ঢাকা ০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

লাশ দাফনের কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন মিল্টন সমাদ্দার

লাশ দাফনের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, জালিয়াতি করে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি ও মানব পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার তদন্ত রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত বছরের ২ মে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো জনপ্রিয় গণমাধ্যম দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদনে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অনেক অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে ডিবির তদন্তে।

ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন যানা যায়, ডাক্তার না হয়েও নিজেই ছুরি-ব্লেড দিয়ে আশ্রমের অসুস্থদের কাটাছেঁড়া করেন মিল্টন। প্রয়োজনে নিজেই হাত-পা কেটে ফেলেন। ফেসবুকে ৯০০ জনের লাশ দাফন করেছেন স্ট্যাটাস দিলেও বাস্তবে দাফন করেছেন ১৫০ জনের লাশ। এ ছাড়া নিজে স্বাক্ষর দিয়ে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটও তৈরি করেন মিল্টন সমাদ্দার। এমন সব অপরাধ আড়াল করে নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা সাজিয়ে মিল্টন ফেসবুকে তার ১ কোটি ৬০ লাখ ফলোয়ারের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা আয় করেন। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৩ টাকা।

আশ্রমের মানুষজনকে নির্যাতন করার বিষয়টিও উঠে এসেছে ডিবির তদন্তে। মতিউর রহমান মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার হেলথ কেয়ারের ম্যানেজার কিশোর বালাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মানব পাচারের মামলাতেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে ফেসবুকে ফের মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মিল্টন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করে অনুদান চাইতেও দেখা যায় তাকে।

ডিবির তদন্তে বলা হয়েছে, মিল্টন সমাদ্দার ও তার সহযোগীরা পচন, ক্ষত, প্যারালাইজড, অসুস্থ বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভিডিও, ছবি বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করে মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান নিয়ে আর্থিক লাভবান হন। ফেসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মিল্টন সমাদ্দার কোটি টাকা অনুদান নিলেও আশ্রমের অনাথ মানুষের চিকিৎসার জন্য কোনো টাকাই খরচ করেন না।

মিল্টন সমাদ্দার ৯০০ লাশ দাফন করেছেন বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু বাস্তবে ১৫০ জন লাশ দাফন করেছেন বলে আসামি নিজেই জানান। বেশি লাশ দাফনের কথা বললে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়, এজন্য সে মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে আপলোড করে মানুষকে প্রতারিত করেছেন। তারা অপরাধমূলকভাবে জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে সেই মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য টাকা উঠাতেন। এ ছাড়া এক এনআইডি ব্যবহার করে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে একাধিক লাশ দাফন করেছিলেন বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।

ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামি মিল্টন ও ম্যানেজার কিশোর বালার বিরুদ্ধে প্রতারণা করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২০ ধারা, ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করায় ৪৬৭ ধারা, ভুয়া জাল স্বাক্ষর করে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটে তৈরিতে ৪৬৮ ধারা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অপরাধে ৪৭১ ধারায় অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

মিরপুর মডেল থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। আগামী ২০ মার্চ চার্জশিটগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

খুনি হাসিনার ফাঁসি না হওয়া র্পযন্ত কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে’

লাশ দাফনের কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন মিল্টন সমাদ্দার

আপডেট সময় ১১:২২:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

লাশ দাফনের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, জালিয়াতি করে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি ও মানব পাচারের অভিযোগে হওয়া মামলার তদন্ত রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত বছরের ২ মে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলো জনপ্রিয় গণমাধ্যম দৈনিক কালবেলা। সেই প্রতিবেদনে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আসা অনেক অভিযোগেরই সত্যতা মিলেছে ডিবির তদন্তে।

ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন যানা যায়, ডাক্তার না হয়েও নিজেই ছুরি-ব্লেড দিয়ে আশ্রমের অসুস্থদের কাটাছেঁড়া করেন মিল্টন। প্রয়োজনে নিজেই হাত-পা কেটে ফেলেন। ফেসবুকে ৯০০ জনের লাশ দাফন করেছেন স্ট্যাটাস দিলেও বাস্তবে দাফন করেছেন ১৫০ জনের লাশ। এ ছাড়া নিজে স্বাক্ষর দিয়ে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটও তৈরি করেন মিল্টন সমাদ্দার। এমন সব অপরাধ আড়াল করে নিজেকে মানবতার ফেরিওয়ালা সাজিয়ে মিল্টন ফেসবুকে তার ১ কোটি ৬০ লাখ ফলোয়ারের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা আয় করেন। তার ১৪টি ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৩ টাকা।

আশ্রমের মানুষজনকে নির্যাতন করার বিষয়টিও উঠে এসেছে ডিবির তদন্তে। মতিউর রহমান মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী মিঠু হালদারকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া জালিয়াতির মাধ্যমে ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির মামলায় মিল্টন সমাদ্দার ও তার হেলথ কেয়ারের ম্যানেজার কিশোর বালাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া মানব পাচারের মামলাতেও চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় জামিনে কারামুক্ত হয়ে ফেসবুকে ফের মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মিল্টন। নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করে অনুদান চাইতেও দেখা যায় তাকে।

ডিবির তদন্তে বলা হয়েছে, মিল্টন সমাদ্দার ও তার সহযোগীরা পচন, ক্ষত, প্যারালাইজড, অসুস্থ বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভিডিও, ছবি বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করে মানবতার ফেরিওয়ালা সেজে বিভিন্ন অঙ্কের অনুদান নিয়ে আর্থিক লাভবান হন। ফেসবুকে তার ফলোয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মিল্টন সমাদ্দার কোটি টাকা অনুদান নিলেও আশ্রমের অনাথ মানুষের চিকিৎসার জন্য কোনো টাকাই খরচ করেন না।

মিল্টন সমাদ্দার ৯০০ লাশ দাফন করেছেন বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। কিন্তু বাস্তবে ১৫০ জন লাশ দাফন করেছেন বলে আসামি নিজেই জানান। বেশি লাশ দাফনের কথা বললে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়, এজন্য সে মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে আপলোড করে মানুষকে প্রতারিত করেছেন। তারা অপরাধমূলকভাবে জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে সেই মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য টাকা উঠাতেন। এ ছাড়া এক এনআইডি ব্যবহার করে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে একাধিক লাশ দাফন করেছিলেন বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।

ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট তৈরির মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামি মিল্টন ও ম্যানেজার কিশোর বালার বিরুদ্ধে প্রতারণা করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২০ ধারা, ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করায় ৪৬৭ ধারা, ভুয়া জাল স্বাক্ষর করে ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেটে তৈরিতে ৪৬৮ ধারা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অপরাধে ৪৭১ ধারায় অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

মিরপুর মডেল থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। আগামী ২০ মার্চ চার্জশিটগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে।