সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) বর্বরতা চলছেই, এবার পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (৮ মার্চ) ভোরের দিকে নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পঞ্চগড় উপজেলা সদরের অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় এলাকায় মেইন পিলার ৭৪৪ এর ৭ নং সাব পিলারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আল আমিন একই উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাত পাড়ার সুরুজ আলীর ছেলে।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে আল আমিনসহ কয়েকজন যুবক ভারতীয় ওই সীমান্তে গরু আনতে যান। এসময় তারা ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে ভারতের ৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ভাটপাড়া ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা গুলি করে। সকালে প্রায় ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে আবালুপাড়া এলাকায় মরদেহ পরে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা জানান, মরদেহ হস্তান্তরের জন্য বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ ও ‘চোরাকারবারি’র অভিযোগে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুলি করে, ধাওয়া দিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করে বিএসএফ। গত ১দশকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী শুধু গুলি করে মেরেছে ২৮৯ বাংলাদেশিকে। ভারতের সঙ্গে পাঁচটি দেশের সীমান্ত আছে ৷ কিন্তু সীমান্ত হত্যার ঘটনা শুধুমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই ঘটে ৷
গত ১ দশকের বার্ষিক সীমান্ত সংঘাতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো ঘেঁটে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী এই সময়ে (২০১৪-২৪) বাংলাদেশের সীমান্তগুলোয় শুধু বিএসএফের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছে ২৮৯ বাংলাদেশি।
সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে এর একমাত্র ও অদ্বিতীয় উদাহরণ হলো আমেরিকা মহাদেশে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর সীমান্ত। বাংলাদেশ-ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে এমন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় না।
আসকের পর্যবেক্ষণে আরও উঠে এসেছে বিগত ১১ বছরে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে ধান কাটা, গরু চরানো, মাছ মারা ও গৃহস্থালির কাজ করা অবস্থায় ৩১৯ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরে নিয়ে যাওয়া এই নাগরিকদের ভাগ্যে কী ঘটে, তা জানা যায় না। ধরে নিয়ে যাওয়া এই নাগরিকদের কতজন ফিরে আসেন, সেটাও থেকে যায় অজানা।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে গতকাল শুক্রবার ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘সীমান্ত নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের বক্তব্য, পাকিস্তান সীমান্তে ভারত সবচেয়ে বেশি সীমান্তরক্ষী মোতায়েন রাখে। কিন্তু সেই সীমান্তেও হত্যার এত নজির নেই ৷ এই ঘটনা কেবলমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই ঘটে ৷ কারণ, বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ‘ট্রিগার হ্যাপি’।’’