাতা ঝরে পড়েছে। এত গরম কোনোদিন দেখিনি।
বাগেরহাটে পানের আবাদ বেশ জনপ্রিয়। বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, কচুয়া ও মোরেলগঞ্জে শত শত একর জমিতে পানের চাষ হয়। কিন্তু চলমান গরমে সেই চাষ এখন ঝুঁকির মুখে।

মোংলা উপজেলার চিংড়ি চাষি জামাল শেখ জানান, প্রতিদিন সকালে ঘেরে গিয়ে মরা মাছ দেখছেন। ঘেরের পানি শুকিয়ে নিচে কাদা উঠে এসেছে। অক্সিজেন কমে যাওয়ায় চিংড়ি, পাঙাশ, রুই সব মরছে। এক মাসেই লাখ টাকার মাছ মারা গেছে, বলেন তিনি।
সুন্দরবনের পাশে উপকূলীয় এই জেলায় চিংড়ি রপ্তানি অন্যতম আয়ের উৎস। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সেই খাতেও দেখা দিয়েছে বড় ধাক্কা।

ফকিরহাট ও কচুয়া উপজেলায় বেগুন, শসা, লাউসহ নানান মৌসুমি সবজির চাষ হয়। কিন্তু টানা রোদে জমির মাটি ফেটে গেছে, গাছ গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে।

কচুয়ার গজালিয়া গ্রামের কৃষক সফিকুল শেখ বলেন, গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, ফুল ধরলেও ফল হচ্ছে না। দিনে দিনে ক্ষতি বাড়ছে।

কৃষক, মৎস্যজীবী, দিনমজুর—সবাই এখন চেয়ে আছেন আকাশের দিকে। বৃষ্টির আশায়। কিন্তু আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই সপ্তাহেও উল্লেখযোগ্য বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

এই গরম আর কতদিন চলবে কেউ জানে না। কিন্তু বাগেরহাটের কৃষকেরা আজ শুধু একটাই কথা বলছেন
—জীবন বাঁচাতে এবার বৃষ্টি চাই।