ঢাকা ০৯:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত Logo কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ Logo ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রচার করছে’ Logo গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নোসক শিবিরের সহযোগিতা Logo এআই হ্যাকাথন ২০২৫: রুয়েটের ‘বুরাক’ টিমের চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন Logo আমিরাতে আইপিএলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পিএসএল পেল অগ্রাধিকার Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ Logo রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জয়পুরহাটে বিক্ষোভ Logo ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান

ছুটির বদলে এক মাসের ভাতা চায় পুলিশ

প্রতিবছর বাড়তি এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ ভাতা হিসেবে চেয়েছে পুলিশ। তাদের যুক্তি হলো, অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীরা বছরে ১২৯ দিন সরকারি ছুটি কাটান। তাদের কর্মঘণ্টাও নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু পুলিশ আট ঘণ্টার বদলে আরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। সরকারি ছুটিতেও কাজ করতে হয়। ঈদ, নববর্ষ, পহেলা মে ছাড়াও অন্যান্য উৎসবেও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশের পক্ষে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে আরও কিছু দাবি-দাওয়া এসেছে। এর মধ্যে ছিল স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গেও গতকাল পুলিশ কর্মকর্তাদের পৃথক মতবিনিময় হয়। সেখানে বিবাহিতদের এএসপি পদে নিয়োগ না দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। বিবাহিত প্রার্থীদের নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে পুলিশ।

বৈঠক উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদরদপ্তরের এএসপি মো. আল আসাদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পতিত সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। এতে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার চায় না জনগণ। তারা নিরপেক্ষ এবং নতুন বাংলাদেশের পুলিশ চায়।

এ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা পুলিশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছিল। কমিশন নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগত একমত হলেও এ বিষয়ে কমিশন পূর্ণাঙ্গ কোনো রূপরেখা দেয়নি। একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠিত হলে পুলিশ সততা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।

ঢাকা জেলার পুলিশ কনস্টেবল সামিয়া স্বর্ণা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ ভাতা হিসেবে পুলিশকে প্রদানের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে নিজেদের পারিবারিক জীবনসহ অবকাশের সময়টুকু উৎসর্গ করে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পুলিশ সদস্যরা দিনে আট কর্মঘণ্টার বদলে গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের সব শ্রেণির মানুষ যখন বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে উদযাপন করে, তখন পুলিশ সদস্যরা পরিবারের আনন্দকে উৎসর্গ করে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন। বিরামহীন এই দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিক নানামুখী ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সার্বিক বিবেচনায় প্রতিবছর নির্ধারিত ১২৯ দিনের সরকারি ছুটির বিপরীতে কমপক্ষে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান করা হলে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্পৃহা এবং মনোবল বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পৃথক মতবিনিময় সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে আরও কিছু প্রস্তাব এসেছে। পুলিশ একাডেমি সারদার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশ একাডেমিতে এএসপি হিসেবে যাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই বিবাহিত। অনেকেরই সন্তান আছে। তারা সন্তান ঢাকায় রেখে প্রশিক্ষণে আসেন। তাদের অনেকে মানসিকভাবে ঢাকায় পড়ে থাকেন। গুণগত প্রশিক্ষণ দেওয়া অনেকাংশে সম্ভব হয় না। আবার প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকার বাইরে বদলি করলেই তারা ঢাকায় থাকতে তদবির করেন। এমন প্রেক্ষাপটে অবিবাহিতদের বিসিএস পরীক্ষায় এএসপি হিসেবে নিয়োগ করলে তাদের গুণগত মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। তিনি নিয়োগবিধি সংশোধন করে বিবাহিতদের বিসিএসে এএসপি হিসেবে নিয়োগ না করার প্রস্তাব করেন।

অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে ছিল পুলিশের সব স্তরে ঝুঁকি ভাতা চালু করা, আবাসন সংকট নিরসন, ট্রেনিং একাডেমিতে ভাতা দেওয়া, নারী প্রশিক্ষণ সেন্টার বাড়ানো, পুলিশ সদস্য স্বামী-স্ত্রী হলে একই কর্মস্থলে পদায়ন এবং নারী ট্রাফিকের জন্য নারীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ সার্বিক মান উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ সদস্যদের নিজেদের বৃহত্তর জেলার মধ্যে পদায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জন পুলিশ সদস্য হলে, তাদের একই জেলায় পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া কথাও ভাবা হচ্ছে। কনস্টেবল থেকে এসআইদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে উচ্চসীমা (সিলিং) বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিচের স্তরের পুলিশ কর্মকর্তারা আগের চেয়ে অধিক হারে ঝুঁকি ভাতা পাবেন।

মতবিনিময় সভায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ ট্রাফিক বক্স বা শেল্টার স্থাপন, রাতে টহলরত পুলিশ সদস্যদের জন্য তাঁবু স্থাপন এবং মাদকের মূল হোতাদের ধরতে শক্ত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কোনোরকম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হয়– সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং কারও কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা নেওয়া যাবে না। ঘুষ, দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রয়োজন, তা হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করা। অপ্রয়োজনে লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বাহারুল আলম।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত

