ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল নেতার ক্লাব থেকে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার Logo পারভেজ হত্যার প্রধান আসামি গাইবান্ধা থেকে গ্রেফতার Logo ভারত তোষণ আর সহ্য করা হবে না, আধিপত্যবাদের টুঁটি চেপে ধরুন: মামুনুল হক Logo শিগগিরই নতুন দল নিয়ে রাজনীতিতে আসছেন ইলিয়াস কাঞ্চন Logo সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দিনাজপুরে ছাত্রশিবিরের সমাবেশ Logo আমিরে জামায়াতের আগমন উপলক্ষে মুক্তাগাছায় জামায়াতের বিশাল শোডাউন Logo বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে গড়তে চাই: বেরোবি উপাচার্য Logo ঝিনাইদহে ট্রাকচাপায় একজন নিহত Logo ৫ আগস্ট আটকা পড়েছিলেন পলক, উদ্ধার করে সেনাবাহিনী Logo সামান্য বৃষ্টিতেই প্রায় হাঁটুপানি! নোয়াখালী সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ

জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে যাওয়ায় ইমামকে চাকুরিচ্যুত করলেন সাদপন্থী সভাপতি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা শাখার কর্মী ও সূধী সমাবেশে যাওয়ায় একই জেলার লামা উপজেলার ৪ নম্বর আজিজনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সলেমান বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে চাকুরিচ্যুত করেছেন উক্ত মসজিদের সভাপতি তাবলীগের বিতর্কিত সাদপন্থী গ্রুপের কট্টরনেতা মোহাম্মদ হোসাইন।

চাকুরিচ্যুত ইমাম ও খতীবের নাম মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস আলী। জন্ম পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯৮৪। তিনি একই এলাকার চাম্বি মৌজার চিওনি পাড়ার শামসুর রহমান ও সালেহা বেগমের পুত্র।

তিনি কওমী মাদরাসায় কাফিয়া পর্যন্ত পড়ে আলীয়ায় ভর্তি হয়ে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদরাসা হতে কামিল (স্নাতকোত্তর) পাশ করেন।

তিন সন্তানের জনক মাওলানা ইউনুস আলীর বড় ছেলে হিফজ সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি মাদরাসায় দাখিলে, মেয়ে অষ্টমে এবং ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

চাকুরিচ্যুত ইমাম ও খতীব মাওলানা ইউনুস আলী বলেন, “আমি বিগত ১৩ বছর ধরে এই মসজিদে খেদমত করছি। সকালে ফোরকানিয়ায় শিশুদের পড়াই, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াই, জুমাবারে খতীব হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করি। মসজিদ কমিটি হতে আমাকে মাত্র দুই হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হয়। আমি আবেদন করে ইসলামিক মিশন হতে পাশ করিয়েছি সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আমি হিল ভিডিপির সদস্য। সেই বাবদ পাই দুই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা সম্মানী পাই। খানা, থাকা সব আমার। একজন মুয়াজ্জিন আছেন। ওনাকে দেয়া হয় দুই হাজার টাকা। ওনিও নিজের বাড়িতে খান। এত কষ্টের পরও, এত অল্প সম্মানীর পরও শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর একটা দ্বীনি আয়োজনে যোগদানের কারণে আমাকে আওয়ামী স্টাইলে চাকুরিচ্যুত করা হলো।”

তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “গত ১৯/৪/২০২৫ তারিখ শনিবার আমি বান্দরবান রাজার মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও সুধী সমাবেশে যোগদান করি। তখন মসজিদ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে বলেন, আপনি কোথায়? আমি বলি, সমাবেশে আছি। তখন তিনি বলেন, রাজনীতি আর সমাবেশ নিয়ে থাকেন। আমাদের মসজিদে আর নামাজ পড়াবেন না। পরের দিন ফজরের নামাজ পড়ালাম, ফোরকানিয়ার শিক্ষার্থীদের পড়ালাম। জোহরের নামাজ পড়িয়ে বের হলে আমার পথ আটকে জনাব নজরুল ইসলাম বলেন, আপনাকেতো নামাজ পড়াতে নিষেধ করেছি। কেন পড়ালেন? তখন আমি বলি, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম আছে। নিয়ম অনুযায়ী আপনি আমাকে নোটিশ করেন। তখন তিনি বলেন, নোটিশ রেডি হচ্ছে। আপনি নামাজ পড়াবেন না। সভাপতি মেহাম্মদ হোসাইন সাহেব এশার সময় আমাকে নিষেধ করে দেন।”

এ বিষয়ে জানতে সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন সাহেবের 018**8506 নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল করলেও রিছিভ করা হয়নি।

কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, “ইউনুস হুজুর আমাদের মসজিদে ১৬ বছর যাবত ইমামতি করতেছেন (ওনার কথা)। ওনার কার্যকলাপ ভাল না হওয়ায় কমিটি ওনাকে বিদায় করেছে।”
১৬ বছর ভাল ছিল। জামায়াতের সমাবেশে যাওয়ার কারণে কেন কার্যকলাপ খারাপ লাগল? পরদিন কেন চাকুরিচ্যুত করা হল? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমীর এস এম আব্দুচ্ছালাম আজাদ বলেন, “জামায়াতের সমাবেশে আসার কারণে একজন সম্মানিত ইমাম ও খতীবকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টা তেমন হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক ও চরম নিন্দনীয়। এটা ফ্যাসিবাদী আচরণ। এ বিষয়ে ওলামা পরিষদ, ইমাম-খতীব এবং সাংবাদিক সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদল নেতার ক্লাব থেকে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে যাওয়ায় ইমামকে চাকুরিচ্যুত করলেন সাদপন্থী সভাপতি

আপডেট সময় ১২:১২:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা শাখার কর্মী ও সূধী সমাবেশে যাওয়ায় একই জেলার লামা উপজেলার ৪ নম্বর আজিজনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সলেমান বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে চাকুরিচ্যুত করেছেন উক্ত মসজিদের সভাপতি তাবলীগের বিতর্কিত সাদপন্থী গ্রুপের কট্টরনেতা মোহাম্মদ হোসাইন।

চাকুরিচ্যুত ইমাম ও খতীবের নাম মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস আলী। জন্ম পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯৮৪। তিনি একই এলাকার চাম্বি মৌজার চিওনি পাড়ার শামসুর রহমান ও সালেহা বেগমের পুত্র।

তিনি কওমী মাদরাসায় কাফিয়া পর্যন্ত পড়ে আলীয়ায় ভর্তি হয়ে ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদরাসা হতে কামিল (স্নাতকোত্তর) পাশ করেন।

তিন সন্তানের জনক মাওলানা ইউনুস আলীর বড় ছেলে হিফজ সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি মাদরাসায় দাখিলে, মেয়ে অষ্টমে এবং ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

চাকুরিচ্যুত ইমাম ও খতীব মাওলানা ইউনুস আলী বলেন, “আমি বিগত ১৩ বছর ধরে এই মসজিদে খেদমত করছি। সকালে ফোরকানিয়ায় শিশুদের পড়াই, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াই, জুমাবারে খতীব হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করি। মসজিদ কমিটি হতে আমাকে মাত্র দুই হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হয়। আমি আবেদন করে ইসলামিক মিশন হতে পাশ করিয়েছি সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আমি হিল ভিডিপির সদস্য। সেই বাবদ পাই দুই হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে সাড়ে আট হাজার টাকা সম্মানী পাই। খানা, থাকা সব আমার। একজন মুয়াজ্জিন আছেন। ওনাকে দেয়া হয় দুই হাজার টাকা। ওনিও নিজের বাড়িতে খান। এত কষ্টের পরও, এত অল্প সম্মানীর পরও শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামীর একটা দ্বীনি আয়োজনে যোগদানের কারণে আমাকে আওয়ামী স্টাইলে চাকুরিচ্যুত করা হলো।”

তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “গত ১৯/৪/২০২৫ তারিখ শনিবার আমি বান্দরবান রাজার মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ও সুধী সমাবেশে যোগদান করি। তখন মসজিদ কমিটির সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আমাকে ফোন করে বলেন, আপনি কোথায়? আমি বলি, সমাবেশে আছি। তখন তিনি বলেন, রাজনীতি আর সমাবেশ নিয়ে থাকেন। আমাদের মসজিদে আর নামাজ পড়াবেন না। পরের দিন ফজরের নামাজ পড়ালাম, ফোরকানিয়ার শিক্ষার্থীদের পড়ালাম। জোহরের নামাজ পড়িয়ে বের হলে আমার পথ আটকে জনাব নজরুল ইসলাম বলেন, আপনাকেতো নামাজ পড়াতে নিষেধ করেছি। কেন পড়ালেন? তখন আমি বলি, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম আছে। নিয়ম অনুযায়ী আপনি আমাকে নোটিশ করেন। তখন তিনি বলেন, নোটিশ রেডি হচ্ছে। আপনি নামাজ পড়াবেন না। সভাপতি মেহাম্মদ হোসাইন সাহেব এশার সময় আমাকে নিষেধ করে দেন।”

এ বিষয়ে জানতে সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন সাহেবের 018**8506 নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল করলেও রিছিভ করা হয়নি।

কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, “ইউনুস হুজুর আমাদের মসজিদে ১৬ বছর যাবত ইমামতি করতেছেন (ওনার কথা)। ওনার কার্যকলাপ ভাল না হওয়ায় কমিটি ওনাকে বিদায় করেছে।”
১৬ বছর ভাল ছিল। জামায়াতের সমাবেশে যাওয়ার কারণে কেন কার্যকলাপ খারাপ লাগল? পরদিন কেন চাকুরিচ্যুত করা হল? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমীর এস এম আব্দুচ্ছালাম আজাদ বলেন, “জামায়াতের সমাবেশে আসার কারণে একজন সম্মানিত ইমাম ও খতীবকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টা তেমন হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক ও চরম নিন্দনীয়। এটা ফ্যাসিবাদী আচরণ। এ বিষয়ে ওলামা পরিষদ, ইমাম-খতীব এবং সাংবাদিক সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।