ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo এপ্রিলের ২৬ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার Logo আফগান সীমান্তে পাকিস্তানের সেনা অভিযান, ৫৪ জঙ্গি নিহত Logo নিখোঁজের একদিন পর রেললাইনের পাশে মিলল যুবকের খণ্ড বিখণ্ড লাশ Logo জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা Logo পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি দেওয়া বন্ধের দাবি বিজেপির Logo নোয়াখালীতে শহীদ রিজভীর একমাত্র ভাই রিমনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, অবস্থা আশঙ্কাজনক Logo ৫ আগস্টের পর থেকে অবৈধ এক টাকা স্পর্শ করিনি: সারজিস আলম Logo শিক্ষা, আদর্শ ও ইসলামী চেতনায় বাগেরহাটে সাথী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত Logo জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির এই যুগে মেধাস্বত্ব একটি শক্তিশালী হাতিয়ার: বেরোবি উপাচার্য Logo কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পৌর জামায়াতের উদ্যোগে সেলাই মেশিন বিতরণ
এক বই-এর দাম ৫-৬ লক্ষ টাকা

টাকার অভাবে বই পাচ্ছে না রাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রয়েছে নানা অভিযোগ

পুরোনো দিনের বই, কর্মকর্তাদের উচ্চশব্দে গল্পগুজব, বিকট শব্দের টেবিল ফ্যান ব্যবহার সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এসব সমস্যা নিয়ে বহুদিন যাবৎ অভিযোগ করে আসলেও মিলছে না কোনো ধরণের সমাধান। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক বই পুরোনো হয়ে ছেঁড়া-ফাটা হয়ে গেছে, রয়েছে ফ্যানের সংকট, এসির ব্যবস্থা নেই, বিকট শব্দের ফ্যান, কিছু বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা নেই, নতুন বইয়ের সংখ্যা কম, আলোর স্বল্পতা, ক্যারিয়ার ও চাকরি সংক্রান্ত বই কম, কাঙ্ক্ষিত বই পেতে অধিক সময় নষ্ট, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী যথা সংখ্যক বই নেই, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত লাইব্রেরি বন্ধ থাকে, বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটেরের ব্যবস্থা নেই এবং কর্মকর্তারা উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলেন।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈমা জান্নাত বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিঠ। এখানে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও পড়ার পরিবেশ খুব একটা ভালো না। বিশেষ করে এই গ্রীষ্মকালেতো একেবারেই নাই। না আছে কোনো এসির ব্যবস্থা, না আছে ভালো কোনো ফ্যান। লাইব্রেরিতে এসির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অল্প যেই ফ্যানগুলো আছে, সেগুলোতে আবার বিকট শব্দ হয়। পড়তে বসলে এ আওয়াজটা মাথায় ধরে। পড়াশোনায় মনোযোগ আসে না। সপ্তাহে ৫ দিনই আমাদের ক্লাস থাকে। শনিবার লাইব্রেরি খোলা থাকলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। শুক্রবারে ফ্রি থাকলেও সকালে লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। আমার মনে হয় শুক্রবার সকালেও লাইব্রেরি খোলা রাখা উচিত।

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হীরা বলেন, লাইব্রেরিতে সাইন্সের বই খুবই কম। আমরা আপডেট কোনো বই পাই না। যার ফলে লাইব্রেরিতে ভালো কোনো বই পড়তে পারি না। আর ফ্যানের অতিরিক্ত আওয়াজ তো আছেই। আমি মনে করি প্রশাসন এ বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

রায়হান কবির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ঐদিন একটা উপন্যাস পড়ছিলাম কিন্তু হঠাৎ মাঝে দেখি কিছু পৃষ্ঠা নাই। আর অধিকাংশ বই ছেঁড়া। প্রশাসন যদি নতুন কিছু বই যুক্ত করতো, তাহলে খুব ভালো হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলামকে ফ্যানের বিকট আওয়াজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল এসিটা ১৪-১৫ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে আছে। ১৪-১৫ বছর ধরে যারা প্রশাসক ছিলেন তারা কেউ কিছু করেনি। আমরা এসে খুব দ্রুত কাজ শুরু করি। এক মাসের ভিতরেই এসি টেন্ডারে চলে যাবে। আশা করছি এই গ্রীষ্মেই এসিটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা হলে গরমের সমস্যাটাও সমাধান হয়ে যাবে।

আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চ-আওয়াজে কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক বার তাদের ওয়ার্নিং দিয়েছি। এমনকি তাদেরকে শোকজ করার মতো বলেছি।

বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটের ব্যবস্থা নেই। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা এসব অভিযোগ করতেই পারে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটর যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিনে দেয় তাহলেই হবে। কিন্তু কথা হল বিশ্ববিদ্যালয় কি আসলেই ততটুকু বাজেট পায়? আমি জানি না। সবকিছুই আসলে বাজেটের উপর নির্ভরশীল। অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট। নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। আশা করি সরকার এখন বাজেট বেশি দিবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে।

বইয়ের পৃষ্ঠা উধাও ও বই কম বিষয়ে তিনি বলেন, বইয়ের পৃষ্ঠা কি আসলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছেড়ে? শিক্ষার্থীরাই বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে আবার তারাই অভিযোগ করে! সারা বছরে মাত্র ২০ লক্ষ টাকার বই কেনা হয়। সাইন্স ফ্যাকাল্টির কোন কোন একটি বইয়ের দামই ৫-৬ লাখ টাকা। একটি বই কিনতে যদি ৫-৬ লাখ টাকা লাগে, তাহলে সকল ডিপার্টমেন্টের বই কেমনে কেনা সম্ভব!

