ঢাকা ০৭:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কুলাউড়ায় মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয়রা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় অসম্পন্ন মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। প্রকল্পটির কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত। অরক্ষিত এই প্রতিরক্ষা বাঁধ ঘিরে তাই নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন তারা। মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ চলছে চার বছর ধরে। এর মাঝে গত আড়াই মাস ধরে এর ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশে সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি। আসন্ন বর্ষায় অরক্ষিত এই প্রতিরক্ষা বাঁধের কারণে নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন উপজেলার মানুষ। নির্ধারিত তিন বছর সময়ের পরে আরও এক বছর বেশি ব্যয় করতে হয়েছে এই বাঁধের জন্য। এর পরেও সুফল মেলেনি। সম্প্রতি আরও এক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর-পরিদপ্তরের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও স্থানীয়রা জানান নির্ধারিত সময়ে বাঁধের অর্ধেক কাজ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনা নির্ধারণ ও জমি অধিগ্রহণসহ জটিল নানা প্রক্রিয়া সম্পাদনে কালক্ষেপণ হওয়ায় দেরি হয় বাঁধের কাজ। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নদী ও নদী সুরক্ষাবিষয়ক নানা ইস্যুতে জটিলতাও কাজের গতি মন্থর করে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এ বছরও বর্ষায় কুলাউড়া বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন সবচেয় বেশি ঝুঁকিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে তারা নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধন করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এর পরও বাঁধটির কাজ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানা যাচ্ছে না। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বন্যা আর ভাঙন থেকে কুলাউড়া উপজেলাকে রক্ষা করতেই ২০২০ সাল থেকে ২৮টি প্যাকেজে ৩০৭কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এসব কাজের মধ্যে, প্রতিরক্ষামূলক কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।

উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, মনু নদীর বেড়িবাঁধটি ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বছর বাঁধের যে ১০০ ফুট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। সীমান্তবর্তী বাঁধের অংশে কাজ করতে কিছু জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। রাজাপুর, বেলরতল, ছৈদল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ঠিকাদারদের গড়িমসি, জমি অধিগ্রহণ ও সময়মতো অর্থের ছাড় না থাকায় কাজ বাস্তবায়নে বারবার বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফয়জুল হক, মখলিছ মিয়া, আতিক মিয়া বলেন, ২০২৪ সালের ২১ আগস্টের বন্যায় উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া, টিলাগাঁও ইউনিয়নহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এর আগে ২০১৮ এবং ২০২২ সালে দুই দফা বন্যায়ও উপজেলার টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনোটির অস্তিত্ব থাকে না। সেই সঙ্গে এ ইউনিয়নগুলোর বানভাসি লোকজন প্রতিটি মুহূর্তে বন্যার আতঙ্কে দিন কাটায়।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলিদ বলেন, মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। নানা জটিলতার কারণে কাজে দেরতি হয়। সেই সঙ্গে দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা জানান, বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারকাজ করতে গেলে সীমান্তবর্তী কিছু স্থানে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এতে শরীফপুর ইউনিয়নের চারটি স্থানে মোট ১ হাজার ৪০০ মিটার অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই স্থানে কাজ করার অনুমোতি চেয়ে ২০২৩ সালে যৌথ নদী কমিশন ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিতে চিঠিও দিয়েছিল। সর্বশেষ মার্চ মাসে কলকাতায় দুই দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বলেন, মনু নদীর বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে জেলা উন্নয়ন সভায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, আলীনগর ও দত্তগ্রামে বেড়িবাঁধের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মাটি ভরাটের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারকে বিজিবি সহযোগিতা করবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নারীদের অধিকার আদায় ও নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

কুলাউড়ায় মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয়রা

আপডেট সময় ০৪:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় অসম্পন্ন মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। প্রকল্পটির কাজ আংশিক শেষ হয়েছে। তার মধ্যে বিভিন্ন স্থান ক্ষতিগ্রস্ত। অরক্ষিত এই প্রতিরক্ষা বাঁধ ঘিরে তাই নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন তারা। মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ চলছে চার বছর ধরে। এর মাঝে গত আড়াই মাস ধরে এর ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশে সংস্কারকাজ করা সম্ভব হয়নি। আসন্ন বর্ষায় অরক্ষিত এই প্রতিরক্ষা বাঁধের কারণে নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন উপজেলার মানুষ। নির্ধারিত তিন বছর সময়ের পরে আরও এক বছর বেশি ব্যয় করতে হয়েছে এই বাঁধের জন্য। এর পরেও সুফল মেলেনি। সম্প্রতি আরও এক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর-পরিদপ্তরের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও স্থানীয়রা জানান নির্ধারিত সময়ে বাঁধের অর্ধেক কাজ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিকল্পনা নির্ধারণ ও জমি অধিগ্রহণসহ জটিল নানা প্রক্রিয়া সম্পাদনে কালক্ষেপণ হওয়ায় দেরি হয় বাঁধের কাজ। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নদী ও নদী সুরক্ষাবিষয়ক নানা ইস্যুতে জটিলতাও কাজের গতি মন্থর করে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এ বছরও বর্ষায় কুলাউড়া বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন সবচেয় বেশি ঝুঁকিতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে তারা নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধন করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এর পরও বাঁধটির কাজ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানা যাচ্ছে না। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বন্যা আর ভাঙন থেকে কুলাউড়া উপজেলাকে রক্ষা করতেই ২০২০ সাল থেকে ২৮টি প্যাকেজে ৩০৭কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এসব কাজের মধ্যে, প্রতিরক্ষামূলক কাজের ২০টি, চর অপসারণ কাজের ৪ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ কাজের ৪টি প্যাকেজের কাজ রয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলায় কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশ।

উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, মনু নদীর বেড়িবাঁধটি ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে বছর বাঁধের যে ১০০ ফুট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। সীমান্তবর্তী বাঁধের অংশে কাজ করতে কিছু জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। রাজাপুর, বেলরতল, ছৈদল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ঠিকাদারদের গড়িমসি, জমি অধিগ্রহণ ও সময়মতো অর্থের ছাড় না থাকায় কাজ বাস্তবায়নে বারবার বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফয়জুল হক, মখলিছ মিয়া, আতিক মিয়া বলেন, ২০২৪ সালের ২১ আগস্টের বন্যায় উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া, টিলাগাঁও ইউনিয়নহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের শতাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এর আগে ২০১৮ এবং ২০২২ সালে দুই দফা বন্যায়ও উপজেলার টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লে প্রতিরক্ষা বাঁধ, নদী আর গ্রাম কোনোটির অস্তিত্ব থাকে না। সেই সঙ্গে এ ইউনিয়নগুলোর বানভাসি লোকজন প্রতিটি মুহূর্তে বন্যার আতঙ্কে দিন কাটায়।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন অলিদ বলেন, মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। নানা জটিলতার কারণে কাজে দেরতি হয়। সেই সঙ্গে দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা জানান, বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারকাজ করতে গেলে সীমান্তবর্তী কিছু স্থানে বিএসএফের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এতে শরীফপুর ইউনিয়নের চারটি স্থানে মোট ১ হাজার ৪০০ মিটার অংশের কাজ বন্ধ রয়েছে। এই স্থানে কাজ করার অনুমোতি চেয়ে ২০২৩ সালে যৌথ নদী কমিশন ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিতে চিঠিও দিয়েছিল। সর্বশেষ মার্চ মাসে কলকাতায় দুই দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বলেন, মনু নদীর বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে জেলা উন্নয়ন সভায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, আলীনগর ও দত্তগ্রামে বেড়িবাঁধের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মাটি ভরাটের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারকে বিজিবি সহযোগিতা করবে।