ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মান্না। অসংখ্য ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এক সময়ের এই ঢালিউড কিং। জীবদ্দশায় অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়ে ‘গণমানুষের প্রিয়নায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন মান্না। তার মৃত্যু শোক আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজন ও কোটি ভক্তরা। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মান্নাকে স্মরণ করছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা।
‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সিনেমার জগতে যাত্রা শুরু করেছিলেন প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না। একই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খল অভিনেতা হিসেবে বড় পর্দায় পা রাখেন মিশা সওদাগর। নায়ক মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন বেশ কিছু সিনেমায়। এই নায়কের প্রয়াণ দিবসে মিশা সওদাগর বলেন, “আমার দৃষ্টিতে মান্না মহানায়ক। আর মহানায়ক বলার কারণ এই যে, আমাদের চলচ্চিত্রের অনেকের পক্ষে অনেক কিছু করাই সম্ভব হয়নি, যা মান্নার পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে। ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ থেকে মান্না দুই নাম্বার হিরো, দুই নাম্বার হিরো থেকে নিজেকে চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়কে পরিণত করেছিলেন।”
মৌসুমী-শাবনূরকে এক সিনেমায় কাস্ট করেছিলেন মান্না, যা তার আগে কেউ পারেননি। এ তথ্য উল্লেখ করে মান্না বলেন, মান্না যখন নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন, প্রথম সিনেমাতেই পরিচালক কাজী হায়াতকে নেন। তা ছাড়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সেটি হলো, মৌসুমী আর শাবনূরকে কেউ এক সিনেমায় নিতে পারেননি। কিন্তু সেই কাজটি করে দেখিয়ে ছিলেন নায়ক মান্না। ‘দুই বধূ এক স্বামী’ সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন মৌসুমী-শাবনূর। ফলে দুই নায়িকার দর্শকই সিনেমাটি দেখেছেন। সিনেমাটি হিট হয়েছে। চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক বেশি চর্চা করতেন তিনি। চলচ্চিত্র নিয়ে মান্না যেই কথাগুলো বলতেন অনেক চিন্তাভাবনা করে বলতেন।
চলচ্চিত্রে পাইরেসি ও অশ্লীলতা বন্ধে মান্নার ভূমিকা উল্লেখ করে মিশা সওদাগর বলেন, “সিনেমা পাইরেসি বন্ধে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করেছে। কোথাও পাইরেসি হচ্ছে এমন খবর শুনে দেয়াল টপকিয়ে জীবন বাজি রেখে সেখানে গিয়ে তা প্রতিহত করেছেন। পরে পাইরেসির সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। এ ছাড়া অশ্লীল সিনেমা বন্ধে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন। বলতে গেলে, এখন তার সেই যুদ্ধের ফল ভোগ করছে। এটা শতভাগ সত্য যে, তিনি পাইরেসি ও অশ্লীলতা বন্ধে একেবারে শীর্ষে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। চলচ্চিত্রের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে মান্না একা দাঁড়িয়ে গেছেন।”
মান্না তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মান্না অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো— ‘দাঙ্গা’, ‘লুটতরাজ’, ‘তেজি’, ‘আম্মাজান’, ‘আব্বাজান’, ‘বীর সৈনিক’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘খল নায়ক’, ‘রংবাজ বাদশা’, ‘সুলতান’, ‘ভাইয়া’, ‘টপ সম্রাট’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘মাস্তানের ওপর মাস্তান’ ‘মান্না ভাই’, ‘জুম্মন কসাই’, ‘আমি জেল থেকে বলছি’, ‘কাবুলিওয়ালা’ ইত্যাদি।