শীতের শুরুতেই ভয়াবহ বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাব। পরিস্থিতি এতোটাই নাজুক যে, বায়ুদূষণের কারণে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরসহ উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কিছু শহরে স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি এক দিনের জায়গায় বাড়িয়ে করা হয়েছে চারদিন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দশনা বহাল থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের দ্বিতীয়-জনবহুল শহর লাহোর এবং পার্শ্ববর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্য জেলাগুলোতে মঙ্গলবার ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট ভারী ধোঁয়াশার কারণে সপ্তাহে চারদিন ছুটিও ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশের অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, এখন থেকে অফিস, স্কুল, কলেজ, সিনেমা, পার্ক এবং অন্যান্য পাবলিক প্লেস রোববার ছাড়াও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং শনিবারও বন্ধ থাকবে।
তবে বাজার ও দোকানপাট বন্ধ থাকবে শনিবার ও রোববার। মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, ‘ক্রমবর্ধমান ধোঁয়াশার কারণে চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত লাহোর, গুজরানওয়ালা, হাফিজাবাদ এবং নানকানা সাহিব জেলায় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, প্রশাসন ইতোমধ্যেই উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে এবং ফসল পোড়ানো ও বাতাসে ধোঁয়াশা সৃষ্টিকারী অন্যান্য কারণগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আনাদোলু বলছে, লাহোর শহরটি পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী এবং এখানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস করেন। বিষাক্ত ধোঁয়ার স্তরে আচ্ছন্ন এই শহরটি বর্তমানে নয়াদিল্লি এবং ঢাকার পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর মধ্যে একটি।
অবশ্য লাহোরের এই বায়ুদূষণের জন্য নাকভি প্রতিবেশী ভারত থেকে বাতাসে ভেসে আসা ধূলিকণা ও দূষিত নানা বস্তুকে দায়ী করেছেন। মূলত ভারতীয় পাঞ্জাবের ধান চাষীদের খড় ও বিচুলি পোড়ানোর কারণে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বাতাসে মিশে তা দূষিত করে ফেলে এবং সেই বাতাস একদিকে দিল্লি ও অন্যদিকে লাহোরকেও সমস্যার মধ্যে ফেলছে।প্রসঙ্গত, প্রতি বছর অক্টোবরের শেষের দিক থেকে বায়ুদূষণ শুরু হয় ভারতের রাজধানী দিল্লিতেও। এই দূষণের প্রধান কারণ দিল্লির দুই সীমান্তবর্তী রাজ্য উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার গ্রামগুলোতে বিপুল পরিমাণ খড়-বিচুলি পোড়ানো।
শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এসব গ্রামের দরিদ্র মানুষ খড়-বিচুলি পোড়ান, কিন্তু সেই আগুনের ফলে সৃষ্ট ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বাতাসে ভেসে দিল্লির বায়ুতে মিশে যায়। আর এটাই পার্শ্ববর্তী লাহোর ও পাকিস্তানি পাঞ্জাবের অন্যান্য স্থানে বায়ুদূষণের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
লাহোরের স্থানীয় আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, ধোঁয়া এবং অন্যান্য দূষণকারী বস্তু বাতাসের মাধ্যমে ভারতীয় পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে লাহোরে প্রবেশ করে থাকে। মূলত জলন্ধরের কৃষকরা প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে বপনের মৌসুমে তাদের ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলেন।
এদিকে ধোঁয়াশা এবং বায়ুদূষণের কারণে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে শত শত লোকের গলা ব্যথা এবং চোখে চুলকানি দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা জনসাধারণকে বেশি বেশি পানিসহ আরও তরল পান করার এবং শ্বাসকষ্ট এড়াতে বাড়ির ভেতরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।