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, আজকেই মাননীয় উপাচার্যের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে লাইব্রেরী সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন। লাইব্রেরীর যেই প্রশাসক আছেন, আমরা তার সাথে বসে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং কোনো ধরনের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখব। লেখাপড়ার জন্য শব্দহীন, সুষ্ঠু একটি পরিবেশ দরকার। কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি নিজেদের মধ্যে গল্প গুজব করে, তাহলে বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।

জনপ্রিয় সংবাদ

এপ্রিলের ২৬ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার

এক বই-এর দাম ৫-৬ লক্ষ টাকা

টাকার অভাবে বই পাচ্ছে না রাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রয়েছে নানা অভিযোগ

আপডেট সময় ০৭:২১:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

পুরোনো দিনের বই, কর্মকর্তাদের উচ্চশব্দে গল্পগুজব, বিকট শব্দের টেবিল ফ্যান ব্যবহার সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এসব সমস্যা নিয়ে বহুদিন যাবৎ অভিযোগ করে আসলেও মিলছে না কোনো ধরণের সমাধান। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক বই পুরোনো হয়ে ছেঁড়া-ফাটা হয়ে গেছে, রয়েছে ফ্যানের সংকট, এসির ব্যবস্থা নেই, বিকট শব্দের ফ্যান, কিছু বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা নেই, নতুন বইয়ের সংখ্যা কম, আলোর স্বল্পতা, ক্যারিয়ার ও চাকরি সংক্রান্ত বই কম, কাঙ্ক্ষিত বই পেতে অধিক সময় নষ্ট, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী যথা সংখ্যক বই নেই, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত লাইব্রেরি বন্ধ থাকে, বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটেরের ব্যবস্থা নেই এবং কর্মকর্তারা উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলেন।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈমা জান্নাত বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিঠ। এখানে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও পড়ার পরিবেশ খুব একটা ভালো না। বিশেষ করে এই গ্রীষ্মকালেতো একেবারেই নাই। না আছে কোনো এসির ব্যবস্থা, না আছে ভালো কোনো ফ্যান। লাইব্রেরিতে এসির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অল্প যেই ফ্যানগুলো আছে, সেগুলোতে আবার বিকট শব্দ হয়। পড়তে বসলে এ আওয়াজটা মাথায় ধরে। পড়াশোনায় মনোযোগ আসে না। সপ্তাহে ৫ দিনই আমাদের ক্লাস থাকে। শনিবার লাইব্রেরি খোলা থাকলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। শুক্রবারে ফ্রি থাকলেও সকালে লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। আমার মনে হয় শুক্রবার সকালেও লাইব্রেরি খোলা রাখা উচিত।

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হীরা বলেন, লাইব্রেরিতে সাইন্সের বই খুবই কম। আমরা আপডেট কোনো বই পাই না। যার ফলে লাইব্রেরিতে ভালো কোনো বই পড়তে পারি না। আর ফ্যানের অতিরিক্ত আওয়াজ তো আছেই। আমি মনে করি প্রশাসন এ বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

রায়হান কবির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ঐদিন একটা উপন্যাস পড়ছিলাম কিন্তু হঠাৎ মাঝে দেখি কিছু পৃষ্ঠা নাই। আর অধিকাংশ বই ছেঁড়া। প্রশাসন যদি নতুন কিছু বই যুক্ত করতো, তাহলে খুব ভালো হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলামকে ফ্যানের বিকট আওয়াজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সেন্ট্রাল এসিটা ১৪-১৫ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে আছে। ১৪-১৫ বছর ধরে যারা প্রশাসক ছিলেন তারা কেউ কিছু করেনি। আমরা এসে খুব দ্রুত কাজ শুরু করি। এক মাসের ভিতরেই এসি টেন্ডারে চলে যাবে। আশা করছি এই গ্রীষ্মেই এসিটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা হলে গরমের সমস্যাটাও সমাধান হয়ে যাবে।

আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উচ্চ-আওয়াজে কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক বার তাদের ওয়ার্নিং দিয়েছি। এমনকি তাদেরকে শোকজ করার মতো বলেছি।

বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটের ব্যবস্থা নেই। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা এসব অভিযোগ করতেই পারে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে অটোমেটিক জেনারেটর যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিনে দেয় তাহলেই হবে। কিন্তু কথা হল বিশ্ববিদ্যালয় কি আসলেই ততটুকু বাজেট পায়? আমি জানি না। সবকিছুই আসলে বাজেটের উপর নির্ভরশীল। অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট। নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। আশা করি সরকার এখন বাজেট বেশি দিবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে।

বইয়ের পৃষ্ঠা উধাও ও বই কম বিষয়ে তিনি বলেন, বইয়ের পৃষ্ঠা কি আসলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছেড়ে? শিক্ষার্থীরাই বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে আবার তারাই অভিযোগ করে! সারা বছরে মাত্র ২০ লক্ষ টাকার বই কেনা হয়। সাইন্স ফ্যাকাল্টির কোন কোন একটি বইয়ের দামই ৫-৬ লাখ টাকা। একটি বই কিনতে যদি ৫-৬ লাখ টাকা লাগে, তাহলে সকল ডিপার্টমেন্টের বই কেমনে কেনা সম্ভব!

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, আজকেই মাননীয় উপাচার্যের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে লাইব্রেরী সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন। লাইব্রেরীর যেই প্রশাসক আছেন, আমরা তার সাথে বসে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং কোনো ধরনের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখব। লেখাপড়ার জন্য শব্দহীন, সুষ্ঠু একটি পরিবেশ দরকার। কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি নিজেদের মধ্যে গল্প গুজব করে, তাহলে বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।