ঢাকা ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতেও ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক প্রতিবেদনে ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এইচআরডব্লিউ। তাদের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বিপরীত আচরণ দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ডয়চে ভেলে। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরাও মনে করেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন একটি বাহিনী থাকতে পারে না।

গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডাব্লিউ কিন্তু হঠাৎ ব়্যাব বিলুপ্তির কথা বলেনি। তারা অনেক দিন ধরে এই কথা বলছে। আমরা গুম-সংক্রান্ত কমিশন থেকেও এই কথা বলেছি। এই বাহিনীটি ইতিমধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা সভ্য দেশে কোনোভাবেই এই বাহিনী থাকতে পারে না।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে নজিরবিহীন মাত্রায় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অনুশীলন। বাহিনীটি দীর্ঘ সময় ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি উপভোগ করে আসছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি (সিএটি) বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছিল। পুলিশসহ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়মুক্তি ও জবাবদিহি না থাকার বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, প্রধান তার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও এই বাহিনীর যারা গুম, খুন বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। এলেইন পিয়ারসনও বিচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব ২০০৪ সালে বিএনপির শাসনামলে এলিট ফোর্স ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব) গঠন করা হয়। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এই বাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়।

দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব

ব়্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গুম, হত্যা বা ক্রসফায়ারের ঘটনার জন্য ব়্যাবের একটি আলাদা দল রয়েছে। বেশির ভাগ কাজই ওই দল করে। ব়্যাবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ২০১৬ সালে তিনি ব়্যাবে যোগ দিয়ে হতবাক হয়েছিলেন, কারণ, একজন প্রশিক্ষক প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন।

রাজনৈতিক নেতারা যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তখন ব়্যাবের বিলুপ্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার ব়্যাবের পাশাপাশি বাহিনীর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে ব়্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করে।

ব়্যাব প্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান ইতিমধ্যে ইউনিটের গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিটটি বিলুপ্তি করে দিতে চাইলে ব়্যাব তা মেনে নেবে। এমন প্রেক্ষাপটে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ এবং দাতা সরকারকে সুপারিশ করে বলেছে, ব়্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কেবল এই শর্তেই ব়্যাব বিলুপ্ত করা যাবে।

কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে এইচআরডাব্লিউর সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তার মতে, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, ব়্যাবকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ পর্যায়ে এসে ব়্যাবকে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, শুধু এইচআরডব্লিউ নয়, আমরাই চাই ব়্যাব বিলুপ্ত হোক। এই প্রক্রিয়াটি যত কঠিনই হোক না কেন, কাজটা করতে হবে। কারণ, এই বাহিনীটি এত বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে ফেরানো কঠিন। আধুনিক বাংলাদেশকে যদি একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়ে যেতে হয়, ব়্যাবের মতো একটি বাহিনী রেখে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এই বাহিনী থাকলে আবারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

তবে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ব়্যাব বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য একটি বিশেষায়িত বাহিনীর প্রয়োজন হয়, যা অনেক দেশেই আছে। যেকোনো ঘটনায় ওই বাহিনী দ্রুত কাজ করে। এর আগেও আমরা দেখেছি, এই বাহিনীর বিরুদ্ধে যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল, তেমনি অনেক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব়্যাবকে দ্রুত ভূমিকা নিতেও আমরা দেখেছি। শুধু ব়্যাব নয়, গোটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে মানবাধিকারের চর্চা থাকাটা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ও সংস্কারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গুম তদন্তে কমিশন, পুলিশের সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশনও গঠন করেছে সরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যেভাবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে তাদের সংস্কার করা কঠিন হবে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আপডেট সময় ০৯:২৮:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতেও ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এক প্রতিবেদনে ব়্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে এইচআরডব্লিউ। তাদের সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার মতো বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বিপরীত আচরণ দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ডয়চে ভেলে। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরাও মনে করেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন একটি বাহিনী থাকতে পারে না।

গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেছেন, মানবাধিকার সংগঠন এইচআরডাব্লিউ কিন্তু হঠাৎ ব়্যাব বিলুপ্তির কথা বলেনি। তারা অনেক দিন ধরে এই কথা বলছে। আমরা গুম-সংক্রান্ত কমিশন থেকেও এই কথা বলেছি। এই বাহিনীটি ইতিমধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কারণে খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা সভ্য দেশে কোনোভাবেই এই বাহিনী থাকতে পারে না।

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে নজিরবিহীন মাত্রায় দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত অনুশীলন। বাহিনীটি দীর্ঘ সময় ধরে দায়মুক্তির সংস্কৃতি উপভোগ করে আসছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি (সিএটি) বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করেছিল। পুলিশসহ বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়মুক্তি ও জবাবদিহি না থাকার বিষয়টিও প্রতিষ্ঠিত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, প্রধান তার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও এই বাহিনীর যারা গুম, খুন বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। এলেইন পিয়ারসনও বিচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব ২০০৪ সালে বিএনপির শাসনামলে এলিট ফোর্স ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব) গঠন করা হয়। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা এই বাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়।

দায়মুক্তি পেয়েই বেপরোয়া ব়্যাব

ব়্যাবের এক কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গুম, হত্যা বা ক্রসফায়ারের ঘটনার জন্য ব়্যাবের একটি আলাদা দল রয়েছে। বেশির ভাগ কাজই ওই দল করে। ব়্যাবে নিজের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, ২০১৬ সালে তিনি ব়্যাবে যোগ দিয়ে হতবাক হয়েছিলেন, কারণ, একজন প্রশিক্ষক প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে তিনি ১৬৯টি ক্রসফায়ার পরিচালনা করেছেন।

রাজনৈতিক নেতারা যখনই ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তখন ব়্যাবের বিলুপ্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন সরকার ব়্যাবের পাশাপাশি বাহিনীর সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাদের প্রতিবেদনে ব়্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশ করে।

ব়্যাব প্রধান এ কে এম শহীদুর রহমান ইতিমধ্যে ইউনিটের গোপন আটক কেন্দ্রের কথা স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইউনিটটি বিলুপ্তি করে দিতে চাইলে ব়্যাব তা মেনে নেবে। এমন প্রেক্ষাপটে এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘ এবং দাতা সরকারকে সুপারিশ করে বলেছে, ব়্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে কেবল এই শর্তেই ব়্যাব বিলুপ্ত করা যাবে।

কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে এইচআরডাব্লিউর সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন করতে হবে। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। তাদের পদোন্নতি থেকে শুরু করে নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। তার মতে, যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, ব়্যাবকে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ পর্যায়ে এসে ব়্যাবকে সংস্কার করা সম্ভব নয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, শুধু এইচআরডব্লিউ নয়, আমরাই চাই ব়্যাব বিলুপ্ত হোক। এই প্রক্রিয়াটি যত কঠিনই হোক না কেন, কাজটা করতে হবে। কারণ, এই বাহিনীটি এত বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে ফেরানো কঠিন। আধুনিক বাংলাদেশকে যদি একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিয়ে যেতে হয়, ব়্যাবের মতো একটি বাহিনী রেখে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এই বাহিনী থাকলে আবারও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

তবে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ব়্যাব বিলুপ্ত হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের জন্য একটি বিশেষায়িত বাহিনীর প্রয়োজন হয়, যা অনেক দেশেই আছে। যেকোনো ঘটনায় ওই বাহিনী দ্রুত কাজ করে। এর আগেও আমরা দেখেছি, এই বাহিনীর বিরুদ্ধে যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল, তেমনি অনেক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে ব়্যাবকে দ্রুত ভূমিকা নিতেও আমরা দেখেছি। শুধু ব়্যাব নয়, গোটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে মানবাধিকারের চর্চা থাকাটা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ও সংস্কারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গুম তদন্তে কমিশন, পুলিশের সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশনও গঠন করেছে সরকার।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার নিয়ে এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যেভাবে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে তাদের সংস্কার করা কঠিন হবে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।