ছুটির বদলে এক মাসের ভাতা চায় পুলিশ

আপডেট সময় ১২:১৪:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

প্রতিবছর বাড়তি এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ ভাতা হিসেবে চেয়েছে পুলিশ। তাদের যুক্তি হলো, অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীরা বছরে ১২৯ দিন সরকারি ছুটি কাটান। তাদের কর্মঘণ্টাও নির্দিষ্ট থাকে। কিন্তু পুলিশ আট ঘণ্টার বদলে আরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে। সরকারি ছুটিতেও কাজ করতে হয়। ঈদ, নববর্ষ, পহেলা মে ছাড়াও অন্যান্য উৎসবেও নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশের পক্ষে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে আরও কিছু দাবি-দাওয়া এসেছে। এর মধ্যে ছিল স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গেও গতকাল পুলিশ কর্মকর্তাদের পৃথক মতবিনিময় হয়। সেখানে বিবাহিতদের এএসপি পদে নিয়োগ না দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। বিবাহিত প্রার্থীদের নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে পুলিশ।

বৈঠক উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদরদপ্তরের এএসপি মো. আল আসাদ প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পতিত সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। এতে জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার চায় না জনগণ। তারা নিরপেক্ষ এবং নতুন বাংলাদেশের পুলিশ চায়।

এ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনার জন্য একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা পুলিশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছিল। কমিশন নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে নীতিগত একমত হলেও এ বিষয়ে কমিশন পূর্ণাঙ্গ কোনো রূপরেখা দেয়নি। একটি স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠিত হলে পুলিশ সততা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ ও আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে।

ঢাকা জেলার পুলিশ কনস্টেবল সামিয়া স্বর্ণা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ ভাতা হিসেবে পুলিশকে প্রদানের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে নিজেদের পারিবারিক জীবনসহ অবকাশের সময়টুকু উৎসর্গ করে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পুলিশ সদস্যরা দিনে আট কর্মঘণ্টার বদলে গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা নিয়মিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের সব শ্রেণির মানুষ যখন বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসব আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে উদযাপন করে, তখন পুলিশ সদস্যরা পরিবারের আনন্দকে উৎসর্গ করে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকেন। বিরামহীন এই দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিক নানামুখী ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সার্বিক বিবেচনায় প্রতিবছর নির্ধারিত ১২৯ দিনের সরকারি ছুটির বিপরীতে কমপক্ষে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান করা হলে পুলিশ সদস্যদের কর্মস্পৃহা এবং মনোবল বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পৃথক মতবিনিময় সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে আরও কিছু প্রস্তাব এসেছে। পুলিশ একাডেমি সারদার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশ একাডেমিতে এএসপি হিসেবে যাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই বিবাহিত। অনেকেরই সন্তান আছে। তারা সন্তান ঢাকায় রেখে প্রশিক্ষণে আসেন। তাদের অনেকে মানসিকভাবে ঢাকায় পড়ে থাকেন। গুণগত প্রশিক্ষণ দেওয়া অনেকাংশে সম্ভব হয় না। আবার প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকার বাইরে বদলি করলেই তারা ঢাকায় থাকতে তদবির করেন। এমন প্রেক্ষাপটে অবিবাহিতদের বিসিএস পরীক্ষায় এএসপি হিসেবে নিয়োগ করলে তাদের গুণগত মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। তিনি নিয়োগবিধি সংশোধন করে বিবাহিতদের বিসিএসে এএসপি হিসেবে নিয়োগ না করার প্রস্তাব করেন।

অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে ছিল পুলিশের সব স্তরে ঝুঁকি ভাতা চালু করা, আবাসন সংকট নিরসন, ট্রেনিং একাডেমিতে ভাতা দেওয়া, নারী প্রশিক্ষণ সেন্টার বাড়ানো, পুলিশ সদস্য স্বামী-স্ত্রী হলে একই কর্মস্থলে পদায়ন এবং নারী ট্রাফিকের জন্য নারীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা। এ ছাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহসহ সার্বিক মান উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ সদস্যদের নিজেদের বৃহত্তর জেলার মধ্যে পদায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জন পুলিশ সদস্য হলে, তাদের একই জেলায় পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া কথাও ভাবা হচ্ছে। কনস্টেবল থেকে এসআইদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে উচ্চসীমা (সিলিং) বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিচের স্তরের পুলিশ কর্মকর্তারা আগের চেয়ে অধিক হারে ঝুঁকি ভাতা পাবেন।

মতবিনিময় সভায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ ট্রাফিক বক্স বা শেল্টার স্থাপন, রাতে টহলরত পুলিশ সদস্যদের জন্য তাঁবু স্থাপন এবং মাদকের মূল হোতাদের ধরতে শক্ত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কোনোরকম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হয়– সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং কারও কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা নেওয়া যাবে না। ঘুষ, দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রয়োজন, তা হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করা। অপ্রয়োজনে লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বাহারুল আলম।